২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

প্রেমিকাকে বাগদানও করেছিলেন বাউফলের পাভেল, কিন্তু…

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:১১ পূর্বাহ্ণ, ০৫ নভেম্বর ২০১৮

২২ বছরের যুবক শেখ ইসলাম পাভেল। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতেন। ফ্যাশন, খাবার ও চলাফেরায় সবসময় ব্যতিক্রমী ছিলেন। তাই বন্ধুরা তাকে হিরো বলে ডাকতেন। লেখাপড়া করতেন কবি নজরুল কলেজে। রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। স্বপ্ন ছিল একদিন বড় রাজনীতিবিদ হবেন। কিছুদিন ধরে ভালোবাসতেন এক মেয়েকে।

ভালোবাসার মানুষটিকে জীবন সঙ্গী করতে গোপনে বাগদানও করে রেখেছিলেন। ইচ্ছে ছিল পারিবারিকভাবেই ক’দিন পর তাকে বিয়ে করে ঘরে তুলবেন। কিন্তু পাভেলের সব স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। নিজের বোনকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাকে জীবন দিতে হলো। তিনি এখন চলে গেছেন না-ফেরার দেশে।

পাভেলের বন্ধুরা জানান, তার বাবার নাম মনির হোসেন। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুরে তাদের গ্রামের বাড়ি । পরিবার নিয়ে তিনি শ্যামপুর থানার মাজারগেট এলাকায় থাকতেন আর ট্র্যান্সপোর্ট এজেন্সির ব্যবসা করতেন। স্ত্রী ছাড়া এক মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে তাদের সংসার। পাড়ার বখাটে ছেলেরা প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত পাভেলের ছোট বোনকে। প্রথম প্রথম অনেকবার সাবধান করেছিলেন তাদের। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বখাটেরা আরো বেশি উত্ত্যক্ত করতে থাকে তার বোনকে। বাড়ির সামনে গিয়ে বখাটেরা দল বেঁধে আড্ডা দিত। ছোট-বড় ভেদাভেদ না করেই সিগারেট খেত। ভাই হিসেবে এসব মেনে নিতে পারেননি। বখাটেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাই তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই বখাটেরাই তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে- শনিবার রাতে নিজ বাসার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন পাভেল ও তার হুবু স্ত্রী। সেখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন তার বোনকে উত্ত্যক্তকারী তুহিন, শাহীন ও মনির। তারা তিনজনই সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলেন। এসময় পাভেল এসে তাদের বলে সিনিয়রের সামনে তারা কেন এভাবে সিগারেট খাচ্ছে। তখন দুপক্ষের মধ্যেই কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে পাভেল তার বোনকে উত্ত্যক্ত করার বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে। উভয়ের মধ্যে তুমুল ঝগড়াঝাটির একপর্যায়ে ক্ষেপে যায় পাভেল। তুহিন নামে একজনের গালে থাপ্পড় দেন। পরে তুহিন ও তার সঙ্গীরা আরো কয়েকজনকে ডেকে নিয়ে আসে। সবাই মিলে পাভেলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে।

পাভেলের বন্ধু বিল্লাল হোসেন বলেন, ঘটনার সময় আমি, তার হবু স্ত্রী ও এক ছোট ভাই সঙ্গে ছিলাম। তুহিন, শাহীন ও অন্যরা যখন পাভেলকে ছুরি দিয়ে আঘাত করছিল তখন আমি দৌড়ে গিয়ে মানুষকে ডাকি। কিন্তু আসার আগেই তারা তাকে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাত পৌনে ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে তাকে সারা রাত আইসিইউতে রাখা হয়েছিল।সকাল ৯টার দিকে তিনি মারা যান।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন- শুধু বোনকে উত্ত্যক্ত করা নয় হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না সেটা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। কারণ, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে আধিপত্য বিস্তার, জুনিয়র-সিনিয়র দ্বন্দ্ব থাকতে পারে। আমরা ভুক্তভোগির পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

তিনি বলেন- এ ধরনের ঘটনা ক্ষেত্রে পুলিশের পাশাপাশি অভিভাবকদের দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ, সন্তানেরা কোথায় কী করছে সেদিকে নজরদারি না করলে তারা বিপদগামী হয়ে যাবে।’

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন