২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

পৌরমেয়রের ভাইয়ের পিটুনিতে সাংবাদিক রক্তাক্ত, হাসপাতালে ভর্তি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:২৩ পূর্বাহ্ণ, ০২ আগস্ট ২০২২

পৌরমেয়রের ভাইয়ের পিটুনিতে সাংবাদিক রক্তাক্ত, হাসপাতালে ভর্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় মুজাহিদুল ইসলাম নাঈম নামে স্থানীয় এক সাংবাদিককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছেন পৌর মেয়রের ছোট ভাই এবং তার অনুসারীরা। সোমবার (০১ আগস্ট) বেলা ৩টার দিকে স্থানীয় বাসস্টান্ডে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় সাংবাদিক মুজাহিদকে স্থানীয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। পরবর্তীতে বিকাল ৫টার দিকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন রাজধানী ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।

মুজাহিদ রাজধানী ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক ঢাকাটাইমস’ পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক এবং আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক। আলফাডাঙ্গার পৌর মেয়র সাইফুর রহমান সাইফার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি।

আহত সাংবাদিক মুজাহিদ বলেন, ‘আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র সাইফুর রহমান সাইফারের ভাই জাপান মোল্যা ৫/৬জন সহযোগী নিয়ে হঠাৎ করে আমার ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা লোহার রড, স্টাম্প ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে আমাকে বেধড়ক মারধর করেন। স্থানীয়রা আমাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে তাদেরকেও পিটিয়ে আহত করে হামলাকারীরা।’

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে- আলফাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে রাজধানী পরিববহনের কাউন্টারে টিকিট কিনতে যান রমিজ নামের এক যুবক। তিনি ঢাকার একটি টিকিটের দাম পরিশোধ করে বাসে ওঠেন। বাস ছাড়ার আগ মুহূর্তে ‘ক্যাশ কাউন্টার’ থেকে বলা হয় রমিজ টিকিটের টাকা দেননি। তাই তাকে ঢাকায় যেতে দেওয়া হবে না।

বিষয়টি জানিয়ে মুজাহিদের সহযোগিতা চান রমিজ।

ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টির মিমাংসা করার কথা বলতেই সাংবাদিক মুজাহিদের ওপর চড়াও হন কাউন্টারের ম্যানেজার জাপান ও তার সহযোগীরা। জাপান স্থানীয় পৌর মেয়র সাইফুর রহমান সাইফারের ছোট ভাই।

এ ব্যাপারে পৌর মেয়র সাইফুর রহমান সাইফার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আলফাডাঙ্গা থেকে সকালে রামপালে এসেছি। তাই বিস্তারিত কিছু জানতে পারিনি। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখছি।’

এ বিষয়ে জাপান মোল্যার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তার ব্যবসার স্থান রাজধানী পরিবহনের কাউন্টারে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সেকেন্দার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি মুজাহিদকে সন্ত্রাসীরা লোহার রড ও স্টাম্প দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার হাত ও পায়ে বেশ জখম হয়েছে। পরে এক্স-রে করা হয়। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসকরা তাকে ফরিদপুর মেডিক্যালে রেফার করেন৷’

স্থানীয় এই সাংবাদিক নেতা বলেন, ‘সাংবাদিক মুহাজিদকে হত্যার উদ্দেশেই ‌এভাবে মারধর করা হয়েছে। স্থানীয়রা এগিয়ে আসায় তিনি প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) জানানো হয়েছে।’

এদিকে স্থানীয় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন সাংবাদিকরা। তারা বলছেন, ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সাংবাদিকরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।

আলফাডাঙ্গা থানা পুলিশের ওসি মো. ওয়াহিদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ঘটনায় জড়িত একজনকে আটক করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখছি।’

ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী-বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা সার্কেল) সুমন কর সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনা জানার পর পরই আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া জড়িত হিসেবে অভিযোগ ওঠা মেয়রের ছোট ভাই জাপান মোল্যাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। আশা করি, দ্রুত তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।’

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে এটা মামলা হিসেবে নেওয়া হবে। সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় যেই জড়িত থাকুক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন