১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশালে আড়াই মাসেও সন্ধান মেলেনি অপহৃত কিশোরী মিতুর, প্রশ্নবিদ্ধ পুলিশের ভূমিকা

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:০০ অপরাহ্ণ, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

বরিশালে আড়াই মাসেও সন্ধান মেলেনি অপহৃত কিশোরী মিতুর, প্রশ্নবিদ্ধ পুলিশের ভূমিকা
নিজস্ব প্রতিবেদক ।। বরিশালের আগৈলঝাড়ায় অপহরণের আড়াই মাসেও সন্ধান মেলেনি স্কুলছাত্রী কিশোরি মিতুর। আর এক্ষেত্রে আগৈলঝাড়া থানা পুলিশ ও তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গাফিলোতির অভিযোগ করেছেন অপহৃতা কিশোরি মিতুর পরিবার। ভুক্তভোগীর পরিবার জানান, অপহরনের পর গত ১৫ জুলাই ২০২২ইং তারিখে মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশের ভূমিকা ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ। কেননা আড়াই মাস পাড় হয়ে গেলেও ডিজিটাল বাংলাদেশে নানান প্রযুক্তির ব্যবহার থাকার পরেও অপহৃতা মিতুর কোন সন্ধান দিতে পারেননি আগৈলঝাড়া থানা পুলিশ।
তারা শুধুই আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন অপহৃতা কিশোরীর পরিবারকে। পুলিশের এরূপ কান্ডে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাড়িয়েছে তাদের কর্মকান্ড। আর একারনে পুলিশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা। মামলার এজাহার সূত্রে জানাগেছে, আগৈলঝাড়া থানাধীন ভদ্রপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে স্কুলছাত্রী কিশোরি ইসরাত জাহান মিতু (১৪) কে উজিরপুর থানার দত্তেসর গ্রামের মৃত আজিজ সরদারের ছেলে মোঃ সাব্বির রহমান সরদার প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো।
প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হলে সাব্বির মিতুকে কু প্রস্তাব দিত এবং বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাতো। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ জুলাই ২০২২ইং তারিখ সকাল আনুমানিক পৌনে ৭টার সময় তার নানাবাড়ি যাবার সময় আগৈলঝাড়া থানাধীন ৫নং রত্নপুর ইউনিয়নের চাপাচুপা গ্রামের কালিখোলা সংলগ্ন স্থানে পৌছালে বখাটে সাব্বির রহমান তার সহযোগীদের নিয়ে মিতুকে ফুঁসলিয়ে ও প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় অপহৃতা মিতুর বাবা আগৈলঝাড়া থানায় একটি সাধারন ডায়েরি দায়ের করেন।
এ বিষয়ে অপহৃতা মিতুর বাবা আব্দুর রাজ্জাক জানান, দায়ের করা ডায়েরির তদন্তভার পড়ে এসআই মিল্টনের ওপরে। এসআই মিল্টন বখাটে সাব্বিরের আত্মীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগ করে মিতুর বাবাকে সমঝোতার প্রস্তাব দেন এবং বলেন সমঝোতা হলে মিতু কাছাকাছি আছেন অল্প সময়ের মধ্যেই চলে আসবে। তার প্রস্তাবে মিতুর বাবা আব্দুর রাজ্জাক রাজি হলেও পরবর্তীতে আর মিতুকে ফিরিয়ে আনতে পারেননি এসআই মিল্টন। অপহৃতা কিশোরি মিতুর বাবা আব্দুর রাজ্জাক আরো বলেন, আমার মেয়েটা বেঁচে আছে না কি বখাটেরা মেরে ফেলেছে তাও জানিনা।
সমঝোতার বিষয়ে এসআই মিল্টনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অপহৃতা মিতুর বাবা ডায়েরি করার পরে তদন্ত আসে আমার কাছ। তখন মিতুর বাবা জানায় যেকোন মূল্যে মিতুকে ফেরত চায়। তাই আমি অপহরণকারি সাব্বিরের স্বজনদের সাথে কথা বললে স্বজনরা মিতু কাছাকাছি আছে জানিয়ে সমঝোতার প্রস্তাব দিতে বলেন।
আর সাব্বিরের স্বজনদের কথামতোই আমি মিতুর বাবাকে সমঝোতার কথা বলি। এসআই মিল্টন আরো বলেন, পরবর্তীতে মিতুর বাবা মামলা দেয়ার পরে তদন্তের দায়িত্ব পড়ে এসআই নুরে আলমের কাছে। পরবর্তীতে কি হয়েছে তা এসআই নুরে আলম বলতে পারবেন বলেও তিনি জানান। এসআই নুরে আলমের নিকটে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার বিষয়ে তদন্ত চলছে। এখনো তাদের বিষয়ে কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
আমরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। তবে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে অপহৃতা মিতুর মামা মোঃ জাফর বলেন, আমাদের মাত্র ১৪ বছরের মেয়েটি আজ প্রায় ৩ মাস ধরে নিখোঁজ। আমরা আজো জানতে পারলাম না আমাদের মেয়েটি বেঁচে আছে না মরে গেছে। আমরা এখন কোথায় যাবো? কার কাছে সাহায্য চাবো? থানা পুলিশ এতদিনেও কোন খোঁজ দিতে পারলো না।
আমরা কি কখনো আর আমাদের মেয়েকে ফিরে পাবোনা? একটা বখাটে দিনেদুপুরে তার সহযোগিদের নিয়ে মিতুকে অপহরন করে নিয়ে যায়। অথচ থানা পুলিশের ভূমিকা কি? একটা বখাটেকে এতদিনেও গ্রেফতার করা তো দূরের কথা কোন খোঁজও দিতে পারলো না।
এভাবে হলে কিভাবে, কার ওপরে আমরা আস্থা রাখবো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলার ছরোয়ার বলেন তিনি দূরে আছেন। মামলার বিষয়ে এখন তিনি কিছুই বলতে পারবেন না। তবে এরকম একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনায় থানার একজন অফিসার ইনচার্জের এরকম বক্তব্যে ভুক্তভোগি পরিবার কিভাবে পুলিশের ওপরে আস্থা রাখতে পারবে এমনই প্রশ্ন ভুক্তভোগী পরিবারের?
5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন