২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

বরগুনা/ চাকরি বাঁচাতে নতুন ঠিকানায় ঘর তৈরি!

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:০৫ অপরাহ্ণ, ০৮ ডিসেম্বর ২০২২

বরগুনা/ চাকরি বাঁচাতে নতুন ঠিকানায় ঘর তৈরি!

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বরগুনার বেতাগীতে পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ঠিকানা দিয়ে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, চাকরি বাঁচাতে এখন নতুন ঠিকানায় ঘর তৈরি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

একই পদের পরিক্ষায় উত্তীর্ণ একাধিক প্রার্থী জানিয়েছেন, বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে ২২ নভেম্বর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বরগুনা জেলা প্রশাসককে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা। এর পরপরই ওই প্রার্থী চাকরি বাঁচাতে এখন নতুন ঠিকানায় ঘর তৈরি করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১২ আগস্ট জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় থেকে পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে আবেদনকারীকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ইউনিট/ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।

পরে ওই পদে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে আবেদন করেন বেতাগীর বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের পশ্চিম কাউনিয়া গ্রামের মো. হালিম মৃধার মেয়ে মোসা. খাদিজা আক্তার। অথচ ওই পদে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ছয়জন প্রকৃত বাসিন্দা মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও ৯ নভেম্বর চুড়ান্ত ভাবে নির্বাচিত হয়ে মোসা. খাদিজা আক্তারের রোল প্রকাশ করা হয়।

চাকরি প্রার্থী সুইটি আক্তারের অভিযোগ, প্রকৃত বাসিন্দা হিসেবে তাকে চাকরি না দিয়ে যিনি ইউনিটের বাসিন্দা নয় অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে চুড়ান্ত ভাবে তাকে উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।

তার দাবি, খাদিজা আক্তার ৪ নম্বর ওয়ার্ড তথা ২/খ ইউনিটের বাসিন্দা। এখন তিনি (খাদিজা) চাকরি স্থায়ী করতে ২/ক ইউনিটে নানা জায়গায় ঘর তৈরি করছেন।

অন্য প্রার্থী মোসা. আসমা আক্তার ও মোসা. মুক্তা আক্তার দাবি করেন, তারা যোগ্য হওয়া সত্বেও তাদের বঞ্চিত করে অন্য ইউনিটের বাসিন্দাকে চাকরিতে চুড়ান্ত করা হয়েছে। তারা এর প্রতিকার চান।

এ বিষয়ে সরেজমিনে বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের ২/ক ইউনিটে খোঁজ নিতে গিয়ে খাদিজা আক্তারের স্থায়ী কোনও বসতভিটা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে ওই এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার বাড়ি এলাকায় ধান ক্ষেতের পাশে কয়েকজন মিস্ত্রিকে একটি ঘর নির্মাণ করতে দেখা যায়।

ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইউনুচ হাওলাদারের ভাষ্যমতে, চাকরির বৈধতা আদায়ের জন্য যে জায়গায় ঘর করা হচ্ছে তা খাদিজার নানা মৃত আনোয়ার আলীর জমি। তার নামে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহারের অভিযোগ ওঠার পর ঘরটি তৈরি করা শুরু করেছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে মোসা. খাদিজা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার মা নুরুন নাহারের দাবি, তারা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তার বাবার বাড়িতে জমি নিয়ে ঝামেলা থাকায় সেখানে এখন ঘর তৈরি করছেন। খাদিজা এখন নানা বাড়িতেই থাকেন।

বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ গোলাম রব শুক্কুর মীর বলেন, খাদিজা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। সেভাবে পরিচয়পত্র ও প্রত্যয়নপত্র নিয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নিয়োগটি ৫ নম্বর ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অংশে। এই অংশের প্রার্থীরা আপত্তি তুললে খাদিজা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রত্যয়নপত্র নিতে আসে কিন্তু আমি তাকে প্রত্যয়নপত্র দেইনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে চাকরি নেয়ার সুযোগ নেই। ভুয়া ঠিকানা ব্যবহারের অভিযোগের পর পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও পরিবার পরিকল্পনা বরগুনা কার্যালয়ের উপপরিচালক মাহমুদুল হক আজাদ বলেন, এ নিয়ে উৎকন্ঠার কিছু নেই। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে পরামর্শ করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু নিয়োগ প্রদানকারী কর্মকর্তা আমি নই। তাই এ বিষয়ে আমাদের কোনও পদক্ষেপ নেই।

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন