২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

বরিশালে বাবা-ছেলেকে আটকে পেটালেন আওয়ামী লীগ নেতা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:৫৭ অপরাহ্ণ, ২১ অক্টোবর ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বরিশাল নগরীর সিঅ্যান্ডবি রোড এলাকায় দোকান নির্মাণে বাঁধা দিয়ে বাবা ছেলেকে পিটিয়েছেন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা। শহরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মনিরুল ইসলাম ওই এলাকার বাসিন্দা আলাউদ্দিন ও তার ছেলেকে বুধবার বিকেলে বিট পুলিশিং কার্যালয় অভ্যন্তরে আটকে মারধর করেন। ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী জামালের উপস্থিতিতে ওই মারধরে ঘটনা কোতয়ালি পুলিশ গিয়ে পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু এই ঘটনায় কাউকে আটক করেনি।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে- সিঅ্যান্ডবি রোড লাগোয়া একটি জমি নিয়ে উপজেলা পরিষদের সাথে একই এলাকার বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন মিয়ার বিরোধ চলছে, যা নিয়ে আদালতে মামলাও বিচারাধীন আছে। সেই জমিতে আলাউদ্দিন মিয়া দোকান নির্মাণ করতে গেলে ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম বাঁধা দেন। সেই সাথে বিষয়টি থানায় অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।

সূত্র জানায়, এই ঘটনার কিছুক্ষণ পরে আলাউদ্দিন মিয়া ও তার ছেলে হাসিব হাসানকে ফোন করে ২৩ নম্বর ওয়ার্ড বিট পুলিশিং কার্যালয়ে ডেকে নেন। সেখানে পৌছাতে কিছুটা বিলম্ব হলে বাবা ছেলের ওপর আ’লীগ নেতাসহ তার সহযোগীরা চড়াও হয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে আ’লীগ নেতা ও তার সহযোগীদের সাথে বাবা ছেলের প্রথমে হাতাহাতি ও পরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে বাবা ও ছেলে আ’লীগ নেতাকে মারধর করলে একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী জামাল পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে থানায় খবর দেন। পরে এএসআই মামুনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গিয়ে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে এবং বাবা ছেলেকে গাড়িতে তুলে থানার উদ্দেশে রওনা হন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে, বাবা-ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার সময় আ’লীগ সভাপতি মনিরুল ইসলাম ও তার সহযোগী তাদের পুলিশের গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে আবারও কার্যালয়টি মধ্যে নিয়ে যায়। এই বিষয়টি কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিশ্চিত হয়ে সেখানে পুলিশের আরও একটি টিম পাঠান।

জানা গেছে, আলাউদ্দিন মিয়া ২৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি হলেও তিনি ও তার ছেলে হাসিব ওয়ার্ড আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী জামালের লোক হিসেবে পরিচিত এবং তারা একই এলাকার বাসিন্দা।

আলাউদ্দিন মিয়া বরিশালটাইমসকে জানান, সিঅ্যান্ডবি রোডের পাশে পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত জমিটি নিয়ে উপজেলা পরিষদের সাথে মামলা চললেও ইতিমধ্যে তারা কয়েক দফা রায় পেয়েছেন। সেই জমিতে দোকান নির্মাণ করতে গেলে ওয়ার্ড আ’লীগ সভাপতি মনিরুল ইসলাম বাঁধা দেন এবং সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র নির্দেশনা মতে সেখানে ওয়ার্ড কার্যালয় নির্মাণ প্রস্তুতি চলছে বলে অবহিত করেন। এর পরে কাজ বন্ধ রাখলে সেখানে পুলিশ গিয়েও একই নির্দেশনা দিয়ে রাতে ওসির সাথে দেখা করতে বলেন। এমন সময় আ’লীগ সভাপতি ফোন করলে সেখানে যেতে কিছুটা বিলম্ব হলে তিনি তার সহযোগীরা ক্ষুব্ধ হয়ে হামলা করে। এসময় সাথে থাকা ছেলে প্রতিবাদ করলে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হলে আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী জামাল ভুমিকা রেখে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

সূত্রগুলো জানায়, এমন সময় পুলিশের একটি টিম এসে বাবা ছেলেকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন আ’লীগ সভাপতির নেতৃত্বে তাদের গাড়ি থেকে টেনে নামানো হয় এবং ফের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। পরিস্থিতি আরও বেগতিক প্রতীয়মাণ হলে সাধারণ সম্পাদক জামাল থানা পুলিশকে অবহিত করলে পুলিশের আরও একটি টিম আসে। এবং তাদের উদ্ধার করে।

তবে বাবা ছেলেকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে আ’লীগ নেতা মনিরুল ইসলাম বলছেন, বিষয়টি তার সাধারণ সম্পাদক পরবর্তীতে মিমাংসা করে দিয়েছেন।

এই বিষয়ে জানতে ওয়ার্ড আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী জামালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনাটি চেপে যাওয়ার অনুরোধ রেখে বরিশালটাইমসকে বলেন, উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে মিমাংসা করে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা মামুন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে জানতে বাবা ছেলেকে থানায় ডাকা হয়েছে। সেই সাথে ওয়ার্ড আ’লীগ সভাপতিকেও উপস্থিত থাকতে বলা হয়।’

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন