২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বরগুনায় প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দিলে এসিড মারার হুমকি কিশোর গ্যাংয়ের

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:৪৬ অপরাহ্ণ, ০৯ মার্চ ২০২০

বার্তা পরিবেশক, বরগুনা :: প্রেমের প্রস্তাব সাড়া না দিলে এসিড নিক্ষেপের হুমকি দেওয়া হয়েছে বরগুনা পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানি ইউনিয়নের শেল্টার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক ছাত্রীকে। এর প্রতিবাদ‌ করায় বিদ্যালয়ের দুই ছাত্রের হাত কেটে নেওয়ারও হুমকি দেয় স্থানীয় দেলোয়ার হোসেনের ছেলে কিশোর গ্যাং সৈকতের অনুসারী বেলাল, সাকিব, আসাদ, আমিনুল, রাজু, রুবেল , তুহিন ওরফে রনি, ইব্রাহিমসহ আরও অনেকে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইব্রাহিম খলিল ও পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির।
ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী জানান, দীর্ঘদিন ধরে বেলাল ও রুবেল তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। বার বার তা প্রত্যাখ্যান করায় গত শনিবার এসিড নিক্ষেপ করে চেহারা নষ্ট করে দেওয়ার হুমকি দেয় বেলাল ও রুবেল। এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে ও তারা ওই স্কুলছাত্রীকে অশ্লীল কথা বলে। এ সময় কাইফি ও ইমন নামে দুই ছাত্র এর প্রতিবাদ করলে তাদের মারধর করা হয়।

ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী আরও জানান, এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে হাত কেটে নেবে বলেও হুমকি দেয় তারা। বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও তারাও কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। এ নিয়ে কয়েক দফা হামলার শিকার হয়েছে স্কুলের ছাত্র জাহিদ ,জুবায়ের, শাওন, অমিত, ওয়ালিদ, ইমন, তারিক। এমনকি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এন আই খানের ভাইয়ের ছেলে দশম শ্রেণির ছাত্র ইমনও বাদ পরেনি তাদের হামলা থেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাথরঘাটা পৌর মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের সভাপতি সৈকতর ও তার অনুসারী এই কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাবাসী। সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাংয়ের প্রধান সৈকতের বিরুদ্ধে থানায় মাদক, মারামারিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সম্প্রতি সৈকত একটি মামলার জামিনে মুক্তি পেয়ে মিনারা বেগম (৩৫) নামে এক নারীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে।

মিনারা বেগম জানান, স্থানীয় জব্বারের কাছে ছয় মাস আগের ১৫ হাজার টাকা চাইতে যান।

তিনি বলেন, ‘এ সময় জব্বার ভাড়া করা সৈকতের দলবলসহ চাকুছোড়া নিয়ে আমাকে মারতে আসে। তখন আমি ডাক চিৎকার দিলে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে যায়।’

মিনারা বেগমের ভাই ইলিয়াস প্যাদা বলেন, ‘আমার বোনের ওপর হামলার বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে অভিযোগ করলে তারা বলেন ওই পোলা (সৈকত) বাইড়া গেছে আল্লাহ কাছে বিচার দাও।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক লোকজন জানান, এলাকায় মাদক ও মারামারির নিয়ন্ত্রণক হচ্ছে এই সৈকত বাহিনী। অপরদিকে এই বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিককে হুমকি দেয় আদনান রাফসান সৈকত।

এ বিষয়ে শেল্টার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান বলেন, ‘আমরা এই কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচারে অতিষ্ট। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকায় কোনো পদক্ষেপ নিতে পারি না আমরা। বারবার বিষয়টি নিয়ে সমাধানের জন্য বৈঠক হলেও কিছু দিন পর আবারো বেপরোয়া হয়ে ওঠে তারা।’

এ বিষয়ে পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মোহাম্মদ সাঈদ আহমদ সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি মৌখিকভাবে অবগত হয়েছি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ গতকাল রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে বিদ্যালয় সংলগ্ন মুন্সিরহাট বাজারে বখাটেরা লাঞ্ছিত করে কাইফি নামে এক শিক্ষার্থীর বাবা রফিকুল ইসলাম কাঁকন মোল্লাকে। তিনি জানান, ছেলেকে মারধরের ঘটনার কারণ জানতে চাইলে সৈকত বাহিনী আমাকে লাঞ্ছিত করে। অভিভাবককে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি তাৎক্ষণিক ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা ও ক্ষোভ দেখা দেয়।

এ নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তফা গোলাম কবির জানান, কিছু ভুঁইফোড় নেতা মুন্সিরহাট এলাকাকে জিম্মি করে রেখেছে। তারা মাদকাসক্ত। এদেরকে নিয়ে আমিও শঙ্কিত।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাবির হোসেন বলেন, ‘পাথরঘাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের কাউকেই আমি চিনি না, পৌর কমিটি তো দূরের কথা। আর যারা আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নামে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করবে তাদের দায় আওয়ামী লীগ নেবে না।

এদিকে আদনান রাফসান সৈকতকে বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ থেকে পৌর শাখার সভাপতি পদ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি অলিউর রহমান অলি ও সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মো. রিয়াজুল ইসলাম রাজু স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন