২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ঐতিহ্যবাহী মার্বেল মেলা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:২২ অপরাহ্ণ, ১৫ জানুয়ারি ২০২০

বার্তা পরিবেশক, আগৈলঝাড়া:: পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহারের রামানন্দের আঁক গ্রামে ঐতিহ্যবাহী মার্বেল খেলার মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) ভোরে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পৌষ সংক্রান্তির গোসাই নবান্ন উৎসব। উৎসবের প্রধানতম আকর্ষণ ঐতিহ্যবাহী মার্বেল খেলার মেলায় আগৈলঝাড়াসহ পাশের বিভিন্ন উপজেলার নানা বয়সী শিশু ও নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করছেন।

মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান চন্দ্র বিশ্বাস জানান, পঞ্জিকা মতে প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তির দিন নাম সংকীর্ত্তন ও গোসাই নবান্ন মহাউৎসবকে সামনে রেখে এ মেলা চলে আসছে।

মেলা আয়োজক কমিটির উপদেষ্টা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মলিনা রানী রায় বরিশালটাইমসকে জানান, এবছরও উৎসব উপলক্ষে বৈষ্ণব সেবা, হরিনাম সংকীর্ত্তন শেষে সোয়া মণ চালের গুড়োর সঙ্গে সোয়া মণ গুড়, ৫০ জোড়া নারকেল ও প্রয়োজনীয় অন্য খাদ্য উপকরণ মিলিয়ে তৈরি করা হয়েছে গোসাই নবান্ন। ওই নবান্ন ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ হিসেবে পরিবেশন করা হয়।

স্থানীয়দের মতে, এ গ্রামের ছয় বছর বয়সী সোনাই চাঁদ নামে এক মেয়ের বিয়ের বছর না ঘুরতেই তার স্বামী মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর শ্বশুরবাড়িতে একটি নিম গাছের নিচে সদ্যবিধবা কিশোরী দেবাদিদেব মহাদেবের আরাধনা ও পূজার্চনা শুরু করেন।

পূজার্চনা থেকে সাধনা। এক সময় সাধনার উচ্চ মার্গে সিদ্ধ হলে সোনাই চাঁদের অলৌকিক কর্মকান্ড এলাকা ছাপিয়ে বাইরেও প্রচার পায়। সোনাইয়ের জীবনকালেই আনুমানিক ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে সোনাই চাঁদ আউলিয়া মন্দির স্থাপন করা হয়। সোনাইর মৃত্যুর পরেও তার স্থাপিত মন্দির আঙ্গিনায় চলে নাম সংকীর্ত্তন ও নবান্ন উৎসব। স্থানীয়দের উদ্যোগে ২০১২ সালে মন্দিরটি পুননির্মাণ করা হয়।

তাদের মতে, সোনাই চাঁদের মৃত্যুর পর ওই বাড়িটি সোনাই আউলিয়ার বাড়ি হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম পার্বণ পৌষ সংক্রান্তিতে দুইশ চল্লিশ বছর ধরে ওই গ্রামে এ দিন উৎসব ও মার্বেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

সাবেক ইউপি সদস্য স্থানীয় বাসিন্দা মিহির বিশ্বাস গোসাই জানান, শীতকালে মাঠ-ঘাট শুকিয়ে যাওয়ায় তাদের পূর্ব পুরুষেরা উৎসবের এ দিনে মার্বেল খেলার প্রচলন করেন। উত্তরসূরী হিসেবে এখন তারাও মার্বেল খেলা ধরে রেখেছেন।

স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের মেয়ে-জামাইসহ অন্য আত্মীয়-স্বজনদের এ মার্বেল মেলায় আমন্ত্রণ জানান। উৎসবে অংশ নিতে তাই দর্শনার্থীদের ভিড়ে পূর্ণ হয়ে ওঠে গ্রামটি।

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন