২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বরিশালে প্রশাসনের জোড়ালো টহল, তবুও বিভিন্ন অজুহাতে থেমে নেই আড্ডা!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:০৫ অপরাহ্ণ, ২৯ মার্চ ২০২০

মাহাদী হাসান, সাইদুল ইসলাম :: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে মানুষকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। মানুষকে ঘরে রাখতে প্রচার প্রচারণা থেকে শুরু করে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের সেই পরামর্শ বা সরকারের নির্দেশনা মানছে না অনেকেই। বিভিন্ন অজুহাতে বাইরে বের হয়ে আড্ডা দিচ্ছেন কেউ কেউ।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণকে বিশ্বব্যাপী মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশেও সবাই ভীত এই সংক্রামক রোগ নিয়ে। করোনা থেকে বাচতে সচেতনতা অবলম্বন করতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলার কথা বলা হচ্ছে। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।

বরিশাল ঘুরে দেখা গেছে, গত দুদিনের তুলনায় রোববার রাস্তাঘাটে জনসাধারণের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। কেউ আড্ডা দিচ্ছেন চায়ের দোকানে। আবার কেউ ফাকা রাস্তায় ঘুরছেন। গত কয়েকদিন টানা বাড়িতে অবস্থান করে হাপিয়ে উঠেছেন কেউ কেউ; তাই বের হয়েছেন রাস্তায়। জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া কিংবা কর্মজীবী মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।

নথুল্লাবাদ রুপাতলি বাসস্টপ এলাকায় বিএম কলেজ ছাত্রের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, বেশ কয়েকদিন বাসা থেকে বের হইনি। কিন্তু কতক্ষণ বাসায় থাকা যায়! তাই একটু হাটাহাটি করতে বাসার নিচে নামলাম।

পোর্ট রোড এলাকায় খোলা রয়েছে কাঁচাবাজায় এবং নিত্য পণ্যের দোকান। সেখানেও ক্রেতার সংখ্যা নেহাত কম নয়। জহির হাসান এসেছেন নিত্যপণ্য কিনতে। তিনি বলেন, পাঁচদিন আগে বাজার করেছিলাম, সেগুলো শেষ হয়ে গেছে। তাই সওদা করতে আসলাম। এই পরিস্থিতিতে বের হতে ইচ্ছা না করলেও বাধ্য হয়েই বের হয়েছি।

বরিশালে একটি অস্থায়ী চায়ের দোকানের পাশে আড্ডা দিচ্ছিলেন বেশ কয়েকজন রিকশাচালক। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক দিনের ‍তুলনায় আজ তাদের আয় বেশি হয়েছে। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বন্ধ থাকায় তাদের যাত্রীর সংখ্যাও বেশি বলে দাবি করেছেন তারা।

রুপাতলি এলাকায়ও ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কেউ কেউ পরিস্থিতি কেমন সেটা পর্যবেক্ষণ করতে বের হয়েছেন বলে দাবি করেছেন।গাউছিয়া রোডের স্থানীয় বান্দিনা মাসুম বিল্লা জানান, বাইরের বাতাস না নিলে অসুস্থ হয়ে পড়ি। এ কারণে একটু হাটাচলা করছি।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রথমে বেশ কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে গত শুক্রবার করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের সহনশীলতা, পেশাদারিত্ব ও বিনয়ের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারী। বার্তায় তিনি জানান, জনজীবন সচল রাখতে চিকিৎসা, ওষুধ, নিত্যপণ্য, খাদ্যদ্রব্য, বিদ্যুৎ, ব্যাংকিং ও মোবাইল ফোনসহ আবশ্যক সকল জরুরি সেবার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও যানবাহনের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করুন এবং দায়িত্ব পালনকালে সাধারণ জনগণের সাথে বিনয়ী, সহিষ্ণু ও পেশাদার আচরণ বজায় রাখুন।

এদিকে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন কেউ গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়নি বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। রোববার সংস্থাটির পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

আইইডিসিআর বলছে, গত দুই দিনে কারও মৃত্যুও হয়নি। আইইডিসিআর’র পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তাদের কারও দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। দেশে আজ পর্যন্ত ৪৮ জন শনাক্ত হয়েছে। আর সুস্থ হয়েছে ১৫ জন। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে তিনজনকে শনাক্ত করা হয়। তখন বলা হয়, এই তিনজনের মধ্যে দুজন ইতালি থেকে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। তাঁদের কাছ থেকে একজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত দেশে পাঁচজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। গত ১৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

বিশ্বজুড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। সারা পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। এর বেশিরভাগই ইতালি ও স্পেনে। ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত বিশ্বের ১৯৯ দেশ ও অঞ্চলে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ছয় লাখ ৬৩ হাজার ৭৪০ জন। মারা গেছেন ৩০ হাজার ৮৮০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে এক লাখ ৪২ হাজার ১৮৩ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ইতালিতে। দেশটিতে গত শনিবার পর্যন্ত ১০ হাজার ২৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আক্রান্ত ৯২ হাজার ৪৭২ জন।

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন