২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

প্রবাসে গিয়ে মারা গেলেন বরগুনার আউয়াল, লাশ আনতে পারছে না পরিবার

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৫০ অপরাহ্ণ, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২

প্রবাসে গিয়ে মারা গেলেন বরগুনার আউয়াল, লাশ আনতে পারছে না পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের খোরশেদ হাওলাদারের ছেলে আউয়াল হাওলাদার (৩৫) জীবিকার সন্ধানে গত এক বছর আগে সৌদি আরবে যান। গত ১০ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। এদিকে টাকার অভাবে তার লাশ দেশে আনতে পারছেনা পরিবার। বর্তমানে তার পরিবারে শোকের অন্ধকার ছায়া নেমে এসেছে।

 

পারিবারিক সূত্রে জানা যায় , আউয়াল হাওলাদার দীর্ঘদিন ধরে বেকার থাকায় গত ২০২১ সালের ২১ আগস্ট বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), কৃষি ব্যাংক, আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ করে সৌদি আরবে যান। সেখানে কাজ করে বাড়িতেও কিছু টাকা-পয়সা পাঠাতে থাকেন।

 

মৃত্যু আউয়ালের একমাত্র ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আরিফ কেঁদে কেঁদে বলেন, কয়েক দিন হয়েছে আমার আব্বা ফোন দেয় না। মানসে কয় আমার আব্বা নাকি মইরা গেছে! আমার আব্বা মরে নাই। যদি মইরা যাইত তাইলে আব্বার লাশ বাড়িত আনতে এত দেরি লাগে ক্যা, আমনেরা সবাই আমার লগে মিছা কতা কইতাছেন, আমারে কান্দাইয়া আমনেগো লাভ কী।

 

এসব বলে মৃত্যু আউয়ালের ছেলে অচেতন হয়ে পড়ে। কোনো মানুষ দেখলে এভাবেই আহাজারি শুরু করেন আউয়ালের অবুঝ শিশুরা। অপর দিকে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া মৃত আউয়ালের মেয়ে মারিয়া আহাজারি করে বলেন, আমার আব্বারে আইন্না দেন, আব্বার মুখটা আমারে একবার দেহান, আমার আব্বা সৌদি গেছে। গত মাসেও টাহা পাডাইছে। আব্বার সঙ্গে প্রত্যেকদিন কথা না কইলে আমার রাইতে ঘুম আয় না। এসব বলে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন তার একমাত্র মেয়ে।

 

মৃত্যু আউয়ালের প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট মেয়ে কারিমা নির্বাক হয়ে বসে থাকেন। বাবার লাশ কখন আসবে পথে দিকে চেয়ে আছেন আউয়ালের অবুঝ শিশুরা ও তার পরিবারের স্বজনরা।পরিবারের উপার্জনক্ষম এক মাত্র ব্যক্তির মৃত্যুতে ২ মেয়ে ১ ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীর বুকে করে কেঁদে কেঁদে দিনাতিপাত করছেন নিহত আউয়ালের স্ত্রী খাদিজা (৩০)।

 

আউয়ালের পিতা খোরশেদ হাওলাদার বলেন, গত এক বছর পূর্বে ধার দেনা করে আউয়ালকে বিদেশে পাঠাই। কিন্তু বছর না যেতেই আমার ছেলে স্ট্রোক করে সেখানে মারা গেল। আমি কিছুই চাই না, এখন শুধু ছেলের লাশ চাই। ওর লাশটা যেন আমাদের মসজিদের পাশে কবর দিতে পারি। ছেলের লাশটা পাইলেও কিছু সান্ত্বনা পাইতাম। বিদেশ থেকে ছেলের লাশটারে আনার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চাই।

তিনি আরও বলেন, আউয়ালের লাশ সৌদি আরবের আল কাসিম জেলার গুরাইদার মারগাজী হাসপাতালে রয়েছে। আউয়াল সৌদি গিয়ে ফ্রি ভিসায় কাজ করতেন। যেদিন আউয়াল মারা যান সেদিন সৌদি নাগরিক সলেমান দাখাইনের কাজ করেছিল।

 

কিন্তু আউয়ালের নিয়োগদাতা সলেমান দাখাইন না হওয়ায় লাশ দেশে না পাঠিয়ে সে হাসপাতালে রেখে দিয়েছেন। আমরা সৌদি আরবে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে জানানো হয়, লাশ আনতে হলে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা দিতে হবে। নতুবা লাশ পাঠাতে পারবে না।

সবকিছু বিক্রি ও ধারদেনা করে ছেলেকে বিদেশ পাঠাইছি। ধারদেনাই পরিশোধ করা হয়নি। কিভাবে এত টাকা জোগাড় করব। কোথায় পাব এত টাকা।এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভারপ্রাপ্ত (ইউএনও) এসএম সাদিক তানভীর জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে অসহায় পরিবারটিকে সব প্রকার সহযোগিতা করা হবে। মৃত্যু আউয়ালের লাশটি দেশে আনার জন্যে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করবেন বলে তিনি জানান। গত ১০ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন আউয়াল হাওলাদার। হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে তিনি সেখানে মারা যান।

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন