২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

বখাটেদের উৎপাতে ঝরবে আর কত প্রাণ ?

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:৪৪ অপরাহ্ণ, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

আহমেদ জালাল : বখাটের উৎপাতে স্কুলে সকলের প্রিয় পিরোজপুরের রুকাইয়া আক্তার রুপার (১৫) জীবন কেড়ে নিলো। অথচ ওই ইফটিজার দুই বছর পূর্বে রুপাকে উত্যক্ত করে। সেই সময় থানায় অভিযোগ করতে গেলে স্থানীয়দের মধ্যস্থতায় সে (ইফটিজার) অপরাধ স্বীকার করে ভবিষ্যতে এ ধরণের কাজ করবে না বলে মাফ চায়। রুপার বাবা রুহুল মুন্সি সাংবাদিকদের জানান- দুই বছর পর ফের সা¤প্রতিক সময়ে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায়। তিনি জানান-গত ৩০ আগস্ট শুক্রবার বাসায় ফিরে ঘটনাটি পরিবারকে জানায় রুপা । এক্ষেত্রে তৎকালীন সময়ে থানার দায়িত্বে থাকা কর্তাদেরও আইনের আওতায় আনা হোক। প্রশ্ন হচ্ছে- কেন একজন ইফিটজারকে চিহিৃত করার পরও তাকে মাফ করে দেয়া হলো ? তখন কী ইফটিজার গোপন বুনিবনায় থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে পাড় পেয়ে যায় ? সেক্ষেত্রে পুলিশের ভাবমূর্তি উদ্ধার কী তিমিরেই থেকে যাবে ? অসাধু ধান্ধাবাজ,চাঁদাবাজ পুলিশের কারণেই পুরো পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে কিনা ? এখনও ডিজিটাল যুগে কোনা কোনো পুলিশ কর্তা যৌনহয়রানীকারীদের প্রথম দফায় মাফ করে দিয়ে আরো যেনো উৎসাহিত করে ইফটিজিংসহ নানা অন্যায় অপকর্মে উৎসাহিত করছে।

অনুরূপ বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থানাধীন কলেজ ছাত্রী দুই বোনকে অব্যাহত যৌনহয়রানী করে আসলেও থানা পুলিশের ভূমিকা চরম প্রশ্নবিদ্ধ। স্থানীয় থানা পুলিশ শুরু থেকেই ইফটিজার ও আশ্রয়প্রশ্রয়দাতােদর সঙ্গে গোপন বুনিবনায় গভীর সখ্যতা রেখে চলছে। উল্টো নানাবিধ কৌশলীপন্থায় ইফটিজার ও ইফটিজারদের আশ্রয়প্রশয়দাতাদের উসকে দিচ্ছে। কলেজ ছাত্রী দু’ বোনকে হয়রানীর বিষয়টি বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি’র নখদর্পনে গেলে, তিনি তাৎক্ষনিক ফোনে ঝালকাঠি জেলা পুলিশ সুপারকে হয়রানীর বিষয়টি জানান। একইসঙ্গে ঝালকাঠি পুলিশ সুপারকে ইফটিজার সবুজ ও তার আশ্রয়প্রশ্রয়দাতা শাহীনকে পাকড়া করাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। পুলিশ সুপার বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম মাহমুদ হাসান (সদর সার্কেল)কে দায়িত্ব প্রদান করেন। বিস্ময়কর! ঝালকাঠি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম মাহমুদ হাসান (সদর সার্কেল) হয়রানীর শিকার কলেজ ছাত্রী দুই বোন এবং ইফটিজার ও তার পরিবারের সদস্যদের সদর সার্কেল অফিসে উপস্থিত থাকার দিনক্ষন নির্ধারণ করেন। ওই নির্ধারিত দিনক্ষন থেকে হয়রানীর শিকার কলেজ ছাত্রী দুই বোন দুই দিন ধরে ঝালকাঠি সদর সার্কেল অফিসে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু অভিযুক্ত ইফটিজারকে আসতে বললেও দু’দিনে আসেনি। পরের দিন অর্থাৎ তিন দিনের মাথায় ইফটিজার ও তার পরিবারের সদস্যরা সদর সার্কেল অফিসে আসেন। সেদিনও কলেজ ছাত্রী দু’ বোন ঝালকাঠি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এর কথায় দ্রুত সার্কেল অফিসে উপস্থিত হন। বিচিত্র ! ভাবা যায় ? ইফটিজার আসবে, আর দিনভর সদর সার্কেল অফিসে বসে থাকেন হয়রানীর শিকার বিচার প্রার্থী কলেজ পড়ুয়া দুই বোন।

অত:পর বিষয়টি প্রথমবারের মতো মাফ করে দেয়ার জন্য বেশ কয়েকবার হয়রানীর শিকার কলেজ ছাত্রী দু’বোনকে কৌশলীপন্থায় এক ধরণের মগজ ধোলাই করেন ঝালকাঠি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল)এম এম মাহমুদ হাসান। যিনি পুলিশ বিভাগে পেশাগত দায়িত্ব পালনে জনমনে বেশ প্রশংসিত। শত শত লোকের কান্না থামিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়েছেন সৎ দক্ষ জনগণের সেবকের ভূমিকায় অবতীর্ন হয়ে জনমনে বেশ প্রশংসিত এক পুলিশ কর্মকর্তা। পেশাগত দায়িত্ব পালনে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে যিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্যান্য উচ্চতায়। অবহেলিত আর নিগৃহিত জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়ে সকলের ধারণা পাল্টে দিয়েছেন তিনি। কেন যে এই চৌকশ পুলিশ কর্মকর্তা ইফটিজার ও তার শেল্টারদাতাদের বিষয়ে নিরব ভূমিকা পালন করেছেন, এ নিয়ে অভিজ্ঞমহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। এবং প্রাথমিকভাবে ইফটিজারকে মাফ করে দেয়ার জন্য হয়রানীর শিকার কলেজ ছাত্রী দু’বোনের সন্মতি আদায়ে একাধিকবার তাদেরকে বলেন। বলা হয়- পরবর্তীতে হয়রানীর শিকার হলে বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে হয়রানীর শিকার ছাত্রীদের আশ্বস্ত করেন। সদর সার্কেল অফিস থেকে বাড়ি আসার পর থেকে নানা কায়দায় কলেজছাত্রী দু’বোনকে হয়রানী করে আসছে ইফটিজার ও তার আশ্রয়প্রশ্রয়দাতারা। এসব বিষয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গের দৃষ্টি দেয়া অত্যাবশ্যাক। পাশাপাশি পুলিশ বিভাগের আইজিপিসহ শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যৌন হয়রানি বা ইফটিজার, ইফটিজারদের শেল্টারদাতা, অসাধু পুলিশের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে না দেখলে জনমনে ভুল বার্তা পৌছে যেতে পারে।

প্রসঙ্গত: কলেজ ছাত্রী দুই বোনকে নলছিটির মগড় ইউনিয়নের ডুবিল গ্রামের মুনসুর আলী হাওলাদারের বখাটে পুত্র সবুজ কর্তৃক যৌণহয়রানী করায় নলছিটি থানায় একটি জিডি করা হয়। যার জিডি নং- ৭৯৪, তারিখ : ২১/০৭/২০১৯। বখাটের পক্ষাবলম্বন করে সেই জিডি তুলে নেয়ার জন্য বার বার কলেজ ছাত্রী ও তার পরিবারকে বিভিন্ন কায়দায় চাপ প্রয়োগ করে আসছে মগড়ের চেয়ারম্যান কুখ্যাত মাদক সম্রাট এনামুল হক শাহীন ও অপরাধী চক্র। পাশাপাশি এলাকার কয়েক মোড়লও জড়িত। এক্ষেত্রে স্থানীয় থানা প্রশাসনের ভূমিকা চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। চেয়ারম্যানের কথামতো জিডি না উঠানোর ফলে গদ ২৮ জুলাই দুপুর ১২ টা ৮ মিনিটে ক্ষিপ্ত হয়ে কলেজ ছাত্রীর সেল ফোনে চরম অসভ্য,বর্বর ভাষায় গালাগাল করে দেখিয়ে দেয়ার হুমকী প্রদান করেন ।

বলাবাহুল্য : ঝালকাঠি জেলার নলছিটির মগড় এলাকার মাদক সম্রাট এনামুল হক শাহীনের বেপরোয়া মাদক বাণিজ্য আর অন্যায় অপকর্মে পুরো সমাজকে ভাবিয়ে তুলেছে। কিন্তু টনক নড়ছে না নলছিটি থানা পুলিশের। তাদের এই উদাসীনতায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিতর্কিত হওয়ার পাশাপাশি মানুষের কাছে ভুল বার্তা পৌছে দিচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে-মাদক নির্মূলে ও যৌন হয়রানীর বিষয়ে কেন এই গাফিলতি। এই প্রশ্নের জবাবও মিলছে। স্থানীয়ভাবে চাউর হয়ে গেছে ‘নলছিটি থানার ওসি সাখাওয়াতের সাথে মাদক সম্রাট শাহীনের মামা-ভাগ্নে সম্পর্ক’। এই সম্পর্ক নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। অনেকে বলছেন-এই সম্পর্ক অর্থের বিনিময়ে তৈরি। আবার কেউ বলছে-মাদক বাণিজ্যে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে টুপাইস ইনকামের ধান্ধায় মত্ত ওসি সাখাওয়াত। পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিষয়টি অবগত রয়েছে। তবুও তাদের নির্লিপ্ততা খোদ অভিজ্ঞ মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। কিন্তু সুরাহা মিলছে না-তো মিলছেই না ! সমস্যটা এখানেই গোড়ায়গলধ !! আমরা এভাবে চাই না, চাইবোও না কোনদিন কোন কালেও।

আমরা চাই-পুলিশ জনগণের সেবক। পুলিশ জনগণের জানমালের রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করবে। এই পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখাসহ যাতে কোন অসাধু পুুলিশ কর্তাদের কারণে যেনো গোটা পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ না হয় ।

লেখক : নির্বাহী ও বার্তা প্রধান, দৈনিক বিপ্লবী বাংলাদেশ।
E-mail : ahmedjalalbsl@gmail.com

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন