২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

প্রত্যাহার হওয়া এসআই শাহসাব লাগামহীন, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বরিশাল নগরী

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:০০ পূর্বাহ্ণ, ০৯ আগস্ট ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বরিশালে ঘাপটি মেরে থাকা বহুল সমালোচিত ও নানা কর্মকান্ডে বিতর্কিত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহসাব খান ফের বেসামাল হয়ে উঠেছে। খেটেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকার সবগুলো থানায়। সর্বশেষ বিএমপি পুলিশ কমিশনার অফিস হয়ে কীর্তণখোলা নদী পেরিয়ে সাহেবেরহাট বন্দরথানায়। কিন্তু রীতিমত সেখানেও টিকতে পারেনি বেশিদিন। কিছুদিন যেতে না যেতেই এসআই শাহসাবের বিরুদ্ধে ওঠে অভিযোগের পাহাড়।

একাধিক লিখিত ও মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিএমপির দক্ষ ও ন্যায় পরায়ন তথা চৌকস পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান তাকে পুলিশ লাইন্সে ক্লোজড করেন। তাও মাস খানেকের ওপরে হয়েছে। কিন্তু মোটেও থমকে ভড়কে যায়নি শাহসাব। শুধরায়নি বিন্দুমাত্র। বরং পূর্বের তুলনায় অনেকটা বেপরোয়া ও বেসামাল হয়ে ধরাকে সরাজ্ঞান মনে করে নগরী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সে। নিজেকে কখনও বর্তমান সময়ে অপরাধমূলক কর্মকান্ড দমনে আলোচিত ডিবির এসআই, কখন ওসি পরিচয় দিয়ে হাতে অকিটকি নিয়ে মাসোয়ারা, চাঁদাবাজি ঘুষ বাণিজ্যের ধান্দায় মহাব্যস্ত থাকেন এসআই শাহসাব।

সূত্রে জানা গেছে, দখিনের প্রত্যন্ত জনপদ গলাচিপা রাঙ্গাবালির চালিতা বুনিয়া এলাকার বাসিন্দা এসআই শাহসাব ওরফে কালু দারোগা ভাড়া থাকেন নগরীর জর্ডান রোডে। চালচলন বেশ ভুশায় তিনি মস্তবড় পুলিশ অফিসার। কথাবার্তায় মনে হয় তিনি থোরাই কেয়ার করেন না তার উধ্বর্তন কোন পুলিশ কর্মকর্তাকে। স্থানীয়দের কাছে শাহসাবের ভাষ্যমতে দেশের কোন পুলিশই ভাল নয়। সবাই অসৎ ও ঘুষ বাণিজ্যের সাথে জড়িত। সে নিজেই শুধু দুধের ধোয়া তুলসি পাতা।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ কমিশনার অফিস ও পরে বন্দর থানায় কর্মরত অবস্থায় শাহসাব বরিশাল নগরীতে তার আধিপত্য ও প্রভাব ধরে রাখতে নিজেকে কৌশলীভাবে ডিবির এসআই/ওসি হিসাবে মহল বিশেষে জাহির করেন। নগরীর একাধিক ডায়াগনস্টিক ও ফিজিওথেরাপীসহ স্বাস্থ্যসেবা মূলক প্রতিষ্ঠান, মাদক পাড়া এবং অনৈতিক আবাসিক হোটেলে গিয়ে মাসোহারা দাবী করে সে। এমনকি গলাচিপা রাঙ্গাবালি থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে কোন রোগী বরিশালে আসলে কোনভাবে খবর পেলেই সেখানে গিয়ে রোগীর অনুপস্থিতিতে টেস্টের টাকার ওপর ৩০% কমিশন দাবী করে শাহসাব। দাবীকৃত টাকা না পেলে সেইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিষোধাগার সহ নানা কুট কৌশলে ব্যস্ত সময় পার করে বহু অপকর্মের মূলহোতা ও সু-চতুর ধুরন্দার এসআই শাহসাব।

সম্প্রতি ভূক্তভোগী এক ব্যক্তি বিএমপির চৌকস পুলিশ কমিশনারের কাছে শাহসাবের বিরুদ্ধে এক অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ কমিশনার অভিযোগটি আমলে নিয়ে সহকারী পুলিশ কমিশনার প্রসিকিউশন ও ট্রাফিক মাসুদ রানাকে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এছাড়া শাহসাবের বিরুদ্ধে আরও একাধিক অভিযোগ জমা হয়েছে বলে জানা গেছে। তা বিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিন) মোকতার হোসেনসহ পুলিশের উধ্বর্তন কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন বলে নিশ্চিত করেছে সূত্রটি। শুধু তাই নয় শাহসাবের দাম্ভিকতা ও আস্ফালনে সীমা এতটাই চরমে পৌছেছে যে তা তার অপকর্মের কাহিনী শুনলেই আঁচ করা যায়। শুধু বরিশাল নগরীর মাদক-পতিতা পাড়াই নয় তার নিকটতম প্রতিবেশিদের সাথেও দুর্ব্যবহার ও রুঢ় আচরন মহল বিশেষকে ভাবিয়ে তুলেছে।

নগরীর জর্ডান রোডের শাহিন শামিম ভিলার মালিক শামিম এ প্রতিবেদককে জানান, তার ভবনের নিচে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ভাড়া নিয়েছে জনৈক এক ব্যক্তি। তারা কোন অপকর্ম করলে তার দায়-দায়িত্ব ভাড়াটিয়াদের এবং তার দেখাশুনার জন্য কোতয়ালী মডেল থানার ওসি, এসআই, ডিবি সহ প্রশাসনের সংশ্লিস্ট কর্মকর্তারা রয়েছেন। কিন্তু শাহসাব ক্ষমতার অপব্যবহার করে একাধিকবার তার ভবনের মেইনগেট সিলগালা করতে গিয়েছে। এনিয়ে ভবন মালিক, ভাড়াটিয়া বাসিন্দাদের সাথে শাহসাবের একাধিকবার তর্কবিতর্ক ও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।

একাধিক ভূক্তভোগী অভিযোগ করে বরিশালটাইমসকে জানান, এসআই শাহসাব যেখানেই হানা দেয় সেখানেই বলে আসেন ফোনে কোন কথা নয়, সরাসরি এসে দেখা করবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ‘শাহসাব, ওতো একটা পাগল তার ছেড়া, সে পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার পদ মর্যাদার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জিডি করে বসে থাকে। সম্মান তো দূরের কথা কাউকেই পাত্তা দিতে চায় না। নিজেকে মহা ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসাবে জাহির করতে অভ্যস্ত কিন্তু কোথায় টিকতে পারে না’।

সম্প্রতি বরিশালের একজন তরুণ আইনজীবি ও সিনিয়র সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শাহসাব আপত্তিকর মন্তব্য জুড়ে দেয়। এতে মিডিয়াপাড়া ও আদালতপাড়া সহ সর্বমহলে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন