২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

নদী ইজারা দিয়েছেন যুবলীগ নেতা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:৫৫ অপরাহ্ণ, ২০ অক্টোবর ২০১৯

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বাইশারাবাদ নদী অবৈধভাবে ইজারা দিয়েছেন উপজেলা যুবলীগ নেতা আজিজুল হাকিম। নদীটি ইজারা দেওয়ায় এলাকার শতাধিক মৎস্যজীবী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। তারা এ বিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়ে কোনো সুফল পাচ্ছেন না। অভিযোগ রয়েছে, যুবলীগের ওই নেতা খুলনা-৬ আসনের (পাইকগাছা-কয়রা) সাংসাদ আকতারুজ্জামান বাবুর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এ বিষয়ে কেউ কিছু বলছেন না।

এলাকাবাসী ও মৎস্যজীবীরা জানান, উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের বাইশা সুইচগেট থেকে গোড়ার বিল পর্যন্ত নদীর তিন কিলোমিটার অংশ ইজারা দিয়েছেন পাইকগাছা উপজেলার সোনাদানা ইউনিয়নের ভিলেজ পাইকগাছা গ্রামের আজিজুল হাকিম। তিনি উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির সদস্য। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তিনি গদাইপুর ইউনিয়নের কুরাইকাটি গ্রামের মৎস্যজীবী জিয়াদুল ইসলামের কাছে ১ লাখ ৫ হাজার টাকায় ইজারা দেন। ইজারার মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের এপ্রিলে। প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে তিনি নদী ইজারা দিয়েছেন। জিয়াদুল এই তিন কিলোমিটার এলাকা দখলে নিয়ে দুদিকে জালের বেড়া দিয়ে আটকে মাছ ধরছেন। নদী ইজারা দেওয়ায় ওই এলাকার শতাধিক মৎস্যজীবী বিপাকে পড়েছেন। তারা এখন আর এই নদীতে মাছ ধরতে পারছেন না। ফলে পরিবার নিয়ে তারা মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন।

১৫ অক্টোবর সরেজমিন দেখা গেছে, জিয়াদুল নদীর দুই দিকে জাল দিয়ে আটকে মাছ শিকার করছেন। এ জন্য তিনি নদীর ওপর একটি টংঘরও তৈরি করেছেন।

জানতে চাইলে জিয়াদুল বলেন, ‘এই নদী সরকার ইজারা দিয়েছে কি না জানি না। আমি এক বছরের জন্য লিজ নিয়েছি যুবলীগের আজিজের কাছ থেকে। এর জন্য ১ লাখ ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। তিনি এমপি সাহেবের খুব কাছের মানুষ। তাই বেশি কিছু জানতে চাইনি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মটবাড়িয়া গ্রামের এক মৎস্যজীবী বলেন, ‘নদীটি আমাদের চেয়ারম্যান (গদাইপুর ইউপির চেয়ারম্যান) সাহেব ইজারা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) আপা এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। কিন্তু আজিজুল কিছু টাকার জন্য দলের ক্ষমতা ব্যবহার করে এ কাজ করেছে।’

মঠবাড়িয়া গ্রামের আবুল বলেন, ‘নদীটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকার কথা। কারণ এই নদীতে মাছ ধরে এলাকার শতাধিক মৎস্যজীবী তাদের পরিবারের ভরণ-পোষণ চালায়। কয়েক পুরুষ ধরে তারা এভাবেই চলে আসছে। নদীটি ইজারা দেওয়ায় পরিবার নিয়ে তারা এখন পথে বসেছে। এ বিষয়ে আমরা এমপির কাছে আবেদন করেছি।’

গদাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জুনাইদুর রহমান বলেন, ‘সে অন্যায়ভাবে গায়ের জোরে ইজারা দিয়েছে। আমি হজে যাওয়ার আগে জাল উঠিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি আবার সেখানে জাল। শুধু আমি নই, ইউএনও ম্যাডামও কয়েকবার জাল উঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সে মানছে না।’

আজিজুল হাকিম বলেন, ‘নদীর দাগ নম্বরের কারণে এটা হয়েছে। দাগ নম্বর সংশোধনের জন্য চেষ্টা চলছে। আমি ইজারা দিইনি। তাহলে জিয়াদুলের সাথে লেখাপড়া থাকত।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুলিয়া সুকায়না বলেন, ‘নদী ইজারা দেওয়া হয়নি। আগে কয়েকবার উচ্ছেদ করা হয়েছে। আবার উচ্ছেদ করা হবে।’ সাংসাদ আকতারুজ্জামান বাবু বিদেশে থাকায় এ ব্যাপারে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন