২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

নির্মাণকাজে সীমাহীন অনিয়ম: ভেঙে পড়ল ভূমি অফিস ভবনের ছাদ!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:২১ পূর্বাহ্ণ, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল ও বরগুনা:: বরগুনার বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদ ইউনিয়নে নির্মাণাধীন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভবনের ছাদ ধসে পড়েছে। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণ করায় ভবনের ছাদের একাংশ ধসে পড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভবনের ছাদ ধসে পড়ার কারণ জানতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই তথ্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বরগুনার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বরিশালটাইমসকে নিশ্চিত করেছেন।
এলাকার লোকজনের অভিযোগ, শুরু থেকেই ঠিকাদার ভবনটি নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে আসছেন। এ ছাড়া নির্মাণকাজে প্রকৌশলীর গাফিলতি রয়েছে বলেও এলাকাবাসী অভিযোগ তুলেছেন।
জানা গেছে- ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরগুনার বেতাগীতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণের জন্য গত বছর দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৪৭ লাখ টাকা। বেতাগী উপজেলার মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই নির্মাণকাজ করছেন। খান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ও হোসনাবাদের ইউপি চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক।
গত বছর ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। শুরু থেকেই ভবন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শুরুর অভিযোগ ওঠে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। নির্মাণকাজ শেষ না হতেই ধসে গেছে। অনিয়ম বন্ধ করে নিয়মানুযায়ী কাজের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন এলাকাবাসী।
কাজ যে নিম্নমানের হয়েছে তা উপজেলা প্রকৌশল অফিসের কর্মকর্তারাও স্বীকার করে বলছেন, ‘ধসে পড়া এই অংশ ভেঙে নতুন করে নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঠিকাদার আমাদের কোনো কথা শোনেননি। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করার কারণে ছাদের এই অংশ ধসে পড়ে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, বেতাগী উপজেলার কাজীরাবাদ ইউনিয়নের নির্মাণাধীন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভবনের ছাদ ভেঙে একপাশে পড়ে আছে।

নির্মাণশ্রমিক এনামুল হক জানান, ‘সকালে এই ছাদের সেন্টারিং খুলছিলাম, তখন ছাদ ধসে পড়ে। অল্পের জন্য আমরা রক্ষা পেয়েছি।’
তারপরেও নিম্নমানের কাজ করার বিষয়টি অস্বীকার করে ঠিকাদার মো. খলিলুর রহমান খান বলেন, কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। নির্মাণশ্রমিকদের ভুলবসত মেইনটেনেন্স সমস্যার জন্য এমনটি হয়েছে। তবে দ্রুতই নতুনভাবে কাজ শুরু করা হবে।
কাজিরাবাদ ইউনিয়নের ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মো. মহাসিন খান বরিশালটাইমসের এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘সকাল ১১টার দিকে আমি অফিসে দাপ্তরিক কাজ করছিলাম। তখন বিকট শব্দ শুনতে পাই। পরে বাইরে গিয়ে দেখি, নির্মাণাধীন ভবনের সামনের একটি অংশ ধসে পড়ছে।’ তিনি আরও বলেন, উপকরণ কম দেওয়ার কারণে ছাদটি ধসে পড়েছে। এ ছাড়া ছাদ ঢালাইয়ের পর থেকে এই ভবনে পানি দেওয়া হয়নি।

অনরুপ মন্তব্য করে বেতাগী উপজেলা প্রকৌশলী শিপলু কর্মকার বরিশালটাইমসকে বলেন, ‘ঠিকাদার নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণ করার কারণে ভবনের একটি অংশ ভেঙে পড়েছে। ঠিকাদারকে আমরা এই অংশ ভেঙে ফেলার জন্য চিঠি দিয়েছি। তিনি আমাদের কথা শোনেননি। এমনকি এই অংশ নির্মাণের সময় আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেননি।’
এ বিষয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এস কে আরিফুল ইসলাম বরিশালটাইমসকে বলেন, ‘ছাদ ধসে পড়ার কথা শুনেছি। ধসে পড়ার কারণ জানতে আমরা তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করব। যাঁদের গাফিলতির কারণে এ ঘটনা ঘটছে, তাঁদের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন