২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বরগুনায় এক স্কুলের দপ্তরি হলেন আরেক স্কুলের সভাপতি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:৩৩ অপরাহ্ণ, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বার্তা পরিবেশক, বরগুনা:: বরগুনায় এক স্কুলের দপ্তরি অন্য একটি স্কুলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাঁচ বছর ধরে চলছে এই সভাপতিত্ব। এতে অনিয়ম-দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার মধ্য দিয়ে চলছে স্কুলটি। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাও কমে এসেছে উল্লেখযোগ্য হারে। বিষয়টিকে দলীয়করণের নেতিবাচক দিক হিসেবেই দেখছে স্থানীয় সচেতন মহল।

বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের ১৫৮ নম্বর পশ্চিম নাপিতখালী আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে সরকারীকরণ করা হয়েছে ২০১৩ সালে। বিদ্যালয়টিতে একজন প্রধান শিক্ষকসহ চারজন শিক্ষক থাকলেও শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রী রয়েছে মাত্র ৩৫ জন। এর মধ্যে প্রাক প্রাথমিকে ১১ জন, প্রথম শ্রেণিতে তিনজন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে চারজন, তৃতীয় শ্রেণিতে পাঁচজন, চতুর্থ শ্রেণিতে চারজন ও পঞ্চম শ্রেণিতে দেখানো হয়েছে সাতজন। যদিও এলাকাবাসীর দাবি, প্রকৃতপক্ষে ছাত্রছাত্রী রয়েছে এর অর্ধেক।

বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সাহেব আলী খান। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস। আর এই শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েই তিনি চাকরি করছেন পাশের গ্রামের নাপিতখালী পঞ্চগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন দপ্তরি হিসেবে। একই সঙ্গে পাঁচ বছর ধরে পশ্চিম নাপিতখালী আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসিনা বেগম বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাহেব আলী খানকে মনোনীত করা হয়েছে। তাঁর সামনে অন্য কেউ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তাই তিনি সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, ‘লেখাপড়া করে অনেক প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে শিক্ষকতার চাকরি নিয়েছি। সেই চাকরিতে যদি আমাদের সভাপতি হন একজন অষ্টম শ্রেণি পাস করা ব্যক্তি, তাতেও দুঃখ ছিল না। কিন্তু আরেকটি স্কুলের দপ্তরি যখন আমাদের সভাপতি হন তখন দুঃখ আর লুকানো যায় না।’

এ বিষয়ে পশ্চিম নাপিতখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি মহসিন মৃধা বলেন, ‘একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি যখন আরেক স্কুলের দপ্তরি হন তখন কোনো শিক্ষকেরই মানসম্মান থাকে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘স্কুলটির বিভিন্ন বরাদ্দ থেকে অনেক টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে, যা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।’

বরগুনা জেলা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামাল বলেন- ‘একজন দপ্তরি সভাপতি হলে সেই স্কুলের শিক্ষার মান কোথায় গিয়ে পৌঁছতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। এটি স্থানীয় রাজনীতির হীনম্মন্যতা ছাড়া আর কিছুই নয়।’

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এম এম মিজানুর রহমান বলেন- ‘২০১৯ সালের শেষ দিকে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। যেখানে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হতে হলে ন্যূনতম বিএ পাস হতে হবে। সে ক্ষেত্রে নতুন পরিপত্র হিসেবে সাহেব আলী খানের সভাপতিত্বের মেয়াদ শেষ হলে তিনি আর সভাপতি হতে পারবেন না।’

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন