২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরগুনায় বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:৪৩ অপরাহ্ণ, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বার্তা পরিবেশক, বরগুনা :: রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর ও দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৯ বছরেও বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্মিত হয়নি শহীদ মিনার। ফলে ভাষার জন্য যাঁরা জীবন দিয়েছেন তাঁদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা জানাতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।

অস্থায়ীভাবে কলাগাছ ও বাঁশ দিয়ে মিনার নির্মাণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে থাকেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দুই উপজেলায় হাতে গোনা কয়েটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থায়ী শহীদ মিনার থাকলেও সেগুলোর কোনো যত্ন নেওয়া হয় না।

উপজেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, আমতলী ও তালতলী উপজেলায় ৩২৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমতলী উপজেলায় ১৫২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৩টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২১টি দাখিল মাদ্রাসা, একটি আলিম মাদ্রাসা, চারটি ফাজিল মাদ্রাসা ও পাঁচটি কলেজ। তালতলী উপজেলায় ৭৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঁচটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১২টি দাখিল মাদ্রাসা ও একটি কলেজে রয়েছে।

এরমধ্যে আমতলী উপজেলায় ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুইটি কলেজ, আটটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তালতলী উপজেলায় ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কলেজে শহীদ মিনার রয়েছে। এ দুই উপজেলার কোনো মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নেই।

দুই উপজেলার বাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর কোনো শহীদ মিনার নেই। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কলাগাছ ও বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিবসটি পালন করে থাকে। আর যেসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে যেগুলো সারা বছর অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকে। প্রতিবছর শহীদ দিবসের আগে ঘষামাজা করে শ্রদ্ধা জানানো হয় সেখানে।

সরেজমিনে গেলে আমতলী ও তালতলী উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের বিদ্যালয়ে স্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মিত না হওয়ায় ভাষা আন্দোলনে নিহত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সমস্যা হচ্ছে। বিদ্যালয়ে অস্থায়ীভাবে কলাগাছ ও বাঁশ দিয়ে নির্মিত শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে হয়। তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে তাদের বিদ্যালয়ে স্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানিয়েছে।

এছাড়া দুই উপজেলার ৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মিত হলেও সেগুলোর কোনো যত্ন নেওয়া হয় না।

মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. দেলোয়ার হোসেন গাজী বলেন, যেসব বিদ্যালয়ে স্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছে সেসব শহীদ মিনার সারা বছরই অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে থাকে। কিন্তু সারা বছরই এগুলোর যত্ন নেওয়া উচিত।

আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, উপজেলার আটটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মিত হলেও বাকি বিদ্যালয়গুলোতে এখনো শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। পর্যায়ক্রমে অবশিষ্ট সব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।

তালতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর কবির কামরুল আহ্সান মুঠোফোনে বলেন, এ উপজেলার ১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য স্থায়ী শহীদ মিনার আছে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা প্রয়োজন।

আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম সরোয়ার ফোরকান বলেন, ভাবতেই অভাগ লাগে দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৯ বছরেও উপজেলার একটি মাদ্রাসায়ও ভাষা শহীদদের সম্মানে স্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। তিনি আরো বলেন, আগামী উপজেলা পরিষদের সম্বন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন বরিশালটাইমসকে বলেন, ভাষা শহীদদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা- সম্মান, নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁদের পরিচিত করতে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করা প্রয়োজন। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন