২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

পিরোজপুরে এএসআই রুহুলের অর্ধলক্ষাধিক টাকার ঘুষ বাণিজ্য ফাঁস!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:৩৭ অপরাহ্ণ, ২২ জুলাই ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: পিরোজপুর সদর থানার সহকারি উপ-পরিদর্শকের (এএসআই) রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে ওয়ার্কশপ মেকানিককে ফাঁদে ফেলে মিথ্যা মামলার হুমকি দিয়ে অর্ধলক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে কিছুই জানা নেই বলে দাবি করেছেন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

অভিযোগ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার (১৭ জুলাই) বিকেলে পিরোজপুর নতুন জেলখানা সংলগ্ন নির্মাণাধীন মুক্তিযোদ্ধা ভবনের নিরপত্তকর্মী জাহাঙ্গীরের অনুরোধে সেখানে কাজ করতে যান ওয়ার্কশপ মেকানিক আলী শেখ। এর কিছুক্ষণ পরেই সেখানে গিয়ে এএসআই রুহুল আমিন এক নারীকে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে ওয়ার্কশপ মেকানিক আলী শেখ ও নিরাপত্তাকর্মী জাহাঙ্গীরকে মারধর করে নির্মাণাধীন ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখেন এএসআই রুহুল আমিন। পরে একই ভবনের একটি বাথরুমের ভিতর থেকে জেসমিন নামে এক নারীকে উদ্ধার করেন ওই এএসআই। উদ্ধারের সময় ওই নারীকে বাথরুমের কার্নিস থেকে নামাতে লাঠিচার্জ করা হয়। এ সময় ওই নারী লাফ দিয়ে বেসিনের ওপরে পরলে তার একটি পা ভেঙে যায়।

ভুক্তভোগীরা জানায়, ওই নারীকে হাসপাতাল পাঠিয়ে দিয়ে এএসআই রুহুল তাদেরকে আটক করে থানা হাজতে রাখে। এরপরই ওই এএসআই তার নিজস্ব দালালদের দিয়ে ২ লক্ষ টাকা উৎকোচ দাবি করে। শেষাবধি রাত পৌনে ১২টায় দালাল মারফত ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে মুচলেখা রেখে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী ওয়ার্কশপ মেকানিক আলী শেখ বরিশালটাইমসকে জানান, বিনা অপরাধে আটক হয়ে শুক্রবার রাতে দালালের মাধ্যমে এএসআই রুহুলকে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়া পাই। এরপর শনিবার (১৮ জুলাই) রাতে আবারও তার বাসায় এসে দাবিকৃত উৎকোচের ২ লাখ টাকার বাকি টাকার জন্য বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি-ধামকি দেয় এএসআই রুহুল। সেই থেকে তিনি (আলী শেখ) ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও তার নিয়োজিত দালালদর ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন বলেও জানান ভুক্তভোগী আলী।

স্থানীয় একটি সূত্রের দাবি, ওই নারীকে মারধর করে পা ভেঙে ফেলার ঘটনা ধামাচাঁপা দিতেই ভিন্ন ঘটনার জন্ম দিয়ে এএসআই রুহুল আমিন নিরপরাধ জাহাঙ্গীর ও আলী শেখকে গ্রেপ্তার করে পিরোজপুর সদর থানায় নিয়ে যায়। পরে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে গভীর রাতে আবার ছেড়ে দেয়।

তবে এসব অভিযোগ একেবারেই অস্বীকার করে অভিযুক্ত সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রুহুল আমিন বরিশালটাইমসকে জানান, ওই নারীকে নিয়ে আলী শেখ ও জাহাঙ্গীর অসামাজিক কাজ করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে নির্মাণাধীন মুক্তিযুদ্ধ ভবনে অভিযান চালানো হয়। এরপর সেখানের একটি কক্ষ থেকে প্রথমে জাহাঙ্গীর ও আলীকে আটক করা হয়। পরে অনেক খোঁজাখুজি শেষে আরেকটি কক্ষের টয়লেটের ওপরে ওই নারীকে দেখতে পায় পুলিশ। এ সময় ওই নারী পালানোর জন্য সেখান থেকে লাফ দিলে তার পা ভেঙে যায়।

তিনি আরও জানান, ওই ঘটনার পর জাহাঙ্গীর ও আলীকে আটক করে থানায় এবং ওই নারীকে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে নারীর পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় আটককৃতদের মুচলেখা রেখে রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু উৎকোচ আদায়ের অভিযোগ সত্য নয়। তবে মহিলার চিকিৎসা বাবদ পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা আলীর স্বজনেরা দিয়েছে বলে শুনেছি।

পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ নুরুল ইসলাম বাদল বরিশালটাইমসকে জানান, গত শুক্রবার জাহাঙ্গীর ও আলী নামে দু’জনকে একটি নারী সংক্রান্ত ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে আনা হয়েছিলো। তবে ওই নারী কিংবা তার পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ওসি আরও জানান, পুলিশের উৎকোচ আদায়ের কোনো ঘটনা সম্পর্কে তার জানা নেই। এ ধরনের কোনো ঘটনার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে পিরোজপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোঃ হায়াতুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বরিশালটাইমসকে জানান, এ ঘটনা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। তারপরেও এ রকম কিছু হলে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন