২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

বরিশালের মাটিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ২ লাখ কৃষক বাস্তুচ্যুতের আশঙ্কা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:০৫ পূর্বাহ্ণ, ০৫ নভেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল অর্থাৎ বরিশালের মাটিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে উপকূলবর্তী প্রায় ২ লক্ষ কৃষক বাস্তুচ্যুত হতে পারেন। সমপ্রতি এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা। নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ সাময়িকীতে প্রকাশিত এই সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূল অঞ্চলের মাটিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাইয়া ধানচাষের অনুপযোগী হলে কৃষক এলাকা ছাড়িতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটি ও অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো হইতে উপকূলের জেলাগুলির ১৪৭টি উপজেলার মানুষের অভিবাসনের আর্থ-সামাজিক উপাত্ত এবং কৃষি উত্পাদনের উপাত্ত নিয়ে তারা সহিত প্লাবনবিষয়ক নাসার উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই পূর্বাভাস দিয়াছেন।

গবেষকেরা বলছেন, তারা অভিবাসনের ক্ষেত্রে লবণাক্ততা বৃদ্ধির প্রভাব দেখিতে চাচ্ছেন। তাদের মতে, ঘন ঘন নোনা পানির প্লাবন ইতোমধ্যে বহু কৃষককে ধানচাষ ছাড়িতে বাধ্য করিয়াছে। কৃষক এখন ধানের জমিতে চিংড়ি বা অন্য সামুদ্রিক মাছের চাষ করিতেছেন। গবেষণায় একটি চিত্রে দেখানো হইয়াছে, লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে এক লক্ষ ৪০ হাজার মানুষের অভিবাসন হইবে নিজের জেলায়। অন্য চিত্রে দেখানো হইয়াছে, ৬০ হাজার মানুষের অভিবাসন হইবে অন্য জেলায়। সেই ক্ষেত্রে অভিবাসী মানুষ ঢাকাকেই আশ্রয়স্থল হিসাবে অধিক প্রাধান্য দিবে।

পলিবিধৌত বদ্বীপ হিসাবে বাংলাদেশ সমুদ্রপৃষ্ঠ হইতে খুব বেশি উঁচুতে অবস্থিত নহে। তাহা ছাড়া আমাদের রহিয়াছে ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় এলাকা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলের নদী-খালে লবণপানি যে বাড়িতেছে, তাহার প্রমাণ আছে। এতদাঞ্চলে পানির লবণাক্ততা এমন স্তরে চলিয়া যাইতেছে যে, সেইখানে অর্ধেকের বেশি রোগব্যাধির প্রভাবক হিসাবে দায়ী করা হইতেছে পানির এই লবণাক্ততাকে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যাপারে জানা যায়, সেইখানে প্রতিদিন মানুষ প্রায় ১৬ গ্রাম লবণ গ্রহণ করিয়া থাকে পানীয় জলের ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততার কারণে, যেইখানে মাত্র ৫ গ্রাম লবণ আমাদের শরীরের জন্য স্বাভাবিক।

জলবায়ুর ক্রমশ পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে অস্বাভাবিক জোয়ার ও তুলনামূলকভাবে অধিক হারে সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ঘটনা ঘটিতেছে। এই কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের সহিত খাপ খাওয়াইতে হইলে বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন করিতে হইবে—ইতিপূর্বে এমন কথা বলিয়াছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। খাদ্য উত্পাদনে শস্যের অভিযোজিত হইবার ক্ষমতাবৃদ্ধি এইক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। অভিযোজন প্রক্রিয়ায় দরকার পড়িবে খরাসহিষ্ণু, বন্যাসহিষ্ণু, লবণাক্ততাসহিষ্ণু ও শৈত্যপ্রবাহসহিষ্ণু জাতের ফসল নিয়া গবেষণা।

আশার কথা হইল, বাংলাদেশ সরকার এই ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতনতার পরিচয় দিতেছে। বিগত ৪৭ বত্সর ধরিয়া বৈরী আবহাওয়ার দেশ হিসাবে বাংলাদেশ এইসকল প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করিয়াই কৃষিতে সাফল্য আনিয়াছে। সুতরাং ইহা আশা করাই যায় যে, নূতন নূতন সমস্যা উত্কীর্ণ হইলেও সময়োচিত নূতনতর গবেষণা ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশ ইহাকে মোকাবিলা করিতে পারিবে।’

সূত্র : ইত্তেফাক

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন