২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বরগুনায় খাল দখল করে বহুতল পাকা ভবন নির্মাণ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:১৪ অপরাহ্ণ, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বরগুনার বামনায় প্রবহমান কয়েকটি খাল দখল করে কতিপয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বাণিজ্যিক নানা পাকা স্থাপনা গড়ে তুলছে। ফলে প্রবহমান খাল ক্রমশ সংকৃচিত হয়ে নাব্যতা হারাতে বসেছে। এতে এলাকার কৃষি জমিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

উপজেলার খোলপটুয়া বাজারের প্রাণকেন্দ্রের খাল, ডৌয়াতলা বাজারের পাশে হলতা খালের (পূর্বের হলতা নদীর) দুই তীর, বামনা বাজারের উত্তর পাশের খালটি নির্বিঘ্নে দখল করে পাকা ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

ওই খাল তিনটি দিয়েই স্থানীয় ২০টি গ্রামের আবাদী জমির সেচ সংকট মোকাবেলা করে কৃষকরা। খালগুলোর নাব্যতা সংকটে কারণে পানির অভাব ও পানি অপসারণের ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে। এতে বর্ষা মৌসুমে এলাকার আবাদী জমিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে- উপজেলার রামনা ইউনিয়নের খোলপটুয়া বাজার সংলগ্ন খালটির ওপর পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় একযুগ পূর্বে স্লুইজগেট নির্মাণ করে। এ খালের ওপর নির্ভরশীল দক্ষিণ খোলপটুয়া, উত্তর খোলপটুয়া, অযোধ্যা, ঘোপখালী ও নিজআমতলী গ্রামের ১ হাজার একর জমির (৪০০ হেক্টর) মৌসুমে সেচ ব্যবস্থাপনা। স্লুইজগেটের ভিতর পাশের খালটি দখল করে এলাকার কতিপয় প্রভাবশালীরা একের পর এক পাকা ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে চলেছেন। এতে জোয়ার-ভাটার পানি ওঠা-নামায় বাধাগ্রস্থ হওয়ায় স্লুইজগেটে সংলগ্ন খালটি ধীরে ধীরে সংকোচিত হয়ে নাব্যতা হারাচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পাঁচ গ্রামের আবাদী জমির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা।

এদিকে ডৌয়াতলা বাজারের পশ্চিম পাশের পূর্বের প্রবাহমান হলতা নদীটি নব্যতা হারিয়ে খালে পরিণত হলে এই হলতা খালের দুই তীর মঠবাড়িয়া উপজেলার কুমিরমাড়া ও বামনা উপজেলার ডৌয়াতলা বাজারের অংশ দখল হয়ে খালটি এখন প্রায় মৃত অবস্থায় রয়েছে। ফলে পানির প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে এখানকার জনসাধারণ।

শুধু খোলপটুয়া আর ডৌয়াতলা নয় দখলের কবলে রেহাই পায়নি বামনা উপজেলা সদরের খালটিও। এখানকারকতিপয় প্রভাবশীলীরা খাল ভড়াট করে গড়ে তুলেছেন বাসা-বাড়ি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। ফলে একসময়ে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহৃত হওয়া এই খালটি এখন মৃতপ্রায়।

বামনা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে- বামনা উপজেলা মোট আবাদী জমির পরিমাণ ৭ হাজার ১০০ হেক্টর। পরিকল্পিতভাবে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় কারণে প্রতি বছর প্রায় দের হাজার হেক্টর জমির সঠিকভাবে আবাদ করা যাচ্ছে না। এতে এ উপজেলায় ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। প্রতিবছর এ উপজেলায় জলাবদ্ধতার কারণে কোটি টাকার ফসল বিনষ্ট হচ্ছে। শিগগিরই খালগুলো দখল মুক্ত করা না হলে এলাকার কৃষকরা আর্থিক ক্ষতিসহ এলাকার কৃষিতে মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে।

ঘোপখালী গ্রমের কৃষক মো. কুদ্দুস খাঁ সাংবাদিকদের জানান, এমনিতেই বহুযুগেও খাল খননের কোনো ব্যবস্থা নেই। তার ওপর প্রভাবশালীরা খালের ভেতর ঘর ও দোকানপাট তুলে খালটি নষ্ট করছে। এর প্রতিকার না হলে এ খাল অচিরেই মরে যাবে। খাল মরে গেলে এলাকার কৃষি ও কৃষক মরবে।

খোলপটুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামাল হাওলাদার সাংবাদিকদের জানান, সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের তদারকি না থাকায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা খোলপটুয়া বাজার সংলগ্ন খালটি অবৈধভাবে দখল করে স্থায়ী ভবন নির্মাণ করছেন। এতে অত্র এলাকার আবাদী জমির পানি নিষ্কাশন ব্যহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা জরুরি। না হলে বর্ষা মৌসুমে আবাদী জমিতে জলাবদ্ধতায় ফসল বিনষ্ট হবে।

এ বিষয়ে বামনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সি এম রেজাউল করিম সাংবাদিকদের জানান, বামনাতে অপরিকল্পিত স্লুইগেট ও ইনলেট নির্মাণের ফলে এ উপজেলার কৃষিতে সেচ সংকট লেগেই আছে। এ দিকে বামনা উপজেলার কয়েকটি খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। খালগুলো দখল মুক্ত করা খুবই জরুরি। নতুবা এলাকার কৃষি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরি বরিশালটাইসমকে বলেন, আমি খোলপটুয়া বাজারের খাল দখলসহ উপজেলার কয়েকটি খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে শুনেছি। দ্রুত খালগুলো দখল মুক্ত করার জন্য উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।’’

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন