২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বরিশালের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে মিলছে না কাঙ্খিত ইলিশ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:২৮ অপরাহ্ণ, ২৪ আগস্ট ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: সাগরের ইলিশে সরগরম হয়ে উঠেছে বরিশাল নগরীর একমাত্র মোকামটি। মৌসুমের শুরুতে তেমন একটা আমদামি না থাকলেও এখন মাঝামাঝি সময়ে আসছে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ। গত কয়েকদিনে পোর্ট রোডের এ মোকামটিতে রুপালি ইলিশের আমদামির চিত্র আড়ৎ মালিকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। কিন্তু হতাশার বিষয় হচ্ছে- বরিশালের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে প্রত্যাশা অনুসারে ইলিশ পাচ্ছে না জেলেরা। ফলে বরিশাল জেলার কয়েকটি জেলে পল্লীর বাসিন্দাদের মধ্যে বিরাজ করছে চরমাকারে হতাশা।

কিন্তু এরপরেও মৎস্য অধিদপ্তর বলছে- গত বারের ন্যায় এবছরও ইলিশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে। তবে সংস্থাটি অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে কাঙ্খিত ইলিশ না মেলার বিষয়টি স্বীকার করলেও তাদের দাবি মৌসুমের শেষ দিকে জেলেদের আশার প্রতিফলন ঘটবে।

যদিও মৎস্য অধিদপ্তরের এমন বার্তায় ভরসা পাচ্ছে না এই জেলার জেলেরা। ফলে অনেক জেলেই এ পেশা থেকে সরে গিয়ে বিকল্প কর্মস্থান খুঁজে নিয়েছেন। আবার যারা এখনও যুক্ত রয়েছেন তারাও ধার দেনায় বেকিয়ে গেছেন। কিন্তু অপেক্ষা সুবর্ন সময়ের কখন জালে ধরা পড়ে রুপালি ইলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়- বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামে ১০১ জেলে পরিবারের বসবাস। যাদের জীবিকা পুরোপুরি নির্ভর করে মাছ শিকারের ওপর। একইভাবে জেলার বিভিন্ন উপজেলার ২০টির বেশি জেলে পল্লীর বাসিন্দারাও জীবন ধারন করছেন। কিন্তু এবার নদ-নদীতে কাঙ্খিত ইলিশ না মেলায় এই পল্লীর বাসিন্দাদের জীবনের যেন ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে।

এদিকে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে চাহিদা অনুযায়ী ধরা না পড়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের ইলিশের স্বাদ নেওয়া যেন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে সাগর থেকে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ আসলেও তার একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে রাজধানীসহ সারা দেশে। আবার কিছু ইলিশ বাজারে বিক্রি হলেও অনেকেরই ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।

উল্লেখ করা যেতে পারে- বরিশালের পোর্টরোডের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কেজি সাইজের মাছ ৪৪ হাজার টাকা, এলসি (৬-৯ শত গ্রাম) সাইজের মাছ ৩২ থেকে ৩৪ হাজার টাকা, ৪ থেকে ৬ শত গ্রাম (ভেলকা) ইলিশ ২০-২২ হাজার টাকা ও ৪শ গ্রামের মধ্যে (গোটলা) ইলিশ মাছ মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৪ থেকে হাজার টাকা দরে। ফলে ইলিশের ভুমি বরিশালের বাসিন্দাদের কাছে ইলিশ যেন এবছর আষাড়ে গল্পের মতই।

চন্দ্রমোহন আদর্শ গ্রামের একাধিক জেলে জানিয়েছেন- বিগত বছরগুলোতে বরিশালের কীর্তনখোলা, কালাবদর, তেঁতুলিয়াসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে বৈশাখ মাস থেকেই ইলিশ পাওয়া গেলেও এবারের চিত্র একেবারে ব্যতিক্রম। এমনকি মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এসেও কাঙ্খিত ইলিশের দেখা মিলছে না। সারাদিন জাল ফেলে ২/৪ টি ইলিশ পেলেও তা দিয়ে ৫/৬ জনের সংসার চলে না। এই কারণে অনেক জেলে পেশা ছেড়ে ভিন্ন কর্মস্থান খুঁজে নিয়েছে। আবার যারা এখনও এই পেশাতে রয়েছেন তাদের অধিকাংশই ঋণগ্রস্ত এবং ধার দেনায় জর্জারিত। একইভাবে দিনাতিপাত করছেন অপরাপর জেলে পল্লীর বাসিন্দারাও। তবুও অনেক জেলে অপেক্ষা করছেন, যদি মৌসুমের শেষ দিকে মিলে যায় কাঙ্খিত রুপালি ইলিশ।

অবশ্য বরিশাল জেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র দাসও বলছেন- মিঠা পানিতে কাঙ্খিত ইলিশ পেতে জেলেদের আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে স্থানীয় নদ-নদীগুলোতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু মৌসুমের শেষ দিকে প্রচুর পরিমাণ ধরা দেবে বলে আশাবাদী এই কর্মকর্তা।

তবে মৎস্য কর্মকর্তার এমন আশ্বাসে আস্বস্ত হতে পারছেন না জানিয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি ইসরাইল পন্ডিত সময়ের আলোকে বলছেন- সাগরে ইলিশ শিকারে লক্ষ্যমাত্র অতিক্রম করলেও অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর বিষয়টিতে একেবারে ভিন্ন চিত্র দেখা যাবে।

এর কারণ হিসেবে এই জেলে নেতা বলেন- সাগরের সাথে সংযুক্ত নদীর মোহনাগুলো এখন আর আগের মত নেই। অধিকাংশ স্থানে চর পড়ে সাগর থেকে ইলিশ আসার পথটি রুদ্ধ হয়েছে। ফলে স্থানীয় নদ-নদীতে রুপালি কেন কোন ইলিশের দেখা মিলছে না।

সরকারের উচিত ইলিশ নির্ভর অর্থনীতি ধরে রাখতে সাগর সংযুক্ত মোহনাগুলোর গভীরতা বাড়িয়ে সচল করা। নতুবা এতে অভ্যন্তরীণ নদীতে ইলিশ উৎপাদনের হার ক্রমশই হ্রাস পাবে। এবং জেলেরা আগামীতে ইলিশ শিকারে নিরুৎসাহিত হবে।’

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন