২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

পদ্মাসেতুর প্রভাব: লঞ্চের আগাম টিকিট কিনতে ভিড় নেই

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:১৭ অপরাহ্ণ, ০৪ জুলাই ২০২২

পদ্মাসেতুর প্রভাব: লঞ্চের আগাম টিকিট কিনতে ভিড় নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: ঈদযাত্রায় নদীপথে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বাড়ি ফেরার জন্য লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলছে। তবে এবার আগের মতো আর ভিড় নেই টিকিট কাউন্টারে। রোববার সকালে এই টিকিট বিক্রি শুরু হয়। প্রথম দিনের মতো সোমবারও রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে টিকিটপ্রত্যাশীদের সংখ্যা ছিল বেশ কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই চিরচেনা সদরঘাটের ব্যস্ততা কমতে শুরু করেছে। এর প্রভাব পড়েছে ঈদযাত্রার টিকিটেও।

প্রতি ঈদেই টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ পাওয়া যেত, তবে এবার মিলছে না যাত্রীই। সারা বছরের এই লাভজনক সময়ে তাই লঞ্চ মালিকদের চোখে-কপালে চিন্তার ভাঁজ।

জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে দক্ষিণাঞ্চলের নৌরুটে চলাচল করা লঞ্চের টিকিট বিক্রি শুরু হয় রোববার। তবে এর অনেক আগে থেকেই লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলছে। সেতু চালুর পর লঞ্চে ভাড়া কমানো হলেও ঈদযাত্রায় সরকার নির্ধারিত ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে।

সদরঘাটের একাধিক লঞ্চের সুপারভাইজার আর টিকিট কাউন্টার থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, লঞ্চে এখন শুধু কেবিনের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। তবে গত দুদিনে কেবিনের টিকিট বিক্রি হয়েছে খুবই কম।

পরিবারসহ রোববার রাতে ঢাকা থেকে বরিশাল যান সরদার আলী মিয়া। তিনি বলেন, ‘সবসময় লঞ্চেই যাতায়াত করি৷ যার যেদিকে সুবিধা হয় সে সেদিক দিয়েই যাবে। আর লঞ্চে একটু আরামে যাওয়া যায়।’

বগা-পটুয়াখালীগামী কুয়াকাটা ১ লঞ্চের ইনচার্জ মোতালেব মিয়া বলেন, ‘আমাদের ডেকে যাত্রী আসে লঞ্চ ছাড়ার আগ মুহূর্তে। তবে আমরা সিঙ্গেল কেবিনের যাত্রী পাচ্ছি না। ফ্যামিলি ক্যাবিনে যাত্রী আসছে।’

মানামি লঞ্চের সুপারভাইজার মো. ফারুক মিয়া বলেন, ‘লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। তবে তা আশানুরূপ নয়। যাদের লঞ্চে যাওয়ার, তারা যাবেই। অনলাইনেও আমাদের টিকিট বিক্রি হচ্ছে।’

সুন্দরবন নেভিগেশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার সিনিয়র সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘লঞ্চে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। এবার যাত্রীর চাপ অনেকটাই কম। ৭, ৮ তারিখের টিকিটের চাহিদা বেশি। তবে তা আশানুরূপ নয়।

‘যাত্রী যদি বেশি হয় তাহলে ৭, ৮, ৯ তারিখে ডাবল ট্রিপ দেব। পোশাক শিল্পের ছুটির ওপর নির্ভর করবে, যদ যাত্রীর চাপ বেশি হয়।’

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদে যেমন যাত্রীর চাপ থাকে, এখন তার চেয়ে একটু কম হবে। যেহেতু আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়েছে, মানুষ সেখান দিয়ে সড়কপথে যাবে। আবার এসএসসি পরীক্ষার জন্যও অনেকে বাড়ি না ও যেতে পারে। এসব নানা কারণে এবার হয়তো যাত্রী কম হবে।’

সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘স্পেশাল ট্রিপের কেবিনের টিকিট আগাম বিক্রি হয় না। এটা সময়ের ওপর নির্ভর করে। মানুষ বেশি হলে স্পেশাল (ডাবল) ট্রিপ চলে, আর না হলে চলে না।’

ঈদের পর ১৬, ১৭, ১৮- এই তিন দিন একটু চাপ থাকবে বলে মনে করেন তিনি।

ভাড়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘লোকজন কম থাকায় এখন ভাড়া কম নেওয়া হচ্ছে। ঈদে সরকার নির্ধারিত ভাড়াই নেওয়া হবে।’

বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাটের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক মো. শহীদ উল্যাহ বলেন, ‘যদি যাত্রীর চাপ বেশি হয় সেক্ষেত্রে অনেকেই স্পেশাল লঞ্চের চালুর কথা বলে রেখেছে। বর্তমানে সদরঘাটে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৭৫টি লঞ্চ আসা-যাওয়া করছে।

‘আর ঈদের সময় ১৪০ থেকে ১৫০টি লঞ্চও চলাচল করে। তখন স্পেশাল লঞ্চ যায়। এবার ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-পটুয়াখালী রুটে দুটি বিলাসবহুল নতুন লঞ্চ আসছে।’

তিনি বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি ভালো আছে, র‍্যাব অলরেডি কাজ শুরু করছে। নৌ পুলিশ, ডিএমপি আছে, অতিরিক্ত পুলিশও আসবে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

সদরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক বিল্লাল হোসেন জনি বলেন, ‘যাত্রীর চাপ অনেক কম। পদ্মা সেতুর প্রভাব তো একটু পড়বেই। আমাদের পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক টহলে রয়েছে। ঈদ সামনে রেখে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।’

বর্তমানে সারা দেশে মোট ১০৭টি নৌপথ রয়েছে, যার মধ্যে ৪৩টি পথ ঢাকার সদরঘাট থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের সংযোগকারী। এই ৪৩টি নৌ-রুটে চলাচলকারী লঞ্চের সংখ্যা প্রায় ২০০। আর শিমুলিয়া থেকে মাঝিরকান্দি ও বাংলাবাজারে চলাচল করে ৮৭টি লঞ্চ।’

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন