২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

নৌকায় ভোট দিলে এলাকায় থাকতে পারবে না, হুমকি সাংসদ ভাতিজার

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:৫৩ অপরাহ্ণ, ১৭ জুন ২০২১

নৌকায় ভোট দিলে এলাকায় থাকতে পারবে না, হুমকি সাংসদ ভাতিজার

মোঃ জসীম উদ্দিন,বাউফল >> নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া হচ্ছে অপদস্থ করার। আর নৌকায় ভোট দিলে নির্বাচনের পর এলাকায় থাকতে পারবে না সমাবেশ করে এমন ঘোষনায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এমন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নদী বেষ্টিত বিচ্ছিন্ন চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ আ স ম ফিরোজের ভাতিজা এনামুল হক ওরফে আলকাস মোল্লা ও তাঁর লোকজন আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমির আলী হাওলার ও তাঁর কর্মী-সমর্থকদের প্রকাশ্যে ওই হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চন্দ্রদ্বীপ ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো তালিকার ১ নম্বর ক্রমিকে রাখা হয়েছিল সাংসদ ফিরোজের ভাতিজা আলকাস মোল্লার নাম।আলকাস গত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় এ বছর তাঁকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ইউনিয় আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আমির আলী হাওলাদারকে।

কিন্তু সাংসদ ফিরোজ তা মেনে নিতে পারেননি। তাই আমির আলীকে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ডেকে ভাতিজা আলকাসকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যেতে বলেন সাংসদ ফিরোজ। এ সংক্রান্ত অডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে ভাইরাল হয়ে যায়।যা অধিকাংশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

আলকাসের বাড়ি পাশের কালাইয়া ইউনিয়নে। তাঁর আরেক ভাই মো. মনির হোসেন মোল্লা কালাইয়া ইউপির চেয়ারম্যান। এ বছরও মনির বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তাই আলকাস তাঁর ভোট পরিবর্তন চন্দ্রদ্বীপে নিয়ে গেছেন এবং সেখান থেকে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন,‘এমপি মহোদয়ের (সাংসদ ফিরোজ) ভাতিজা আলকাসের পক্ষাবলম্বন করে ৯ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের কথাসংবলিত অডিও ভাইরাল হওয়ার খবর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় চরম ক্ষুব্দ হন সাংসদ ফিরোজ ও তাঁর ভাতিজা আলকাস। তিনি (আলকাস) বুধবার সন্ধ্যার দিকে চরমিয়াজান বাজারে মিছিল ও সমাবেশ করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দশ্যে বলেন,এমপি সাহেব (সাংসদ ফিরোজ) আমির আলীকে মনোনয়ন দেয়নি।তাই নৌকায় ভোট দিলে নির্বাচনের পর এলাকায় থাকতে পারবে না।অভিন্ন কথা বলেন আরও কয়েকজন।

এছাড়াও গত বুধবার ‘চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ’ নামে আলকাসের ছবি সংবলিত একটি আইডি থেকে সাংসদ ফিরোজ ও শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে ষ্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে। সেখানে নৌকার প্রার্থী আমির আলীকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন আপনি যেখানে সেখানে অপদস্থ হবেন। আপনার কোনো বাপ ঠেকাতে পারবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক নেতা বলেন,‘বুঝেইনতো। চন্দ্রদ্বীপের মানুষের কোথাও যেতে হলে এমপি সাহেবের বাসার কাছ দিয়ে যেতে হয়। তাই তাঁদের কথা বাধ্য হয়ে শুনতে হয়।তাছাড়া আলকাস এক যুবকের প্রকাশ্যে চোখ উদপাটন করেছিলেন। ওই মামলায় তিনি যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন। হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন।তাঁর রয়েছে আলাদা বাহিনী। এ কারণেও সবাই ভয় পায়।

নৌকার প্রার্থী আমির আলী বলেন,আমি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হলেও এমপি সাহেবের (সাংসদ ফিরোজ) ভাতিজা বলে দলীয় কার্যালয় ব্যবহার করেন স্বতন্ত্রপ্রার্থী আলকাস। দলীয় কার্যালয়ে এমপি সাহেব, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবির পাশে আলকাসের ছবি টাঙিয়ে নৌকার বিপক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে। আর নৌকার পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের এলাকা ছাড়ার করার প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে। নৌকার ফেষ্টুন সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। উপজেলার নয়টি ইউপির নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কমিটি করে দিয়েছে। আটটি ইউনিয়নে তাঁরা প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিলেও অদৃশ্য কারণে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী আসেনি।বিষয়টি তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবহিত করেছেন।  

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আলকাস মোল্লা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,‘ফেসবুকে স্ট্যাটাস সম্পর্কে তিনি জানেন না।তাঁরা (আমির আলী ও তাঁর লোকজন) নিজেরাও ষ্ট্যাটাস দিয়ে তাঁর ওপর দোষ চাপাতে পারে। আর আমির আলীর সঙ্গে এমপি মহোদয়ের (সাংসদ ফিরোজ)একান্তে কথা হয়েছে। সেই কথোপকথনের অডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ও পত্রিকায় দিয়ে এমপির সম্মানহানি ও তাঁকে ছোট করেছে। এ কারণে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর আমির আলীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশে করেছে। সেখানে তিনিও (আলকাস) ছিলেন। তবে কাউকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সত্য না।’

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন