২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

ববিতে মার্কেটিং বিভাগের জরিমানা নিয়ে তোলপাড়

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৩১ অপরাহ্ণ, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

শাফিকুল ইসলাম :: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) মার্কেটিং বিভাগের একটি কোর্সের পরীক্ষা না দেয়ায় ৭,৬০,০০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মার্কেটিং বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মামুন উর রশিদের অসুস্থ্যতার জন্য ৭ম সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষার MKT-414 কোর্সের পরীক্ষা বর্জন করে সব শিক্ষার্থীরা। এর তিন মাস পর পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার জন্য জনপ্রতি ১০,০০০ টাকা জরিমানা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের ২৬তম সভায় সেই কোর্সে পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এবং পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১০,০০০ টাকা জরিমানা করেছে। ৭৬ জন শিক্ষার্থীকে ১০,০০০ টাকা করে মোট ৭,৬০,০০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর নুসরাত জাহান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গত ২৪ অক্টোবর ২০১৮ ছিল মার্কেটিং বিভাগের ৭ম সেমিস্টারের MKT-414 ( সেলস এন্ড রিটেইল ম্যানেজমেণ্ট ) কোর্সের ফাইনাল পরীক্ষা। কিন্তু ২২ অক্টোবর শিক্ষার্থী মামুন উর রশিদ অসুস্থ্য হলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ডাক্তার দেখায়।

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষূধ খাওয়ার পরে মাথা ব্যাথা ও জ্বর না কমে আরও বৃদ্ধি পায়। ২৩ অক্টোবর রাত ৯টায় প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা ও ১০৫ ডিগ্রী জ্বর আসলে গুরুতর অসুস্থ্য হয় মামুনুর রশিদ। তাৎক্ষণিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে বন্ধুরা বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করে।

২৪ অক্টোবর পরীক্ষার দিন মামুনুর রশিদ তখনও হাসপাতালে ভর্তি, মাথা তুলে দাঁড়াবারও শারীরিক সক্ষমতা নেই। যারফলে MKT-414 (সেলস এন্ড রিটেইল ম্যানেজমেণ্ট) কোর্সের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে ৭ম সেমিস্টারে মান উন্নয়নের কোন সিস্টেম নেই। যার পরিপ্রেক্ষিতে সহপাঠীরা সবাই মিলে MKT-414 (সেলস এন্ড রিটেইল ম্যানেজমেণ্ট) কোর্সের পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত নেয় এবং স্যারদের বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়ে সবাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে।

মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর নুসরাত জাহান জানান, পরীক্ষা না দেয়ার বিষয়টি আমি জানতামই না। ফরমালভাবে আমাকে জানানো হয়নি। পরীক্ষার দিন সকালে আমি জানতে পারি। আগের দিন রাতে মৌখিকভাবে ২ জন স্যারকে ওরা জানিয়েছিল কিন্তু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করার ব্যাপারটিকে স্যাররা ডিসকারেজ করেছে।একজন শিক্ষার্থী জন্য সবাই পরীক্ষা বর্জন করা বেমানান। মামুন উর রশিদের জন্য সিক বেডেরে ব্যবস্থা করে পরীক্ষা দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল কিন্তু তারা কেউ সেকথা শোনেনি ।

কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভাইভায় সিক বেডে শুয়ে শুয়ে এক শিক্ষার্থী ভাইভা দিয়েছে। সেখানে ভাইভার তারিখ পিছানো হয়নি। এই বিষয়টি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের আন্ডারে তাই আমাদের তেমন কিছু করার নাই। তবে শিক্ষার্থীদের উপর অনেক টাকা জরিমানা করায় আমিও তাদের সাথে সমব্যাথি’।

মামুন উর রশিদের সহপাঠী মার্কেটিং বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস প্রতিনিধি (সিআর) শারমিন জানান, ‘কোর্সের পরীক্ষা পেছানোর জন্য ফর্মালভাবে আগে থেকে চেয়ারম্যান ম্যামকে জানানো হয়নি। পরীক্ষার আগেরদিন রাতে আমরা মৌখিকভাবে ছাত্র উপদেষ্টা স্যারকে মামুন উর রশিদের অসুস্থ্যতার কারণে ‘আমরা পরীক্ষা দিতে চাচ্ছি না এবং এর ফলাফল কি হতে পারে’ এমনটা জানালে স্যার আমাদের বলেন, এইটা আমাদের বিভাগের হাতে কিছু নাই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের আন্ডারে। এখনও অনেক সময় আছে দেখ মামুনুর রশিদের শারীরিক অবস্থা কি হয়। এরপর আমরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে পরবর্তীতে লিখিতভাবে স্যারদের কাছে বিষয়টি অবহিত করি এবং পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার আবেদন করি’।

এবিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষার্থী মামুন উর রশিদ বলেন, আমি অসুস্থ্যতার কারনে মাথা তুলেও দাঁড়াতে পারছিলাম না। তাই কোন ভাবেই পরীক্ষা দেয়া সম্ভব ছিল না। সহপাঠীরা আমার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে ৭ম সেমিস্টারে মান উন্নয়নের কোন সিস্টেম নেই।

আমাদের ক্লাশের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরাই নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। যেখানে প্রত্যেক সেমিস্টারে ভর্তি-পরীক্ষা ফি বাবদ ৩,৫০০ টাকা প্রদান করতে আমাদের আর্থিক সমস্যার সম্মূখীন হতে হয়, সেখানে জরিমানা বাবদ আমাদের পক্ষে জন প্রতি ১০০০০ টাকা প্রদান করা অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় ভিসি স্যারের কাছে আকুল আবেদন, আমার অসুস্থতার বিষয়টি মানবিক বিবেচনা করে আমাদের জরিমানা মওকুফ করার অনুরোধ করছি।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর ড. সুব্রত কুমার দাস জানান, এটি একটি এক্সেপশোনাল কেইস। একাডেমিক কাউন্সিল যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা দেয়নি। পরবর্তীতে পরীক্ষা নেয়ার নিয়ম নেই। তাই জরিমানা সাপেক্ষে তাদের পুনরায় পরীক্ষা নেয়া হবে। তারা যদি মনে করে টাকার পরিমান বেশি তাহলে বিভাগের মাধ্যমে জানাতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে জরিমানা হিসেবে এতো টাকা নেয়ার নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে ভিসি বলেন, এটা আইনের বাইরেই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এইদিকে ৭,৬০,০০০ টাকা জরিমানার ব্যাপারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জানাজানি হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এতো টাকা ঐ বিভাগের শিক্ষার্থীদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয় সেই সাথে অযৌক্তিক এই জরিমানাকে জুলুম মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীরা।

মার্কেটিং বিভাগের ৫ম ব্যাচের শিক্ষার্থী বাহাউদ্দিন আবির বলেন, এই জরিমানা অযৌক্তিক এবং অনেকেরই সামর্থের বাহিরে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অযোক্তি ও অন্যায়ভাবে এই পরিমান জরিমানা করেছে। এই শাস্তি লঘু পাপে গুরুদণ্ডের মতো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, এটা শিক্ষার্থীদের উপর জুলুম করা হচ্ছে। ৭,৬০,০০০ টাকা জরিমানা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এইটা একধরনের চাঁদাবাজি।”

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন