২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

বরিশালে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে চলছে দখল সন্ত্রাস

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:০১ অপরাহ্ণ, ২৯ মার্চ ২০২০

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক:: বরিশালের বাবুগঞ্জে বিরোধপূর্ণ এক খন্ড ভূ-সম্পত্তি দখলে নিতে দফায় দফায় সন্ত্রাস চালিয়ে আসছে একটি প্রভাবশালী মহল। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তে¡ও স্থানীয় পাংশা গ্রামের সেই জমিতে একের পর স্থাপনা নির্মাণের পায়তারা চালানো হচ্ছে। অথচ আদালত ওই জমিতে সকল প্রকার কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জারি করে বাস্তবায়নে বরিশাল বিমানবন্দর থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। সর্বশেষ সেই নির্দেশও উপক্ষেতি হয়ে যায় প্রভাবশালীদের অব্যাহত দখল সন্ত্রাসে। বাদী মো. শাজাহান হাওলাদার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আদালতকে সম্প্রতি অবহিত করলে সেখানে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিচারক আবার পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা জারি করেন। কিন্তু প্রভাবশালীদের সন্ত্রাসের আবহে এবারও আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষিত রইল। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার সেই জমিতে থাকা বড় একটি পুকুর থেকে মাছ ধরে নিয়ে গেছে। এসময় প্রতিবাদ করতে গিয়ে জমি মালিক শাজাহান হেনস্থার শিকার হয়েছেন। অথচ তার বিরুদ্ধেই প্রভাবশালী মহলটি উল্টো থানায় মাছ ধরার অভিযোগ এনেছেন। যদিও এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সরেজমিন পরিদর্শনে বিবাদীদের মিথ্যে তথ্যের সত্যতা পেয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে- বাবুগঞ্জ উপজেলার জেএল ৪৪, পাংশা মৌজার ৫২৩ খতিয়ানের এসএ ৪৩৩৪ সহ একাধিক দাগের ২ একর ১৫ শতাংশ জমির মৃত হামেজ উদ্দিন হাওলাদারের ওয়ারিশেরা দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিকালে ভুলক্রমে এই সম্পত্তির ৭৭ শতাংশ স্থানীয় এলেম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির নামের রেকর্ড হলে হামেজ উদ্দিনের ছেলে শাজাহান আদালতে একটি মামলা করেন (মামলা নম্বর ৮৯/২০১১)। রেকর্ড সংশোধনের আর্জি জানিয়ে শাজাহানের দায়ের করা মামলাটির খবরে এলেম উদ্দিনের সন্তানদের সাথে একট্টা হয়ে জমি দখলে নামে ওই প্রভাবশালী মহল।

মামলার বাদী শাজাহান হাওলাদার জানান, জমি দখলে নেওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি আঁচ করতে পেরে বিষয়টি আদালতকে অবগত করে ওই জমিতে নিষেধাজ্ঞা জন্য ১৪৪ ও ১৪৫ ধারা জারির আদেশ চাইলে বিচারক তা বাস্তবায়নে বিমানবন্দর থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। ওই আদেশের প্রেক্ষিতে থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) গোফরান সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং উভয়পক্ষকে বিরোধপূর্ণ সম্পত্তিতে প্রবেশসহ কোন ধরনের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন। বলা বাহুল্য যে- আদালত ও পুলিশের নির্দেশনা উপেক্ষা করে প্রভাবশালী মহলের প্রত্যক্ষ সহায়তায় সেই জমিতে এলেম উদ্দিনের নাতিরা রাতের আধারে একটি ঘর নির্মাণ করে। এবং বাদীকে নানাভাবে ভয়ভীতি ও হয়রানির ওপর রাখে।

জানা গেছে, এই বিষয়টিও সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে অবহিত করলে বিচারত জমিতে ১৮৮ ধারা জারি করেন এবং পুরো ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। তদন্ত বাদীর অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে পুলিশ এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন আদালতে জমা দিলে বিচারক পক্ষ-বিপক্ষকে একটি তারিখ ধার্য করে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেন।

কিন্তু এদিকে আদালতের সকল আদেশ উপেক্ষা করে একের পর এক দখল সন্ত্রাস চালাতে শুরু করেছে প্রভাবশালী মহলটি। এমনকি শোনা যাচ্ছে- বিরোধপূর্ণ সম্পত্তিটি রেকর্ডের বলে বিক্রিরও পায়তারা শুরু করেছে। সর্বশেষ তারা ওই জমির একটি পুকুরের মাছ জোরপূর্বক ধরে নিয়ে গেছে। এসময় বাদী শাজাহান প্রতিবাদ করতে গিয়ে হেনস্থার হলেও উল্টো তার পরিবারের বিরুদ্ধেই থানায় ফোন করে মাছ ধরার অভিযোগ জানানো হয়েছে। ফলশ্রুতিতে ঘটনা তদন্তে গিয়ে থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল ওয়ারেছও হয়েছেন হতবাক-বিস্মিত।

এই পুলিশ কর্মকর্তা ভাষায়, একের পর এক নাটক সাজিয়ে জমিটি দখল করার পায়তারা চালানো হচ্ছে, যা তাদের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু আদালতের নির্দেশ উপেক্ষিত হয়, এমন কর্মকান্ড বরদাশত করা হবে না। বরং আদালত পুরো ঘটনাটি আদালতকে অবহিত করে দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

এদিকে প্রভাবশালী মহল একট্টা হয়ে জমি দখলে নেমে ধারাবাহিক সন্ত্রাস সৃষ্টি করায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন বাদী শাজাহানের পরিবার। আগামীতে ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত হয়ে শাজাহান প্রতিকার চাইবেন বলে নিশ্চিত করেন।’

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন