২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বরিশালের সেই মানবতার হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৫৩ অপরাহ্ণ, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বিতর্কিত দুস্থ মানবতার হাসপাতালের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর পর অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে পাঠানো ও রোগীর রক্তের গ্রুপ ভুল নির্ণয়সহ নানা অনিয়মের অভিযোগে হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

বুধবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিপুল চন্দ্র দাস পুলিশের সহায়তায় অপচিকিৎসালয় খ্যাত শহরের ফুল্লশ্রী বাইপাস এলাকায় অবস্থিত দুস্থ মানবতার প্রাইভেট হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করেন।

এ সময় ১০ বেডের ওই হাসপাতালে ৩ জন এমবিবিএস চিকিৎসক, ৬ জন প্রশিক্ষিত নার্স, ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান থাকার কথা থাকলেও সেখানে কোনো চিকিৎসক, নার্স ও ল্যাবরেটরি টেকনোলজিস্টের উপস্থিতি পায়নি ভ্রাম্যমাণ আদালত।

অন্যদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিবেশ অধিদফতর ও ফায়ার সার্ভিসের সনদপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে না পারায় হাসপাতালের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এছাড়া হাসপাতালের একমাত্র কথিত অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুনের অ্যানেসথেসিয়াবিষয়ক কোনো সনদপত্র দেখাতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিপুল চন্দ্র দাস তাকে ফোন দিলে অ্যানেসথেসিয়াবিষয়ক কোনো সনদপত্র তার নেই বলে জানান আবদুল্লাহ আল মামুন। এসব কারণে সেখানে ভর্তি রোগীদের উপজেলা সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরেরও নির্দেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক বিপুল চন্দ্র দাস বলেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে না পারায় হাসপাতালের সকল কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হাসপাতাল পরিচালক স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক উপ-পরিচালক ডা. হিরন্ময় হালদারের অনুরোধে হাসপাতাল পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাগজপত্র পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়ার কথাও জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগৈলঝাড়া উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের লিটন অধিকারীর স্ত্রী পলি অধিকারীর (২১) প্রসব ব্যথা শুরু হলে ৩০ জানুয়ারি পলিকে দুস্থ মানবতার প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই সিজারিয়ান অপারেশন করেন গৌরনদী হাসপাতালের জুনিয়র কনস্যালটেন্ট (গাইনি) ডা. বিপুল বিশ্বাস। অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ছিলেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক বর্তমানে ডেপুটেশনে আগৈলঝাড়ায় কর্মরত আবদুল্লাহ আল মামুন। সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়।

চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে মারা যান পলি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় এড়াতে প্রসূতি পলি অধিকারী মৃত্যুর দুই ঘণ্টা পর অক্সিজেন দিয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালে আনার অনেক আগেই প্রসূতির মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পর এখানে রোগী আনা হয়। পরে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে গোপনে দুস্থ হাসপাতালের ব্যবস্থাপক সুমন ফকির, কর্মকর্তা রুস্তম ও গোলাম মোস্তফা তাদের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে পলির মরদেহ নিয়ে যান তার মামার বাড়ি শশিকর থানার দোনারকান্দি গ্রামে। পরে মামা দধিরামের বাড়িতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে মরদেহের শৎকার করা হয়।

এর আগে গত ৫ জানুয়ারি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার কুড়ুলিয়া গ্রামের শারমিন বেগম (২৫) নামের এক গৃহবধূর রক্তের গ্রুপ ভুল নির্ণয় করে রিপোর্ট দেয় দুস্থ মানবতার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে দুস্থ মানবতার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের বাগবিতণ্ডা ঘটে।

এছাড়া অপচিকিৎসা, বিভিন্ন পরীক্ষা ও অপারেশনের নামে রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এসব কারণে মাঝে মধ্যে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মারামারির ঘটনাও দেখা যেত।

আগৈলঝাড়া উপজেলার দুস্থ মানবতার হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে কয়েকটি নিউজ প্রকাশ করা হয়। গতকালও ‘মারা যাওয়ার ২ ঘণ্টা পর অন্য হাসপাতালে রেফার্ড’ শিরোনামে একটি নিউজ প্রকাশ করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিপুল চন্দ্র দাস জানান, গণমাধ্যমের সংবাদের সূত্র ধরে দুস্থ মানবতার হাসপাতালে দুপুরে অভিযান চালানো হয়। এ সময় প্রয়োজনীয় জনবল ও কাগজপত্র দেখাতে না পারায় হাসপাতালের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়।’

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন