২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

নলছিটির সেই দুই পুলিশ কর্মকতা দিশেহারা, আত্মরক্ষায় দৌড়ঝাপ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:২৮ অপরাহ্ণ, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: ঝালকাঠি জেলার নলছিটির পুলিশ তাদের সোর্সদের কারণে জড়িয়ে পরছে নানা অপর্কমে। সাম্প্রতিককালে উচ্চারিত বিভিন্ন মহলের এ অভিযোগ যে অমুলক নয়, তা ঘটনা চক্রে প্রমাণিত হয়েছে। এই নিয়ে জেলা পুলিশ কর্মকর্তারা বিব্রত বলে জানা গেছে। বিশেষ করে কলেজ ছাত্র দ্বিপ্ত কর্মকারকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ঘটনা নিয়ে যখন তোলপাড় ঠিক তৎমুহূতে একজন ব্যবসায়ীর বস্তা সমেত জাল আত্মসাৎ করার নেপথ্যে উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজিজুল বারী ও এটিএসআই শ্যামল চন্দ্র জড়িত থাকায় নলছিটি পুলিশের কর্মকান্ড নিয়ে রীতিমত বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, নারায়নগঞ্জ’র জাল ব্যবসায়ীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার অভিযোগ প্রত্যাহার করতে সক্ষম হলেও দিপ্ত কর্মকারের পরিবারকে সেই পুলিশ কর্মকর্তারা বাগে আনতে পরছে না। দিপ্তর মা নুপুর রানী কর্মকার ইতিমধ্যে পুত্রকে জোরপূর্বক ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ঘটনার প্রতিকার চেয়ে পুলিশ মহা-পরিদর্শকসহ বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজিকে লিখিত ভাবে অবহিত করায় জল বহুদূর গড়িয়েছে। এরই মাঝে জাল ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেনকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ কারেন্ট জাল আত্মসাৎ করেন। এবং বেশ অর্থ লুটে নেয়।

অভিযোগকারীর ভাষ্যমতে- গত ২৯ আগস্ট এই ঘটনার জন্ম দেয় পুলিশের সোর্স হিসাবে পরিচিত নলছিটির দুই যুবক। আওলাদ হোসেন জাল বিক্রির উদ্দেশে নলছিটি আসলে তার পণ্যের বৈধতার প্রশ্ন তুলে যুবকদ্বয় প্রায় এক লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা মূল্যের জাল দুই পুলিশ কর্মকর্তার নামে জব্দ করে অন্যত্র নিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি- স্থানীয় ব্যবসায়ী মনির হোসেন জাল ক্রয়ের সময় পুলিশের ওই সোর্স সেখানে উপস্থিত হয়ে গোটা কর্মকান্ডের ভূমিকা রাখে। পরে যুক্ত হয় নলছিটি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আজিজুল বারী ও এটিএসআই শ্যামল চন্দ্র। জব্দ করা সেই জাল থানায় জমা না দিয়ে তা বিক্রি করে দেয়। ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেনের দাবি তার আমদানি করা জালের বৈধ থাকা সত্বেও পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের সোর্স মাধ্যম তাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখায়। বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের নীপিড়ণের বর্ণনা দেন।

পুলিশের একটি সূত্র যানায়, পুলিশের সদর সার্কেল অফিসার মাহামুদ হোসেন এ ঘটনা অবহিত হওয়ার পরপরই তিনি দুই সোর্সকে ৩১ আগস্ট তার কার্যালয় ডেকে নেন। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলে উভয়কে উত্তম মাধ্যম দেয়। কিন্তু রহস্যজনক কারনে মাঠপর্যায়ের ওই দুই কর্মকর্তার বিষয় কোন রূপ পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

অপর একটি সূত্রের দাবি- পুলিশ কর্মকর্তারা আত্মরক্ষার তাগিদে জাল ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেনকে থানায় ডেকে নিয়ে পুনরায় চাপের মুখে ফেলে তার অভিযোগ প্রতাহারের বাধ্য করে। যে কারণে জেলা পুলিশ পর্যন্ত ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ পৌছাতে পারেনি। এরপরই পুলিশ কর্মকর্তাদ্বয় তাদের বিরুদ্ধে নুপুর রানীর অভিযোগ প্রত্যাহারে নানামুখি পদক্ষেপ নেয়। নুপুর রানী তার পুত্রের হয়রানির বিচারের দাবিতে অনড় থাকায় মামলার সাক্ষী আনোয়ার হোসেনকে বাগে আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। গত ১ সেপ্টেম্বর আনোয়ার হোসেনকে থানায় ডেকে পুলিশের পক্ষে অবস্থান নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আনোয়ার এ তথ্য স্বীকার করে বলেন- থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন তার মুখ থেকে ওই দিনের ঘটনার বর্ণনায় দিপ্তকে অহেতুক হয়রানির পিছনে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার অতি উৎসাহী ভুমিকা এবং তাদের র্সোস ফয়সাল আকনের সাজানো নাটক সম্পর্কে নিশ্চিত হন।

উল্লেখ্য দিপ্তর বিরুদ্ধে ২ পিস ইয়াবা মামলার পুলিশের দেওয়া সাক্ষীর তালিকায় থাকা আনোয়ার হোসেন স্বপ্রনোদিত হয়ে আদালতে উপস্থিত থেকে পুলিশের স্বেচ্ছাচারিতা এবং তাকে জোরপুর্বক সাক্ষী করার সমুদয় ঘটনা বিচারককে অবহিত করেন।

সূত্রমতে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার রুম থেকে বেরিয়ে আসার প্রাক্কালে আনোয়ার হোসেনের পথ আগলে ধরে এসআই আজিজুল বারী দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। উল্টো আসামীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আদালতে ঘটনা ফাঁস করে দেয়ার আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে। এসময় পুলিশের সোর্স ফয়সাল আকন সেখানে উপস্থিত ছিলো বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। যদিও মাঠ পুলিশের এই কর্মকর্তা এ তথ্য অস্বীকার করে ভিত্তিহীন বলে জানান। দীপ্তকে কেন আটক করা হলো? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে পুলিশের সোর্সদের আক্রোশের আরেকটি বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। দিপ্ত আটকের মাস কয়েক পূর্বে তার পিতাকে অনুরুপ ভাবে ইয়াবা দিয়ে আটকের ক্ষেত্রে নাটক সাজানো হয়। একজন মাদক ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলার প্রাক্কালে তাকে আটক করা হয়েছিল।

অভিযোগ রয়েছে, এক্ষেত্রে ভুমিকা রাখা উপজেলা ছাত্রদল সভাপতি পলাশ সজ্জন থানা থেকে তাকে মুক্ত করে আনার সন্ধিচুক্তিতে দেড় লাখ টাকা গৌরঙ্গ কর্মকারের পরিবারের কাছ থেকে নিয়ে তা নিজেই হজম করে ফেলেন। এঘটনায় পুলিশ বিতর্কিত হলেও গৌরঙ্গ কর্মকারকে আদালতে সোপর্দ করে। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি টাকা ফেরত চাইলে পলাশের সাথে দ্বন্দ্বের জের ধরে তার পুত্রকে অনুরুপ ভাবে আটক করা হয়।

পলাশ বিরোধী দলের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও থানা পুলিশের সাথে তার দহরম মহরম কম বেশি সর্বমহল অবহিত। তাকে পুলিশের সোর্স হিসেবেই এখন ভাবা হয়। এই যুবকের বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও বিক্রয় অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। গৌরঙ্গ কর্মকারের স্ত্রী নুপুর রানী কর্মকার তার পুত্রের প্রতি পুলিশি নীপিড়নের অভিযোগ তুলে প্রশাসনের উচ্চ মহলে ঘটনার স্ববিস্তার অবহিত করেন।

এ ঘটনা মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে একদিকে পুলিশ অন্য দিকে তাদের সোর্সরা আত্মরক্ষায় নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় নলছিটি হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের একাংশের নেতা মিলন কান্তি দাসের মাধ্যমে ছাত্রদল নেতা পলাশ সজ্জন এ ঘটনা চেপে যেতে গৌরঙ্গ কর্মকারকে ডেকে নিয়ে একদফা চাপের মুখে রেখেছে বলে জানা গেছে। রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি ও ঝালকাঠি জেলা পুলিশ সুপার এই ঘটনার তদন্তে স্বোচ্চার হওয়ায় থানা পুলিশ ও তাদের সোর্সরা এখন আত্মরক্ষায় এধরনের কৌশল নিয়েছে বলে অনুমান করা যায়।

সর্বশেষ জানা গেছে রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয় ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে তলব করা হয়েছে। পাশাপাশি ঝালকাঠি জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের থেকে নুপুর রানী কর্মকারের সাথে যোগাযোগ করে তার মৌখিক অভিযোগ তুলে ধরতে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।’

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন