২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরগুনায় দেশের বৃহত্তম ইলিশ উৎসব

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:১৯ অপরাহ্ণ, ০২ অক্টোবর ২০১৯

মাছের রাজা ইলিশ। আকার আকৃতি, বর্ণ ও স্বাদে অতুলনীয় এই ইলিশ বাঙালির রন্ধনশিল্পে এক আভিজাত্যপূর্ণ অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। এই ইলিশকে ঘিরে ইলিশের জেলা বরগুনায় বুধবার দিনব্যাপী উদ্‌যাপিত হয় দেশের বৃহত্তম ইলিশ উৎসব। বরগুনা জেলা প্রশাসন ও জেলা টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয় এই ইলিশ উৎসব।

ইলিশ উৎসবকে ঘিরে বুধবার সকাল থেকেই সার্কিট হাউজ মাঠে বাড়তে থাকে সর্বস্তরের জনতার ভিড়। সকাল সাড়ে ৯টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রায় দেখা যায় ইলিশের নানা রকম প্লাকার্ড ও দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য। অংশ নেয় নারী ও কিশোর-কিশোরীসহ শত শত জনতা। সার্কিট হাউজ মাঠ থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সার্কিট হাউজ মাঠে এসে তা শেষ হয়।

শোভাযাত্রা শেষে উদ্বোধনী নৃত্যের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ইলিশ উৎসব। উদ্বোধনী নৃত্যে উঠে আসে আবহমান বাংলার জল-জাল ও জেলেদের জীবন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বরগুনা ১ আসনের সংসদ সদস্য ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ, বরগুনার পৌর মেয়র মো. শাহাদাত হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. জাহাঙ্গীর কবীর। এ উৎসবে সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠিত হয় ইলিশবিষয়ক নাটক, আলোচনাসভা, কুইজ প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

উৎসবে জেলার ছয়টি উপজেলা থেকে ২৫টিরও বেশি স্টল শোভা পায়। স্টলগুলোতে রান্না ইলিশের শতেক প্রকারের বাহারি খাবার প্রদর্শিত হয়। স্বল্পমূল্যে বিক্রি হয় পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীসহ বঙ্গোপসাগরের সুস্বাদু তাজা ইলিশ।

বরগুনার পাথরঘাটায় রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য পাইকারি ও বাজারকেন্দ্র বিএফডিসি। বরগুনার প্রধান তিনটি নদী পায়রা, বিষখালী, বলেশ্বর ও বঙ্গোপসাগর থেকে প্রতিবছর ইলিশ আহরিত হয়ে থাকে প্রায় এক লাখ মেট্রিকটন। তাই উপকূলীয় জেলা বরগুনায় একটি ইলিশ গবেষণাকেন্দ্র ও ইলিশ মিউজিয়াম স্থাপনের দাবি উত্থাপন, মৎস্যজীবীদের সাথে সর্বস্তরের জনগনের মেলবন্ধন, মাছ ধরার নৌকাসমূহকে আধুনিকায়ন, ইলিশ অবতরণের ঘাটসমূহকে আরো আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সংযোজন এসব লক্ষ্যকে সামনে রেখে বরগুনায় আয়োজন করা হয়েছে ব্যতিক্রমী এ ইলিশ উৎসবের বলে জানান বরগুনা জেলা টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মনির হোসেন কামাল।

বরগুনার আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিরা পারভিন বলেন, বরগুনা জেলার প্রায় এক লাখ মানুষ সরাসরি ইলিশ শিকারের সাথে সম্পৃক্ত। বঙ্গোপসাগর, বিষখালী, পায়রা ও বলেশ্বর নদীর ইলিশ দেশের অন্য যেকোনো জেলার ইলিশের চেয়ে সুস্বাদু। তাই প্রথমবারের মতো বরগুনা জেলায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশের বৃহত্তম ইলিশ উৎসব।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, বরগুনার ইলিশকে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি করে তুলতে ও ইলিশের ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত বরগুনায় দেশি-বিদেশি পর্যটককে ইকোট্যুরিজমে আকৃষ্ট করার পাশাপাশি মৎস্য খাতের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ ও জাটকা ইলিশ সংরক্ষণে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

বরগুনা ১ আসনের সংসদ সদস্য ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, এ অনুষ্ঠানের প্রস্তাবনা সাংবাদিক বন্ধুদের মধ্যে থেকে এসেছিল। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে এ ইলিশ উৎসব শুরু হয়। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের যত ইলিশই থাকুক না কেন বরগুনার পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর ইলিশের মতো সুস্বাদু ইলিশ আর কোথাও নেই। তাই বরগুনায় মৎস্য মন্ত্রণালয় থেকে এখানে একটি ইলিশ গবেষণাকেন্দ্র ও দ্বিতীয় আরেকটি ইলিশ অবতরণকেন্দ্র স্থাপনের প্রচেষ্টা রয়েছে আমাদের।

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন