২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

পাথরঘাটার সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো ‘করোনায় মরতে অইবো না, আমরা ক্ষুধায় মইরা যামু’

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:৪২ অপরাহ্ণ, ২৯ মার্চ ২০২০

সাইদুল ইসলাম, রিমন :: পাথরঘাটা উপজেলায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে যতটা না উদ্বিগ্ন, তার থেকে অনেক বেশি উৎকণ্ঠিত খাদ্য ও পেটের ক্ষুধা নিয়ে।

তাদের একটিই কথা- ‘গাড়ি লঞ্চ বন্ধ থাকলে আমরা খামু কেমনে? বউ-বাচ্চারে কী খাওয়ামু? ভিক্ষা করতে গ্রামে বের হলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আতঙ্কে মানুষ ভিক্ষা না দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। আমাদের করোনাভাইরাসে মরতে অইবো না। কিছু দিন এমনভাবে চললে আমরা এমনেই না খাইয়া মইরা যামু’।

জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গাড়ি লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আখাউড়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে অন্ধপল্লীর বাসিন্দারা।

উপজেলার কালমেঘা ৩০ টি পরিবারে বৃদ্ধ, শিশু ও নারী নিয়ে অন্তত শতাধিক অন্ধ সুবিধাবঞ্চিত।

করোনা মহামারীর কারণে চলাচল গাড়ি লঞ্চ বন্ধ থাকায়। ভিক্ষা করতে গ্রামে বের হলে করোনাভাইরাস আতঙ্কে গ্রামের মানুষ ভিক্ষা না দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। তাই দিন আনে দিন খাওয়া অন্ধ জনগোষ্ঠীর আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়।

জালাল হাওলাদার, ওলি আহম্মদ, হোসেন আলী, শিউলী আক্তার, জাহানারা  বেগম, হাসিনা আক্তার, নার্গিস বেগমসহ ক্ষুধার্ত ভিক্ষুকরা এ প্রতিবেদককে জানান, ঘরে যা সঞ্চয় ও মজুদ ছিল সব ফুরিয়ে গেছে। বাঁচার তাগিদে ভিক্ষা করতে গ্রামে গেলেও ভাইরাস সংক্রামণের ভয়ে কেউ ভিক্ষা দেয় না। ঘরে খাবারের কিছু না থাকায় রান্নাও বন্ধ।

কালো মিয়া প্রচণ্ড ক্ষুধার যন্ত্রণা নিয়ে স্ত্রী শিউলীর কাছে খাবার খুঁজে না পেয়ে তাকে মারধর করেন। ঘরের হাঁড়িপাতিল ভাঙচুর শুরু করেন।অন্যদের সহায়তায় দুদিন হলো।

গ্রামের এক লোকের বাড়িতে তিনি গৃহকর্মীর কাজ করতেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ আতঙ্কে ওই বাড়ির লোকজন তাকে যেতে নিষেধ করেছেন। ঘরে চাল-ডাল যা ছিল এতদিনে তা ফুরিয়ে গেছে। আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসারে রান্নাও বন্ধ। শিউলীর স্বামী, সন্তান নিয়ে উপোস দিন কাটছে তাদের।

সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের সবার। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি কিংবা সমাজের বিত্তবানরাও এগিয়ে আসে না। চরম বিপাকে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

পাথরঘাটা উপজেলার সুবিধাবঞ্চিত অন্যরা জানান,  কদিন ধরে বউ পোলা-মাইয়্যা নিয়া খেয়ে না খেয়ে ঘরে শুয়ে-বসে সময় পার করছি। একদিন খালি (শুধু) মুখোশ (মাস্ক) আর হাত ধোয়ার ওষুধ দিয়ে গেছে। পেটে দেয়ার মতো খাবার তো কেউ দেয় না। ক্ষুধার জ্বালা আর সহ্য হচ্ছে না।

আর যদি কিছু দিন এমনিভাবে চলতে থাকে, তা হলে ভাইরাসে মরতে অইবো না আমরা ঘরবন্দি থাইকা উপোসে মইরা যামু’। সরকারি কোনো বরাদ্দ এখনও পাইনি। তবে সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের একটি তালিকা করে আমাদের কিছু দিতে বলেন।

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন