১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

নারীদের মাধ্যমে ইলিশ পৌঁছে যাচ্ছে গ্রাহকদের হাতে

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:১৭ অপরাহ্ণ, ২৩ অক্টোবর ২০১৯

বার্তা পরিবেশক, পটুয়াখালী:: দেশে ইলিশের উৎপাদন ও বংশ বৃদ্ধির জন্য মা ইলিশ রক্ষায় চলতি মাসের ৮ তারিখ মধ্যরাত থেকে ৩০ তারিখ মধ্যরাত পর্যন্ত ২২ দিন দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরের সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। তা সত্ত্বেও প্রতিদিন স্থানীয় কিছু অসাধু রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় নদী ও বঙ্গোপসাগরে জেলেরা জাল ফেলছেন।

অভিযোগ রয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের জেলেরা বঙ্গোপসাগরে নির্দ্বিধায় ব্যাপক হারে ইলিশ শিকার করে নিয়ে যায়। ফলে তাদের জালে ধরা পড়ছে বিপুল পরিমাণ মা ইলিশ। সেই সঙ্গে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন উপায়ে স্থানীয় অসাধু জেলেরা ইলিশ শিকার করে তা স্বল্প মূল্যে বিক্রি করছে। তবে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর ও জেলা প্রশাসন সার্বিক চেষ্টা করছে।

পটুয়াখালীর গলাচিপার পানপট্টি এলাকার শফিক, মোশাররফ, হোসেনসহ একাধিক জেলে বলেন, ‘হাতে টাকা নেই, বাড়িতে বাজার নেই। সংসারে লোক পাঁচজন। তাই ঠেইক্কা চুরি করে মাছ ধরি’।

জেলে রফিক মৃধা বলেন, স্থানীয় মৎস্য অফিসে রাজনৈতিক নেতাদের লোক আছে। প্রশাসন অভিযানে নামলে তারা আমাদের খবর দেয়। এসব নেতার নাম জানতে চাইলে তিনি জানান, তাদের সবাই চেনে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলাপাড়ার ঠোডা এলাকার এক জেলে জানান, ২২ দিন নদী ও বঙ্গোপসাগরে সরকার অবরোধ দিয়েছে। অনেক জেলে আছে তারা অবরোধ মানে, আবার অনেকে মানে না। জাল ফেলে প্রতিদিন। এটা আমার দেশ, এ দেশের মাছের প্রতি আমাদের হক (অধিকার) আছে। কিন্তু ভারতীয় জেলেদের কীভাবে বাংলাদেশের মা ইলিশে হক আছে? যদি না থাকে তবে কেন বঙ্গোপসাগরের বহু পয়েন্টে কোনো কোস্টগার্ড বা প্রশাসন যায় না। সেসব স্থানে ভারতের জেলেরা বিনা বাধায় মা ইলিশ ধরে নিয়ে যায়। প্রশাসন সব জানে। কিন্তু তারা কিছু বলে না। ভারতীয়দের দেখলেও অনেক সময় না দেখার ভান (অভিনয়) করে।

অপরদিকে বাউফলের জেলে সিহাব জানান, জেলে তালিকায় প্রকৃতদের নাম নেই। যারা সরকারের সাহায্য পায় তারা প্রকৃত জেলে না। অনেক সময় চেয়ারম্যান-মেম্বার তাদের পছন্দের লোককে ওই সরকারি সহায়তার চাল দেয়। এ কারণে বাধ্য হয়ে নিষেধাজ্ঞা না মেনে ইলিশ ধরে পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

পটুয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলার হাটবাজারে কোনো ইলিশের দেখা না মিললেও অভিনব কৌশলে ঠিকই ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে মাছের রাজা ইলিশ। ছোট ছোট অংশে কিংবা বৃহৎ অংশে রাতের আধাঁরে পটুয়াখালী থেকে হাঁসের চাওতে (হলুদ, নিল রঙয়ের ছোট পিক আপ) করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যায় ইলিশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাক চালক জানান, গলাচিপা, কলাপাড়া থেকে ইলিশ ভর্তি পিকআপ রাত ১টা থেকে ৩টার মধ্যে বরিশাল অতিক্রম করে গন্তব্যে পৌঁছে যায়।

ঢাকাগামী একটি দোতলা লঞ্চের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মচারী জানান, রাঙ্গাবালী, বাউফল থেকে লঞ্চের খোলে ককশিটে করে ইলিশ ঢাকায় যায়। প্রশাসন সব জানে।

মোটরসাইকেল চালক মনির বলেন, রাতে কলাপাড়া-গলাচিপা থেকে পেছনে ড্রাম বসিয়ে ইলিশ শহরে আশে। তবে রাত ৩টার পর কোনো মোটরসাইকেল শহরে মাছের ড্রাম নিয়ে আসে না।

বাউফলের কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা সোহাগ জানান, বাসা পর্যন্ত মহিলাদের মাধ্যমে বাজারের ব্যাগে ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের এক হালি ইলিশ ১ হাজার থেকে ১৬ শ টাকার বিনিময়ে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। তবে কেউ ক্যাশ নেয় না। মোবাইলের মাধ্যমে আগে পরিশোধ করতে হয়। এরপর মাছ বাসায় পৌঁছে যায়।

দশমিনা এলাকার বাসিন্দা আবুল জমাদ্দার বলেন, দিনের আলোয় প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে কখনো স্কুলব্যাগে, কখনো বাজারের ব্যাগে ভরে গ্রাহকের কাছে মাছ পৌঁছে দেয় জেলেরা।

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি স্কুলব্যাগে মাছ নেয়ার আগে পলিথিনে ভালোভাবে মোড়ানো হয়। প্রতিটি ব্যাগে ১০ থেকে ২০ কেজি মাছ ধরে।

মতিন ফরাজী বলেন, বর্তমানে অনেক মাছ পিস পিস করে কেটে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে।

মৎস্য ব্যবসায়ী নয়ন জানান, বর্তমানে নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। তাই দাম কিছুটা কম। তবে আগে মোবাইলে টাকা পরিশোধ করতে হয়। দাম সম্পর্কে তিনি বলেন, ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের প্রতি কেজি ইলিশ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং কেজি সাইজের ইলিশ ৫শ থেকে ৬শ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

সম্প্রতি জেলা মৎস্য অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, যে সব স্থানে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আছে সেখানে অভিযান জোরেশোরে চলছে।

তিনি আরও বলেন, মূলত জেলা মৎস্য বিভাগে জনবল ও যানবাহনের সঙ্কট এবং পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় নিষেধাজ্ঞার সময় নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরে ইলিশ শিকার বন্ধ করা যাচ্ছে না।

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন