২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ‘শূন্য’, ‘বৈষম্য’র অবসান চায় পুলিশ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ, ০৪ জানুয়ারি ২০২০

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন:: ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’- প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আগামীকাল রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ-২০২০। এবারও পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরবেন বাহিনীর কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে এবার পূরণ না হওয়া পুরনো একগুচ্ছ দাবি নতুন করে উপস্থাপন করা হবে প্রধানমন্ত্রীর সামনে।

কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত পুলিশ সপ্তাহে ওঠা যৌক্তিক দাবিগুলোর মধ্যে অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও নানা জটিলতায় পূরণ হয়নি অনেক দাবি। তাই নতুন দাবির সঙ্গে পুরনোগুলোও বাস্তবায়নে এবার গুরুত্বারোপ করা হবে।

এ ছাড়া এবার ২০১৯ সালের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পুলিশ সপ্তাহে চার ক্যাটাগরিতে পদক দেওয়া হবে। পদকের সংখ্যা এবার কমলেও এর জন্য বিবেচনায় বাহিনীর নিম্নস্তরের সদস্যরা প্রাধান্য পেয়েছেন। এবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), বিপিএম-সেবা, রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) ও পিপিএম-সেবা পেয়েছেন ১১৮ পুলিশ সদস্য। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৩৪৯ জন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেকেই অভিযোগ করেন পুলিশ কর্মকর্তাই রাজনৈতিক বিবেচনায় সাধারণত পুলিশ পদক পান। তাই এবার এ অভিযোগ যেন না আসে, সেজন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মরত পুলিশ সদস্যদেরই প্রাধাণ্য দেওয়া হয়েছে। এবার বিভিন্ন ইউনিটের কনস্টেবল ও এএসআই পদমর্যাদার সদস্যরা পদক পাওয়ায় পুলিশের নিম্নস্তরে সন্তুষ্টিও বেড়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ২০১২ সাল থেকে যেসব গুরুত্বপূর্ণ দাবি তোলা হয়েছে এর মধ্যে কমিউনিটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। পুলিশসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন একাধিক সংস্থার জন্য একটি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি বাস্তবায়নের বিষয় প্রক্রিয়াধীন আছে।

এ ছাড়া বিভিন্ন দূতাবাসে পুলিশ নিয়োগ, পৃথক পুলিশ বিভাগ, আবাসন, যানবাহন, ঝুঁকি ভাতা, বিশেষ ভাতা, কর্মঘণ্টা কমানো, পুলিশের মহাপরিদর্শক পদকে ফোর স্টার জেনারেলের মর্যাদা প্রদান, প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি ক্রয়ে সহজশর্তে ঋণসহ সুপারনিউমারারি পদের সংখ্যা বাড়ানো অন্যতম দাবি ছিল। আশ্বাসের পরও এসব দাবি পূরণ হয়নি। এবার এসব দাবি জোরালোভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন দূতাবাসে পুলিশ নিয়োগের বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরা হতে পারে।

গত বছরের পুলিশ সপ্তাহে এ দাবি পূরণে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাধায় এ দাবি পূরণ হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পর বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৪০টিতে লিয়াজোঁ অফিসার হিসেবে এসপিদের নিয়োগ চায় পুলিশ সদর দপ্তর। এর যৌক্তিকতা তুলে ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে।

এ ছাড়া মতামতের জন্য সেই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি ‘বাস্তবসম্মত নয়’ জানিয়ে তা নাকচ করে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠিয়েছে। তাই এ পুলিশ সপ্তাহে দাবিটির পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরা হবে।

পুলিশের আরও একটি দাবি ছিল সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি। বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ ক্যাডারে পদ না থাকায় অনেক যোগ্য কর্মকর্তা পদোন্নতি পান না। যেমন- পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্তদের মাত্র দশমিক ৬ শতাংশ অতিরিক্ত আইজিপি হন। অর্থাৎ প্রতি ৬০০ জন ক্যাডারের মধ্যে মাত্র একজন হন অতিরিক্ত আইজিপি। অথচ অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসে সমমান পদে অনেক বেশি পদ থাকায় তারা নিয়মিত পদোন্নতি পাচ্ছে। তাই পুলিশে এ বৈষম্য নিয়ে সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টির দাবি প্রতিবছরই উঠছে।

পুলিশের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম সরকারি যানবাহন প্রাধিকার প্রোগ্রাম। বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, প্রশাসন ক্যাডার এবং অন্যান্য বাহিনীতে উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত গাড়ি ক্রয়ে সহজশর্তে ঋণ পান। কিন্তু পুলিশ পাচ্ছে না। এ দাবিটিও পূরণ না হওয়ায় এবারও তা তোলা হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ সপ্তাহকে সামনে রেখে সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বাহিনীর মনোবল এবং কর্মস্পৃহা বাড়াতে এবারও বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি তুলে ধরা হবে।

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন