২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

ফেসবুক গুগল দুই হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে অবৈধ চ্যানেলে

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:১২ পূর্বাহ্ণ, ২৪ জুন ২০১৯

ফেসবুক, গুগল, হোয়াটসঅ্যাপ, ইয়াহু, ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইনভিত্তিক ডিজিটাল মার্কেটিং কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে বিজ্ঞাপন বাবদ প্রতিবছর প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় এবং সরকার অনুমোদিত ব্যাংকের মাধ্যমে পেমেন্ট ট্রান্সফারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় এই পুরো টাকাটাই যাচ্ছে অবৈধ চ্যানেলে। নন-ব্যাংকিং চ্যানেলে এই টাকা পরিশোধ হওয়ায় এ বিষয়ে সরকারের কাছে কোনো তথ্য নেই। এমনকি এর বিপরীতে কোনো রাজস্বও পায় না সরকার। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার ইনফরমেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টার (বেসিস) খোদ এ অভিযোগ করেছে। নন-ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পরিশোধ ঠেকাতে তারা ডিজিটাল মার্কেটিং কোম্পানিগুলোর জন্য পৃথক ক্রেডিট কার্ড চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, ফেসবুক, গুগলের মতো ডিজিটাল প্লাটফর্মে বিজ্ঞাপন বাবদ ঠিক কী পরিমাণ টাকা দেশ থেকে চলে যাচ্ছে, সে ব্যাপারে সরকারের কাছে কোনো তথ্যই নেই। কারণ এসব পেমেন্ট হচ্ছে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে। এ কারণে কোনো রাজস্বও পাচ্ছে না সরকার। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পেমেন্ট বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে যাতে পরিশোধ করা যায়, সেই ব্যবস্থা নিতে আমরা পৃথক ক্রেডিট লাইন চালুর জন্য আবেদন করেছি সরকারের কাছে। এতে ব্যয়িত অর্থের বিবরণী সম্পর্কে একদিকে যেমন ব্যাংকের কাছে তথ্য থাকবে, তেমনি সরকারও নজরদারি করতে পারবে। ব্যাংকিং চ্যানেলে পেমেন্ট পরিশোধ হওয়ায় সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে। সূত্র জানায়, ২৮ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে এ বিষয়ে চিঠি পাঠায় বেসিস। সেখানে তারা বলেছে, ‘ইতিপূর্বে সফটওয়্যার ও আইটিইএস কোম্পানির জন্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ক্রয় যেমন : সফটওয়্যার টুলস্, সার্ভার, ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি বাবদ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ব্যয় করার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অনুরূপভাবে আরেকটি ক্রেডিট লাইন অনুমোদন করা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো আলাদা একটি ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করবে শুধু ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পেমেন্ট পরিশোধের জন্য। এক্ষেত্রে ব্যাংক আবেদনকারীর সামর্থ্য অনুযায়ী ক্রেডিট কার্ডের ক্রেডিট লিমিট নির্ধারণ করে দেবে।

জানা গেছে, গত বছরের ৪ এপ্রিল এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে সংবাদপত্রশিল্প মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো) নেতারা ফেসবুক, ইউটিউব ও গুগলকে করের আওতায় আনার কথা বলেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাজেটে এটি কার্যকর করার আশ্বাস দেয় এনবিআর। পরে গত বছরের মে মাসে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ফেসবুক, গুগলের মতো ডিজিটাল প্লাটফর্মে বিজ্ঞাপনের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করে এনবিআর। ওই সময় এ বিষয়ে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) কমিশনার মো. মতিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, টিভি ও পত্রিকার মালিকসহ বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকেই ডিজিটাল প্লাটফর্মে বিজ্ঞাপন দিলেই ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট দিতে হবে। ব্যাংকগুলোয় পাঠানো চিঠির বিষয়ে তিনি বলেন, ফেসবুক, গুগল ও ইউটিউবে দেওয়া বিজ্ঞাপনের অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হলে তাদের ১৫ শতাংশ ভ্যাট কেটে রাখার জন্য আমরা চিঠি দিয়েছি। পরে তারা এই অর্থ আমাদের কাছে জমা দেবে। প্রাথমিকভাবে ব্যাংকগুলোই বিজ্ঞাপনদাতার কাছ থেকে ভ্যাটের টাকা কেটে রাখবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফেসবুক, গুগলের বাংলাদেশ থেকে অর্জিত আয়ের ওপর কর বসানোর চেষ্টা করেছিল এনবিআর। তবে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর অফিস বাংলাদেশে না থাকায় তাদের ওপর সরাসরি কর আরোপ করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে ফেসবুক, গুগলের পরিবর্তে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়। ব্যাংকিং চ্যানেলে পেমেন্ট করলেই এই করারোপের নির্দেশনা রয়েছে। এর ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকিং চ্যানেলে যাচ্ছেই না। তারা বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে অনলাইনেই পেমেন্ট করে দিচ্ছে, অনেকে আবার অবৈধ হুন্ডি সুবিধা নিচ্ছে, যার হিসাব পাচ্ছে না সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো অবশ্য জানাচ্ছে, বাংলাদেশে ব্যবসারত কোনো প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি যদি বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞাপন দিতে চান তাহলে বিজ্ঞাপন দেওয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। ২০১৫ সালে এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে বলা হয়, বিদেশি কোনো ইলেকট্রনিক বা অনলাইন মিডিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন সংক্রান্ত নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে। বিদেশি কোনো ইলেকট্রনিক বা অনলাইন মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন প্রচারের এই নির্দেশিকায় ফেসবুক, গুগল, ইউটিউবের মতো কোম্পানিগুলোকেও ফেলা যায়। তবে এ ধরনের ডিজিটাল প্লাটফর্মে বিজ্ঞাপনী পেমেন্ট পরিশোধ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে চায় না অনেকেই। তারাই নন-ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ প্রেরণ করে।

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন