২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

প্রধানমন্ত্রীর ভুয়া এপিএসও মনোনয়ন প্রত্যাশী!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:৩৭ অপরাহ্ণ, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা-৩ (ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর ও ফরিদপুর) আসনে মোট ২০ জন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন বলে দলটির একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।

তবে ২০ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত তিন বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী ব্যক্তিগত সচিব (এপিএস) সাইফুজ্জামান শেখরের পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক শহিদুল ইসলাম নয়ন ওরফে ফটিক (৩৩)।

ফটিক ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামের মৃত গরিবুল্লার ছেলে। বর্তমানে তিনি ভাঙ্গুড়া পৌর সদরের কালিবাড়ী গুচ্ছগ্রামে বসবাস করেন।

এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ভাঙ্গুড়া উপজেলার বাসিন্দা বর্তমান সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মকবুল হোসেন, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহিম পাকন, সদস্য অ্যাডভোকেট শাহা আলম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপ কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আলীম, ভাঙ্গুড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমির হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক বাকি বিল্লাহ এবং বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক বায়েজিদ দৌলা বিপু।

ফরিদপুর উপজেলা থেকে মনোনয়ন ফর্ম যাঁরা কিনেছেন তাঁরা হলেন ফরিদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সরকার, সহ-সভাপতি ও পৌর মেয়র খ ম কামরুজ্জামান মাজেদ, সাধারণ সম্পাদক আলী আশরাফুল কবির ও প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ।

এ ছাড়া চাটমোহর থেকে মনোনয়ন কিনেছেন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল হামিদ মাস্টার, সদস্য অ্যাডভোকেট শাহা আলম, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শাখার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আতিকুর রহমান, ব্যবসায়ী রবিউল আহমেদ, গোলাম সরোয়ার, আলাউদ্দিন আল আজাদ এবং শাহিদুল ইসলাম।

জানা গেছে, শহিদুল ইসলাম নয়ন আশির দশকের মাঝামাঝিতে উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের হতদরিদ্র গ্রাম পুলিশ গরিবুল্লা-জয়গন দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারের আর্থিক দৈন্যতার কারণে তার বাবা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ালেখা অবস্থায় তাকে অন্যের বাড়িতে দিনমজুরের কাজে লাগিয়ে দেন। বছর কয়েক পড় শহিদুলের বাবা মারা গেলে তার মাও অন্যের বাড়িতে কাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা দুই শতক আয়তনের বাড়ি প্রতিবেশির কাছে বিক্রি করে দিয়ে ভাঙ্গুড়া পৌর সদরের সরকারি প্রকল্পের গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় নেন।

তখন থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত শহিদুল ভ্যানগাড়ি চালিয়ে ও মা জয়গন অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন। তবে মাঝে মধ্যেই শহিদুল ছিচকে চুরি চামারির অভিযোগে এলাকাবাসীর হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে স্থানীয় পৌর কাউন্সিলরসহ অনেকে জানান।

এরপর ২০১২ সালের শেষের দিকে উপজেলার কাশিপুর ও পারভাঙ্গুড়া গ্রামে রাতের আধারে ছিনতাই করতে গিয়ে এলাকাবাসীর ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যান শহিদুল। এ সময় তার অন্য সহযোগী রাজীব ও আব্দুল আলীমকে এলাকাবাসী আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। তখন থেকে দীর্ঘ দুই বছর তিনি আর এলাকায় আসেননি।

জানা যায়, শহিদুল এ সময় ঢাকায় প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নানা কুকর্ম করে কোটি টাকার মালিক বনে যান।

হঠাৎ ২০১৫ সালের শুরুতে শহিদুল নতুন রূপে ভাঙ্গুড়ায় ফিরে আসেন। শুরুতেই তিনি ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গুচ্ছগ্রামে দোতলা ভবন নির্মাণ করেন। এরপর তিনি এলাকার বিপথগামী যুবকদের নিয়ে নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুরু করেন। তিনি নিজেকে কখনো পাবনা জেলা বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সভাপতি আবার কখনো জেলা পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি বলে দাবি করেন। তবে স্থানীয় দুয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ছাড়া অন্যরা তাকে সবসময়ই অবজ্ঞা করতেন। শহিদল এসব পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন কাজের তদবির করার নামে এলাকার মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন বলেও অভিযোগ ওঠে।

ওই বছরের ১৬ আগস্ট রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকার বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে থেকে শহিদুলকে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ আটক করে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুনতাসিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, ফটিক প্রধানমন্ত্রীর এপিএস সাইফুজ্জামান শেখরের হারিয়ে যাওয়া বাংলালিংক সিম (০১৯১১১১২২১৯) ও একই নম্বরের আদলে আরেকটি গ্রামীণফোনের সিম ব্যবহার করে বিভিন্ন কাজের তদবির করে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। ওই ঘটনায় সাইফুজ্জামান শেখর শেরে বাংলা নগর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে ফটিককে আটক করে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

ফটিকের এক সময়ের অন্যতম সহকারী জুয়েল হাসান বলেন, ‘আমরা মাসিক বেতনে তার চাকরি করতাম। তিনি কি করতেন সেটা আমরা জানতাম না। তবে যখন জেনেছি তিনি ঢাকায় প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আয় করেন তখন আমরা অনেকেই তার চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।’

শহিদুলের এলাকার ভাঙ্গুড়া কালিবাড়ী মহল্লার পৌর কাউন্সিলর আব্দুস সাত্তার বলেন, শহিদুল ওরফে ফটিক বাটপারী করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে এলাকায় একাধিক চুরির অভিযোগ রয়েছে। এখন সে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লোকমান হোসেন বলেন, শহিদুলের মনোনয়ন ফর্ম কেনার বিষয়টি খুবই হাস্যকর। যদিও গণতান্ত্রিক দেশ তবুও এতে আওয়ামী লীগকে ছোট করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমি এ ঘটনাকে ধিক্কার জানাচ্ছি।’

কথা বলতে প্রধানমন্ত্রীর ভুয়া এপিএস শহিদুল ইসলাম নয়ন ওরফে ফটিকের মোবাইল ফোনে দুই দিনে কয়েকবার কল করলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।’

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন