২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

ফের সাতলার গাঁয়ে লাল শাপলার হাতছানি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:০৭ অপরাহ্ণ, ২৮ আগস্ট ২০১৮

বরিশালের জেলার উজিরপুর উপজেলার আরেকটি ঐতিহ্যের নাম লাল শাপলা। উপজেলার সাতলা ইউনিয়নে উত্তর সাতলা গ্রামে প্রত্যেক বছরের ন্যায় এবারও প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো লাল শাপলার অবারিত রঙ্গিন রুপে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যাবে।

উত্তর সাতলা গ্রামটি ‘শাপলা বিল’ নামেই খুব বেশি পরিচিত। প্রায় এক হাজার ছয় শত হেক্টর জমি জুড়ে এই বিলের অবস্থান। সাধারণত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে এ বিলে লাল শাপলা ফুল ফোটে।

আর ওই বিলের জলে ফুটন্ত লাল শাপলার হাতছানিতে জেলা শহর ছাড়িয়ে এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রকৃতি প্রেমিরা আসতে শুরু করেছেন। অতি শীঘ্রই এটি দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হতে পারে বলে স্থানীয়দের ধারনা। ইতিমধ্যে স্থানীয়রা ওই শাপলা বিলের মাঝে পর্যটকদের ভোজন বিলাসের জন্য একটি বড় ধরনের রেস্তোরা তৈরি করছেন বলে জানা গেছে।

ঐতিহ্যবাহি এ শাপলা বিলের চারপাশে গাঢ় সবুজের পটভ‚মিতে যেন বাংলার এক মুখরিত “লাল স্বর্গ”। দূর থেকে সবুজের মধ্যে লাল রঙ দেখে দুরূহ হয়ে উঠার মতো অবস্থা। দূরত্ব কমার সাথে সাথে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ফুলের অস্তিত্ব। আগাছা আর লতা পাতায় ভরা বিলের পানিতে ফুটন্ত লাল শাপলা সত্যিই সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি।

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের ফুটন্ত লাল শাপলা দেখে সত্যিই চোখ জুড়িয়ে যায়। মনোমুগ্ধকর সাতলা বিলের শাপলা দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন ভ্রমন পিপাসু প্রকৃতি প্রেমিরা। প্রত্যন্ত অঞ্চলের এ বিলের লাল শাপলাকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন চিত্র। ফলে দিন-দিন দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠছে সাতলার ‘শাপলা বিল’।

বরিশাল শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের উত্তর সাতলা, পাশ্ববর্তী আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ও খাজুরিয়া গ্রামের এলাকা নিয়ে এ বিলের অবস্থান। বছরের অধিকাংশ সময় জলমগ্ন এ বিলের যতো ভেতরে এগুতে যাবেন ততোই লাল শাপলার আধিক্য। এক পর্যায়ে মনে হবে শাপলার স্বর্গ রাজ্যে বন্দি হয়ে গেছেন আপনি।

ঐতিহ্যবাহি এ বিলের মোট আয়তন সম্পর্কে স্থানীয়দের কারোরই জানা নেই। তবে স্থানীয় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর বলছে প্রায় ১ হাজার ৬ শ’ হেক্টর জমি নিয়ে বিস্তৃীর্ন এ বিল। শাপলার বিলে ঠিক কত বছর আগ থেকে এভাবে শাপলা জন্মাতে শুরু করেছে সে তথ্যও সঠিকভাবে দিতে পারেননি কেউ।

তবে স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, তাদের জন্মের পর থেকেই এ বিলে এভাবে শাপলা ফুটতে দেখছেন তারা। তাছাড়া শাপলার বিল শুধু সৌন্দর্য্য নয় বিল থেকে শাপলা তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অসংখ্য পরিবার।

বিল সংলগ্ন গ্রামের একাধিক ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বছরের ছয় মাস তারা অনেকেই এই বিলের শাপলার ওপর নির্ভরশীল। বিল থেকে শাপলা তুলে ও মাছ শিকার করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন ওই এলাকার শতাধিক পরিবার।

স্থানীয় যুবক মো. কলিমুলøাহ্ জানিয়েছেন, ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে শীতের মৌসুমে যখন পানি কমে যায় তখন সব শাপলা মরে যায়। ওই সময় কৃষকরা এখানে ধান চাষ করেন। তবে একই সাথে ধান ও শাপলার এই সহাবস্থান আর কোথাও আছে কি না সন্দেহ।

বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত শাপলা তিন প্রকারের হয়ে থাকে। এর মধ্যে সাদা, বেগুনী (হুন্দি শাপলা) ও অন্যটি লাল রঙয়ের। সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলা সবজি হিসেবে ও লাল রঙ্গের শাপলা ঔষধী কাজে ব্যবহৃত হয়। শাপলা খুব পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি। সাধারণ শাক-সবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুন অনেক বেশি। শাপলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। শাপলায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আলুর চেয়ে সাতগুন বেশি। যা মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী।

15 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন