২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

‘দয়া করে নগদে খান, বাজার করতে পারি না’

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৮:২৯ অপরাহ্ণ, ০৫ অক্টোবর ২০২২

‘দয়া করে নগদে খান, বাজার করতে পারি না’

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের উপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ডাইনিং, ক্যাফেটেরিয়া এবং ঝুপড়িতে বাকি খেয়ে টাকা না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।

সম্প্রীতি এফ. রহমান হল ক্যাফেটেরিয়ার পরিচালক হেল্লাল উদ্দিন বকেয়ার ভার অসহনীয় হওয়ায় বাধ্য হয়ে টেবিলে লিখেন ‘দয়াকরে সকলে নগদে খান, আমি বাজার করতে পারি না’- এই লেখাটি ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই ক্যাফেটেরিয়াতেই প্রায় লক্ষাধিক টাকা বকেয়া রয়েছে শিক্ষার্থীদের। তাছাড়া আলাওল হলের ডাইনিংয়ে বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। সোহরাওয়ার্দী হলের ডাইনিংয়ে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় নব্বই হাজার টাকা। অন্যান্য ডাইনিংয়ের চিত্রও প্রায় একই।

হলের ডাইনিংয়ে একবেলা খাবারের দাম নেওয়া হয় ২৫ টাকা। এতে থাকে ভাত, ডাল, মাছ বা মাংস, ভর্তা বা সবজি। আবাসিক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এই সুবিধা ভোগ করে হলের বাইরে অবস্থানকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। তবে টাকা বকেয়া করেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। বকেয়া এবার সীমা ছাড়িয়েছে।

এ বিষয়ে মুখ খুলতেও ভয় পান ব্যবসায়ীরা। বকেয়া টাকা চাওয়া হলে অপ্রাসঙ্গিক অভিযোগ করাসহ হুমকি-ধমকি দিয়ে ধমিয়ে রাখেন। এছাড়া খাবারের দোকান, ক্যান্টিনগুলোও শিক্ষার্থীদের বাকির ভারে জর্জরিত।

ব্যবসায়ীদের দাবি, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাকি ও ফাও খাওয়ার ক্ষতি পোষাতে গিয়ে ইচ্ছা থাকলেও খাবারের মান উন্নত করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে বাকি না দিলে খাবারের মানের প্রশ্ন ভুলে যখন-তখন আন্দোলনও করে শিক্ষার্থীরা।

কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রাজনীতিতে সক্রিয় কর্মীরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাকি খেয়ে চলে যান। টাকা দেবে দেবে বলেও দেয় না। টাকা চাইলে বিভিন্ন উছিলায় হুমকি-ধমকি দিয়ে ধমিয়ে রাখেন।

সোহরাওয়ার্দী হলের ডাইনিং ম্যানেজার মো. মালেক ভূঁইয়া বলেন, সব মিলিয়ে প্রায় ৮০-৯০ হাজার টাকার মতো বাকি আছে। টাকা উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়ে আলাওল ডাইনিং পরিচালনা ছাড়তে হয় সাবেক ম্যানেজার মো. ইকবাল হোসেনকে।

তিনি বলেন, ২০১৬ সাল থেকে হলের ডাইনিং ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে আমার সংকট শুরু হয়। ছাত্রদের বাকি দিতে দিতে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা হয়েছে। টাকা তো দেয় না, বরং নানা ইস্যুতে হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে আমি পরিচালকের দায়িত্ব ছেড়েছি। তিনি বলেন, বাকিতে বাজার করে ডাইনিং চালিয়েছি দীর্ঘদিন।

বাকি বিক্রি করতে গিয়ে আমার অবস্থা খারাপ। ছাত্ররা বাকি খেয়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে টাকা দেয় না। দেড় হাজার থেকে শুরু করে ৮ হাজার পর্যন্ত নাকি আছে একেকজনের কাছে।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, হলের ডাইনিং, ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান তেমন ভালো না। এভাবে বাকি খেয়ে বকেয়া পরিশোধ না করলে খাবারের মান ভালো হওয়ার আশাও করা যাবে না। তাই আমাদের সবাইকেই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

আলাওল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরিদুল আলম বলেন, হলের ডাইনিংয়ে বাকির বিষয়টি শুনেছি। বাকি দেওয়ার সময় বিষয়টি তার দেখা দরকার ছিল। ম্যানেজার ইকবাল অফিসিয়ালি কিছু জানাননি।

জানালে কিছু করা যেত। শিক্ষার্থীদেরও সচেতন হওয়া উচিত। কয়েকজনের জন্য আমার তিনশ শিক্ষার্থী ঝামেলায় পড়ুক, এটা আমি চাই না। ম্যানেজাররা ডাইনিং চালিয়ে তো অনেক টাকা লাভ করেন না। ২৫ টাকায় এখন কী পাওয়া যায়- তারা তো বাড়ি থেকে এনে ডাইনিং চালাবেন না।

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন