২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

পটুয়াখালীতে টাকার লোভে মেয়ে জামাইকে খুন করালেন শ্বশুর!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:০৭ অপরাহ্ণ, ২৫ অক্টোবর ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, পটুয়াখালী:: পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নে নাওয়াপাড়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আমিনুল গাজী (৫০) ওরফে দীলিপ গাজীর ব্যাংকে গচ্ছিত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন শ্বশুর আনোয়ার প্যাদা। তাকে হত্যার উদ্দেশে ভাইয়ের মেয়ে জামাই নিজামের সাথে ২ লক্ষ টাকা চুক্তি করে লোক ভাড়া করে। গত ২১ অক্টোবর নিজাম তার পূর্ব পরিচিত আমজেদের সাথে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে রাতে দীলিপের বাড়িতে বেড়াতে যায় এবং কৌশলে তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
এটি কোন সিনেমার গল্প নয় এ ঘটনাটি সম্প্রতি সময়ে পটুয়াখালীর আলোচিত হত্যার মূল রহস্য। রোববার সকালে পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে বিষয়টি সাংবাদিকদের সামনে আনেন পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মইনুল হাসান।

তিনি সাংবাদিকদের জানান, গত ২২ অক্টোবর দুপুরে খবর পেয়ে উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের নওয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও প্রাক্তন ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলাম গাজী ওরফে দিলিপ গাজীর (৫০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে লাশের ময়নাতদন্ত ও মামলার ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ। খুনের ঘটনার ৩৬ ঘন্টা পর পটুয়াখালী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেনের নেতৃত্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পটুয়াখালী গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। আসামীদের কলাপাড়া আদালতে হাজির করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনার বরাত দিয়ে এসপি মইনুল হাসান জানান, পায়রাবন্দরের উন্নয়নকে কেন্দ্র করে নিহত দিলিপের অনেক জমি অধিগ্রহণ হয়। সেই সূত্রে দিলিপের ব্যাংক হিসাবে প্রায় কোটি টাকা জমা পড়ে। ওই টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পায়তারা করে তার শ্বশুর আনোয়ার প্যাদা। কলাকৌশলে টাকা হাতিয়ে নিতে ব্যর্থ হলে ভাতিজি জামাই নিজামকে প্রস্তাব করে মেয়ে জামাতা খুন করার। চাচা শ্বশুরের প্রস্তাবের আলোকে নিজাম বরগুনা জেলার হেউলিয়াবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা আমজেদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে দুই লাখ টাকা চুক্তি করে। মূলত আমতলীর থানার একটি ডাকাতি মামলার সূত্র ধরে নিজামের সাথে বরগুনা কারাগারে আমজেদের পরিচয় ঘটে। খুনের ঘটনার অন্তত তিন মাস আগে নিজামের সঙ্গে খুনের পরিকল্পনা করে দিলিপের শ্বশুর আনোয়ার।

পরিকল্পনা অনুযায়ী অন্তত দুই মাস আগে বরগুনা-আমতলী নৌ-রুটের ফেরীঘাটে বসে ভাড়াটে খুনিদের সাথে পাকা কথা হয়। দুই লাখ টাকা চুক্তিতে বিভিন্ন সময়ে নিজামকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করে আনোয়ার। নিজাম ও আমজেদ ওই টাকা ভাগাভাগি করে নেয়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায়- দিলিপ কাতার প্রবাসী ছিলেন। বিদেশ থাকাকালীন আয়ের অর্থ ছাড়াও পৈত্রিক সূত্রে তিনি সম্পদশালী ছিলেন। কিন্তু দিলিপ স্ত্রী ও সন্তানের ভরন-পোষণ নিয়ে কার্পন্য করতেন। দিলিপের এক মেয়ে মানসিক অসুস্থ থাকা সত্বেও তার সঠিক চিকিৎসা না করা নিয়ে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। মূলত দিলিপের কৃপনতার কারণে পারিবারিক কলহ বাড়তে থাকে। র্দীঘদিন ধরে স্ত্রী ও তিন সন্তান পিতা আনোয়ারের কাছে বসবাস করতো। চুক্তি অনুযায়ী খুনের উদ্দেশে গত ২১ অক্টোবর আমজেদ ও নিজাম কলাপাড়া উপজেলার লালুয়ার নওয়াপাড়ায় অতিথি হিসেবে দিলিপের বাড়িতে রওনা হয়। এসময় খুনিরা আনোয়ারের কাছে বাকি টাকা দাবি করলে পটুয়াখালীর কলাতলা বাজারের একটি বিকাশের দোকান থেকে ১০ হাজার এবং খুনের পরে আরও ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করে শ্বশুর আনোয়ার।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের দুই ভাড়াটে খুনিরা জানায়- ভিকটিম দিলিপ সম্পর্কে চাচাতো ভায়রা ভাই হয়। সেই সুবাদে তার বাড়িতে বেড়াতে যায় নিজাম। নিজাম বরগুনা জেলার আমতলীর উপজেলার গুলিশাখালীর বাসিন্দা ফজলে করিমের ছেলে বলে নিশ্চিত করে পুলিশ। ঘটনার আগে পারিবারিক আলোচনার একপর্যায় কোমল পানির (সেভেনআপ) সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে প্রথমে দিলিপকে পান করায় খুনিরা। ওই পানি খেয়ে দিলিপ ঘুমিয়ে গেলে শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করে খুনিরা স্থান ত্যাগ করেন। শ্বশুর আনোয়ার জানায়- তার জামাতার ব্যাংক একাউন্টের নমিনি ছিল তার অসুস্থ মেয়ে লামিয়া আক্তার। বাবার অবর্তমানে নিজ মেয়ে ও নাতনিকে ফুসলিয়ে ওই টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল তার।

এ ঘটনায় নিহত দিলিপের স্ত্রী হাবিবা বেগম বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।’

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন