২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

পটুয়াখালীতে তিনি মস্তবড় রাজনৈতিক, কিন্তু ঢাকায় করেন ডাকাতি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:৫৬ অপরাহ্ণ, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

পটুয়াখালীতে তিনি মস্তবড় রাজনৈতিক, কিন্তু ঢাকায় করেন ডাকাতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: মাহতাবউদ্দিন একজন পেশাদার ডাকাত দলের সর্দার। কিন্তু তার নিজ এলাকা পটুয়াখালী শহরের লোকজন জানত তিনি সরকারদলীয় লোক এবং রাজধানী ঢাকায় ঠিকাদারি ব্যবসা করেন। চলাফেরাও করতেন রাজকীয় স্টাইলে। এভাবে ভালোই চলছিল মাহতাবের অপকর্ম। কিন্তু বাদ সাধেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) বেরসিক কর্মকর্তারা। সম্প্রতি ২০২২ সালের একটি ডাকাতি মামালায় ৩ সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাকে। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১১ লাখ টাকা ও ডাকাতি কাজে ব্যবহূত দুটি মোটরসাইকেল। তাদের গ্রেপ্তারে হতবাক এলাকাবাসী। কারণ তারা জানতেন গ্রেপ্তাররা সবাই ঢাকায় ঠিকাদারি ও এলাকায় রাজনীতিতে জড়িত। এমনকি বিপদে এলাকার লোকজনকে সহায়তাও করতেন এ চক্রের সদস্যরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ জোনের ডিসি মশিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গত বছরের ৬ অক্টোবর বাসযোগে ঢাকা থেকে শরীয়তপুর যাওয়ার সময় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন চুনকুটিয়া এলাকায় পৌঁছলে জনৈক রফিকুল ইসলাম নামক একজন ব্যবসায়ীকে বহনকারী বাসটি দুটি মোটরসাইকেলে দিয়ে ডিবি পরিচয়ে বেরিকেড দিয়ে থামানো হয়। এর পর ডাকাতরা প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে নগদ ৪১ লাখ টাকা বহনকারী ব্যবসায়ী রফিককে নামিয়ে নেয়। এরপর তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হলে তার ছায়া তদন্ত শুরু করে ডিবি লালবাগ বিভাগ। এরপর গ্রেফতার করা হয় মুজিবুর রহমান ওরফে নলা মুজিবর, জামাল হোসেন, কাউসার আহমেদ ও মাহতাব উদ্দিনকে।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত মাহতাব পটুয়াখালী এলাকায় বড় রাজনীতিবিদ হিসাবে পরিচিত। এবং ঢাকায় তিনি প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার বলে স্থানীয়রা জানতেন। কিন্তু তার এসব কিছুই ছিল ভুয়া। তার নামে অন্তত ৬টি ডাকাতি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া আরও একাধিক ডাকাতির কথা সে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা সবাই পেশাদার ডাকাত বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।

জানা গেছে, ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম মোবাইল এবং কম্পিউটার এক্সেসরিজ সামগ্রী ক্রয় বিক্রয়ের ব্যবসা করেন। গত বছরের ৬ অক্টোবর তাঁতীবাজারের একটি ব্যাংক থেকে ৪১ লাখ টাকা তোলেন। এরপর বাবুবাজার থেকে একটি বাসে উঠে শরীয়তপুরের নড়িয়াতে যাচ্ছিল। কিন্তু পথেই তাকে বাস থেকে নামিয়ে টাকা কেড়ে নেওয়া হয়। ওই ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন রফিকুল ইসলাম। থানা পুলিশের পাশাপাশি ওই মামলার ছায়া তদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

৪১ লাখ টাকা লুটের ঘটনার পর গত বছরের ৪ নভেম্বর সূত্রাপুর এলাকার একটি ফাস্টফুড দোকানে ডাকাতির উদ্দেশে রেকি করতে যায় গ্রেপ্তার ৪ জন। বিষয়টি থানা পুলিশ টের পেয়ে গেলে অস্ত্র দেখিয়ে দোকানদার এবং পুলিশকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলারও ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ। এক পর্যায়ে গ্রেফতার করা হয় মজিবর রহমান ও জামাল হোসেনকে। এ সময় তারা পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে কেরানীগঞ্জে ৪১ লাখ টাকা লুটের কথা স্বীকার করেন। গ্রেপ্তার মুজিবর ও জামালের বাড়ি বরিশাল নগরীর কাশিপুর এলাকায়।

সূত্রমতে, মুজিবর ও জামালকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা চক্রের অপর দুই সদস্য মাহতাব ও কাউসারের নাম ঠিকানা প্রকাশ করে। এরপর তাদের গ্রেফতারে মাঠে নামে গোয়েন্দা পুলিশ। এরই মধ্যে মুজিবর ও জামালের গ্রেফতারের বিষয়টি জেনে যায় মাহতাব ও কাউসার। এরপর থেকে তারা ঘনঘন তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকেন। থেমে থাকেনি গোয়েন্দারাও। অবশেষে জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে কাউসারকে পটুয়াখালী ও মাহতাবকে খুলনা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহূত ২টি মোটরসাইকেল, চারটি মোবাইল ফোন এবং নগদ ১১ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

ডিসি মশিউর রহমান বলেন, গ্রেফতারকৃত প্রত্যেক আসামির নামে অর্ধডজন থেকে শুরু করে একাধিক ডাকাতি, দস্যুতা মামলার রেকর্ড আছে। এ চক্রের সদস্যরা সারা দিন ঢাকার বিভিন্ন ব্যাংক এলাকায় ঘোরাফেরা করতে থাকেন। এবং কোনো ব্যাংক থেকে কেউ মোটা অঙ্কের টাকা তুলেছে কিনা তার খোঁজখবর নিয়ে টার্গেট ব্যক্তির কাছ থেকে সবকিছু লুট করে নেয়। এ ঘটনায় গ্রেফতার ৪ জনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সেখানে আরও কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তারে ডিবির অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।’

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন