১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

প্রধানমন্ত্রীর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠান নির্মাণেও কোটি টাকার দুর্নীতি!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:০৩ অপরাহ্ণ, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন:: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মস্থান গোপালগঞ্জ জেলায় একটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণে দুর্নীতি প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল এর কার্যালয়। খোদ প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার মাতা ফজিলাতুননেসা মুজিবের নামে চক্ষু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট আওতায় চারতলা ভবন নির্মাণে ১ কোটি ৮০ লাখ ৪১ হাজার ৯৬৫ টাকার এ দুর্নীতি সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপিত হলে ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করা হয়। এই অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য মন্ত্রণালয় ও প্রধান প্রকৌশলী সুপারিশ করলেও অডিট বিভাগ না রাজি দিয়েছে।

রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারী হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১২তম বৈঠক এ থেকে এসব তথ্য জানা যায়। ২০১১-১২ আর্থিক সালের নিরীক্ষায় এই দুর্নীতি ধরা পড়ে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি স্বাতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজী বৈঠক শেষে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মস্থান গোপালগঞ্জ জেলায় প্রতিষ্ঠান নির্মাণও দুর্নীতির বাইরে নয়। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জেলা। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠান। তাই দুর্নীতিবাজদের লজ্জা থাকা উচিত। এজন্য কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

বৈঠকে উত্থাপিত কার্যপত্র থেকে জানা যায়, শেখ হাসিনার মাতা ফজিলাতুননেসা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের নার্সদের জন্য ইউনিটের ৮০০ বর্গফুটের কোয়ার্টার নির্মাণকাজে দ্বিতীয় দরপত্রদাতা কে রেস্পন্সিভ করে প্রথম দরদাখীলকারীকে সংশোধন করে দ্বিতীয় নিম্নদর অপেক্ষা উচ্চমূল্যে চুক্তি সম্পাদনের করা হয়েছে। এতে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ ৪১ হাজার ৯৬৫ টাকা। নিরীক্ষায় দেখা যায় বর্ণিত কাজে মো. আব্দুল খালেক ৮ কোটি ৬৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪২ টাকা সর্বনিম্ন দরদাতা ছিলেন। দ্বিতীয় দরদাতা EHA DELTA এন্ড বেনজির ক্‌ন্সন্ট্রাকশন এর দরপত্র মূল্য ৯ কোটি ৭৯ লাখ ৬৩ হাজার ৮০ টাকা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ অনিয়মিতভাবে দ্বিতীয় দরপত্র নন রেস্পন্সিভ করে দরপত্র মূল্য সংশোধন করে দ্বিতীয় দরপত্র মূল্য অপেক্ষা উচ্চ ধরে মোহাম্মদ আব্দুল খালেক এর সাথে ১০ কোটি ৬৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭ টাকা চুক্তি সম্পাদন করে। তবে দরপত্র সমুহ নিরীক্ষায় তা উপস্থাপন হয়নি।

পিপিআর/২০০৯ এর বিধি ৯৮ (৬) ও ৯৮ (১২) অনুযায়ী অতি গুরুত্বপূর্ণ আপত্তিকর বলে গণ্য হবে যদি কোনো কার্যক্রমে কাজের পরিমাণ বা হিসাব সম্বলিত বিবরণীর কোনো আইটেমের মূল্য প্রদান না করা হয়, তাহলে ক্রয় মূল্য অন্যান্য আইটেমের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করবে এবং উক্ত কারণে দরপত্র মূল্য পরিবর্তন করা যাবে না। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬ এর আইন (৬৪)(১) অনুযায়ী ক্রয় কর্মকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী এই আইন বিধি লংঘন করে কোনো কার্য ক্রয় করতে পারবেনা। কিন্তু তারা এই আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন।

এই নিয়মের জবাব চাইলে যে জবাব পাওয়া যায় নিরীক্ষা বিভাগ না প্রত্যাখ্যান করে বলে-জবাব গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ জবাব এর সমর্থনে রেকর্ড পত্রাদি নিরীক্ষা উপস্থাপন করা হয়নি। উক্ত অনিয়মের বিষয়ে ২০০৩ সালের ৪ আগস্ট সচিব মহোদয় বরাবর অগ্রিম অনুচ্ছেদ জারি করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে ১ অক্টোবর তাগিদ পত্র ইস্যু করা হয় এবং সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বরে আধা সরকারি পত্র জারি করা হয়। সর্বশেষ জবাবে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রধান গণপূর্ত অধিদপ্তরের কার্যালয় এই অডিট নিষ্পত্তির আবেদন করে। সেই সূত্র ধরে মন্ত্রণালয়ও অনুরোধ করে। কিন্তু অডিট অধিপ্তর তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

নিরীক্ষার সুপারিশে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ পূর্বক সংশ্লিষ্টদের নিকট হতে এই টাকা আদায় করা প্রয়োজন।

জানা যায় বৈঠকে এই অডিট আপত্তিসহ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাতটি অডিট আপত্তির উপর আলোচনা-পর্যালোচনা হয়। অনিষ্পন্ন আপত্তিগুলোর ক্ষেত্রে আর্থিক দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে। এছাড়া দায়ীদের কাছ থেকে দ্রুততার সাথে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে সভাপতি বলেন, চলমান প্রকল্পগুলোতে যেন দুর্নীতি না হয় সেজন্য টেন্ডার প্রক্রিয়ায় শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ঘোষণা করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মা যেন শান্তি পায় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ যেন উজ্জ্বল হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।

মো. রুস্তম আলী ফরাজীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ, মো. আফছারুল আমীন, মো. শহীদুজ্জামান সরকার, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, জহিরুল হক ভূঞা মোহন, আহসানুল ইসলাম (টিটু), মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, ওয়াসিকা আয়েশা খান, মোঃ জাহিদুর রহমান উক্ত বৈঠকে অংশ নেন।

এছাড়াও বৈঠকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, সিএজি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন