১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশালের সেই আনসার কর্মকর্তার আরও একটি দুর্নীতি ফাঁস

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:৫৮ অপরাহ্ণ, ২১ জুলাই ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বরিশাল জেলা আনসার অফিসের কর্মকর্তা মামুন হাওলাদারের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যসহ দুর্নীতির নানা অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে এক নারী আনসার সদস্য নিয়োগ বাণিজ্যের তোলার কয়েকদিনের মাথায় আরও একটি প্রকাশ পেয়েছে।

জামাল হোসেন নামে এক অপর এক আনসার সদস্য সার্কেল অ্যাডজুটেন্ট মামুন হাওলাদারের বিরুদ্ধে এবার ঘুষ দাবির অভিযোগ এনেছেন।

এর আগে নারীর অভিযোগটিও ছিল ঘুষ দাবির। অবশ্য সেই অভিযোগটি পত্রপত্রিকায় প্রকাশের পরে আনসার কর্মকর্তা মামুন হাওলাদারের বিরুদ্ধে নড়েচড়ে বসে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। পরবর্তীতে অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বরগুনার জেলা কমান্ড্যান্টকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

নিশ্চিত হওয়া গেছে- সেই অভিযোগটি এখন তদন্তধীন রয়েছে।

এই একটি অভিযোগের তদন্ত শেষ না হতেই ফের মামুন হাওলাদারের বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ জমা পড়ায় বরিশালে নিয়োজিত খোদ শীর্ষ আনসার কর্মকর্তারাও তাকে নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন।

বরিশাল জেলা আনসার অফিসের একটি সূত্র জানায়- অ্যাডজুটেন্ট মামুন হাওলাদার নিয়োগ বাণিজ্য ছাড়াও নানা দুর্নীতিতে জড়িত। গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা হওয়ায় তিনি একজন রাজনীতিবীদের পরিচয় দিয়ে কর্মস্থলে প্রভাবও বিস্তার করেন। ঘটনাচক্রে এখানকার একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তাকে নিয়ে ‘খিস্তিখেউর’ও করার অভিযোগ রয়েছে।

অপর একটি সূত্র জানায়- গত বছরের শেষের দিকে বরিশালের ১০ উপজেলা আনসার কোম্পানি কমান্ডার, সহকারি কোম্পানি কমান্ডার, থানা মহিলা প্লাটুন কমান্ডার এবং ইউনিয়ন আনসার কমান্ডারসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগের দায়িত্ব পান অ্যাডজুটেন্ট মামুন হাওলাদার। এসময় অনেক যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ না দিয়ে উৎকোচের বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীর নিয়োগ চ‚ড়ান্ত করেন তিনি। এই ঘটনাটি নিয়ে মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত সাধারণ আনসার সদস্যদের মধ্যেও চরম আকারে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সেই ক্ষোভের কারণে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দফায় দফায় নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতির ফিরিস্তি প্রকাশ পাচ্ছে।

রোববার আনসার সদস্য জামাল হোসেনের অভিযোগের অনুলিপিটি আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রধানকে প্রেরণ করা হয়েছে।

এর আগে নারীর অভিযোগটিও একইভাবে বাহিনী প্রধানসহ পুলিশ প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করা হয়।

এবারের অভিযোগে আনসার সদস্য জামাল হোসেন উল্লেখ করেছেন- তিনি মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চরএকরিয়া ইউনিয়নে দীর্ঘদিন সহকারি আনসার কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত বছরের শেষ দিকে নিয়োগের খবর পেয়ে তিনি উপজেলা অফিসে আবেদন করেন।

সেখানকার কর্মকর্তারা যাচাই বাচাই শেষে কাগজপত্র জেলা অফিসে প্রেরণ করে। একই সাথে আরও ৩৭ জনের কাগজপত্রও বরিশাল অফিসে আসে।

এই কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পরে সার্কেল অ্যাডজুটেন্ট মামুন হাওলাদার তার কাছে ৪০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন। যদিও তিনি অন্তরালে থেকে তার পক্ষে এক আনসার সদস্য টাকাটি চেয়েছেন।

কিন্তু দাবি পরিমাণ টাকা দেওয়ার সক্ষমতা নেই বলে জানিয়েছেন জামাল হোসেন। এই কারণে তাকে বাদ দিয়ে অহেদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে ওই পদে নিয়োগ করেন।

অভিযোগ রয়েছে- এখানেও বড় ধরনের একটি ঘুষ লেনদেন করেছেন সার্কেল অ্যাডজুটেন্ট মামুন হাওলাদার। তিনি অহেদুল নামে ব্যক্তির কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়েছেন।

এই ঘুষ বাণিজ্যে সার্কেল অ্যাডজুটেন্ট মামুন হাওলাদারের সাথে বাবুগঞ্জ উপজেলা (প্রশিক্ষিকা) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাহিদা আক্তারও জড়িত রয়েছেন।

তবে এই ঘুষ বাণিজ্যের পুরো অভিযোগটি অস্বীকার করে সার্কেল অ্যাডজুটেন্ট মামুন হাওলাদার বলছেন- তাদের মধ্যেকার একটি গ্রুপ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। তার দাবি তিনি কোন ধরনের দুর্নীতি বা নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত নন।

একইভাবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন- বাবুগঞ্জ উপজেলা (প্রশিক্ষিকা) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাহিদা আক্তারও।

তবে জেলা আনসার কমান্ড্যান্ট মো. ইফতেখার হোসেন বলেন- সার্কেল অ্যাডজুটেন্ট মামুনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ তদন্তধীন রয়েছে। সেটির প্রতিবেদন পাওয়া গেলে বিষয়টি উচ্চমহলকে অবহিত করে তার বিরুদ্ধে শাস্তি গ্রহণে সুপারিশ চাওয়া হবে।

এছাড়া নতুন কোন অভিযোগ উঠলে তাও তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।’

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন