২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

পাথরঘাটায় সড়ক ও জনপথের তাইজুল ইসলামকে মারধর তীব্র ক্ষোভ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:২৯ অপরাহ্ণ, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বার্তা পরিবেশক, বরগুনা:: বরগুনার পাথরঘাটায় সড়ক ও জনপথের কার্যসহকারী তাইজুল ইসলামকে মারধর এবং ঝাড়ুপেটার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগে (সওজ) তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়ক নির্মাণ কাজকে কন্দ্র করে সোমবার মারধরের এ ঘটনা ঘটে।

মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সওজর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সুশীল সাহাসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। মারধরের ঘটনার বিচার না হলে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার আভাসও মিলেছে। এরই মধ্যে মারধরের ঘটনায় বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন তাইজুল।

তিনি বলেছেন, ঘটনাস্থলে ডেকে নিয়ে বরগুনা-২ আসনের এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমন প্রথমে গালাগাল করেন। একপর্যায়ে আমাকে থাপ্পড় দেন। এরপরই তার সঙ্গের লোকজন আমাকে মারধর শুরু করে।

একপর্যায়ে এমপি রিমনের নির্দেশে ঝাড়ু আনা হয়। পরে তারই নির্দেশে ঝাড়ু দিয়ে ১০ বার আঘাত করার পর তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তাইজুলের এ অভিযোগ স্বীকার করেননি এমপি রিমন। সাংবাদিকদের জানান, সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার প্রমাণ পাই। পরে স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে বহু কষ্টে তাদের থামিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করি।

সোমবার দুপুরে পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের পূর্ব হাতেমপুর গ্রামের কাজিবাড়ি যান এমপি রিমন। সেখানে পাথরঘাটা-ঢাকা মহাসড়কের চলমান নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন তিনি। ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পাথরঘাটা থেকে কেরামতপুর পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণকাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন। সাংবাদিকদের এমপি রিমন বলেন, বহু কষ্ট করে উন্নয়ন কাজের অর্থ বরাদ্দ আনতে হয়।

পরিদর্শনে গিয়ে দেখি, সিলেট চান এবং টোক বালুর পরিবর্তে নিম্নমানের স্থানীয় বালু দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আমি তাদের উন্নতমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করতে বলি। ঘটনাস্থলে সওজর দায়িত্বপ্রাপ্ত তাইজুল ইসলাম উপস্থিত না থাকায় তাকে মোবাইল ফোনে খবর দিয়ে আনা হলে একই কথা বলা হয়।

এদিকে নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগে তাইজুল বলেছেন, এমপি সাহেবের আসার খবর শুনে নির্মাণাধীন সড়কে পানি ছিটিয়ে তার গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করে আমি অন্য সাইটে গিয়েছিলাম। ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরপরই তিনি আমায় গালাগাল শুরু করেন। বর্তমানে কাজে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না এবং যেটুকু অনিয়ম হয়েছে তা সংশোধনের জন্যে ঠিকাদারকে দুটি চিঠি দেয়া হয়েছে, এটি বলার পরও তিনি নিবৃত্ত হননি।

এ প্রসঙ্গে সওজর বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল হায়দার বলেন, তাইজুলের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় এগোবো। বরগুনার জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারকে লিখিত চিঠি দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। নির্মাণ বা সংস্কার কাজে ত্রুটি-বিচ্যুতি হতেই পারে। সংশোধনেরও সুযোগ রয়েছে। এভাবে মারধর করা হলে তো কাজ করা যাবে না।

তিনি বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে জানাচ্ছি। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। সওজর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সুশীল সাহা যুগান্তরকে বলেন, আমরা চাকরি করতে এসেছি। মার খেতে নয়। এভাবে চলতে পারে না।

তাছাড়া নিম্নমানের কাজের ব্যাপারে এর আগে এমপি রিমন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগও করেছিলেন। ওই অভিযোগের পর তদন্ত টিম এসে কাজ পরিদর্শন করে গেছে। তারা বড় ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি পায়নি। কাজে সমস্যা হলে আমাদের নির্বাহী প্রকৌশলী আছেন, সুপার ইনটেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার, আমি এবং চিফ ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন। উনি একজন এমপি। চাইলে সচিব-মন্ত্রী পর্যন্ত অভিযোগ করতে পারেন।

আমরা সমস্যার সমাধান করতাম। কিন্তু এভাবে একজন সরকারি কর্মচারীকে মারধর এবং তাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। মন্ত্রণালয় বিষয়টি জেনেছে। চিফ ইঞ্জিনিয়ার বেশ কয়েকবার আমায় ফোন করে পরিস্থিতি জানতে চেয়েছেন।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সওজর একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ২-১ দিনের মধ্যে বিষয়টির সুরাহা না হলে মাঠপর্যায়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তার প্রভাব পড়বে। অঘোষিত কর্মবিরতিও শুরু হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামাল দেয়া মুশকিল হয়ে পড়বে। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার কথা ভাবা হচ্ছে।

এ নিয়ে আলাপকালে এমপি রিমন বলেন, যা বলা হচ্ছে তার পুরোটাই বানোয়াট। যা করার ক্ষুব্ধ জনতাই করেছে। আমি পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছি। তাছাড়া সরকারের টাকায় চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অনিয়ম হলে তা বলা যাবে না, এটা কোন আইনে আছে? সেখানে তেমন কোনো বড় ঘটনা ঘটেনি।

এর আগেও একজন মহিলা আইনজীবীসহ একাধিক সরকারি কর্মচারীকে মারধর, সালিশির নামে এক নারীর মাথায় মানববিষ্ঠা ঢালা এবং নিজ হাতে লোকজন পেটানোর অভিযোগ রয়েছে এই এমপির বিরুদ্ধে। মানববিষ্ঠা ঢালা এবং মহিলা আইনজীবীকে মারধরের ঘটনায় আদালতে মামলা পর্যন্ত হয়েছে।

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন