২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

বরিশালে অর্ধশতাধিক করাত কল বন্ধে বিপাকে হাজারোধিক শ্রমিক

Zahir Khan

প্রকাশিত: ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ, ১৭ মার্চ ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: হঠাৎ বরিশাল নগরীর প্রায় অর্ধশতাধিক করাত কল বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন মালিক, কাঠ ব্যবসায়ী ও এর সঙ্গে জড়িত হাজারও শ্রমিক। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এমন পরিস্থিতিতে রোজগার বন্ধে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এই পেশার সাথে জড়িত শ্রমিকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি কিছু লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। প্রায় ২০ দিন আগে ওইসব লাইসেন্স নবায়ন করে মিল চালানোর নির্দেশ আসে। এজন্য অনেক মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসকের কাছে দৌড়াদৌড়ি করেও কোনও লাভ হচ্ছে না বিল মালিকদের।

এদিকে করাত কলের একাধিক শ্রমিকরা বলেন, পেশা বলতে মেশিনে কাঠ তুলে তা ফাঁড়তে শিখেছেন। এছাড়া আর কোনও কাজ তারা পারেন না। কাজ করলেই প্রতিদিনের টাকা মেলে। না করলে কিছুই জোটে না। তার ওপর রয়েছে এনজিও’র কিস্তি। সপ্তাহে চার হাজার টাকা গুনতে হয়।

তারা আরও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মিল বন্ধ করে দিলে মালিকদের কিছু আর্থিক ক্ষতি হবে। তাছাড়া কোনও সমস্যা হবে না। কারণ তাদের টাকা আছে। তারা অন্য ব্যবসা করবে। কিন্তু শ্রমিকরা কোথায় যাবে? এজন্য করাত মিল মালিকদের সময় দিয়ে তাদের জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়ার দাবি তুলেছেন শ্রমিকরা। এতে করে ব্যবসা টিকে থাকবে। তারাও কাজ হারাবে না।

ভ্যানগাড়ি ও ঠেলাগাড়ির চালক-শ্রমিকরা বলেন, তাদের কাজ না থাকায় সংসারে খাবার দিতে পারেন না বলে বেশিরভাগ সময় চাঁদমারীতে থাকেন। এরপরও পরিবার থেকে ছেলে-মেয়ে এসে খাবারের জন্য বাজার চাইলে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে চেয়ে যা পাচ্ছেন, তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলছে।

নগরীর চাঁদমারী এলাকাস্থ ‘নাছিমা স মিল’ নামের একটি মিলের মালিক শিবলু মোল্লা জানান, স্বাধীনতার আগে তার দাদা এবং তার অবর্তমানে তার বাবা এটি পরিচালনা করে আসছিলেন। এখন তিনি পরিচালনা করছেন। সরকারের সব ধরনের আইন মেনে বছরের পর বছর ধরে কাঠের ব্যবসা চালিয়ে আসছেন তারা। প্রায় ২০ দিন আগে লাইসেন্স নবায়ন করে মিল চালানোর নির্দেশ আসে। এজন্য মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দৌড়ঝাঁপ করে আসছেন। বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন জেলা প্রশাসকের কাছে যান। আর জেলা প্রশাসক বলছেন, বিষয়টি বন বিভাগ দেখবে।

চাঁদমারী কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক দুলাল হাওলাদার বলেন, এক শহরে দুই নিয়ম। নগরীতে ৫১টি করাত কল রয়েছে। এর মধ্যে চাঁদমারীতে একটি এবং বাজার রোড এলাকা, রূপাতলী লালাদীঘির পাড় ও সাগরদীর বেশ কয়েকটি চালু আছে। নগরীতে যদি করাত কল না রাখা হয় তাহলে ওই মিলগুলো কীভাবে চলছে?

তিনি আও বলেন, ২০ দিনের বন্ধে শুধু চাঁদমারীর কাঠ ব্যবসায়ীদের ক্ষতি প্রায় দুই কোটি টাকা। বন্ধের দিন যতই বাড়বে ক্ষতির পরিমাণও বাড়তে থাকবে। একদিন দোকান খুললেই বেচাকেনা না হলেও খরচ সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা। তাছাড়া যেখানে করাত কল বন্ধ সেখানে কাঠের সব ধরনের অর্ডারও বন্ধ। যা অর্ডার ছিল তা দিতে না পারায় বর্তমানে যেখানে করাত কল সচল রয়েছে, সেখানে চলে যাচ্ছে।

মিল মালিকদের লাইসেন্সের বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সামাজিক বন বিভাগের জিএম রফিক আহমেদ বলেন, শহরের মধ্যে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনও কিছু রাখা যাবে না। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে। তার ওপর মিল মালিকদের কোনও লাইসেন্স নেই। সবাইকে নতুন করে লাইসেন্স করতে হবে।

জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, এটা সম্পূর্ণ বন বিভাগের এখতিয়ারে। আমি শুধু পরিবেশ দূষণমুক্ত একটি বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে বরিশালকে গড়ে তুলতে চাই। এজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

11 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন