২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

বরিশালে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে শিশুদের ক্লাস

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ, ২৩ এপ্রিল ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক:: বিদ্যালয় ভবন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় খোলা আকাশের নিচে চলে ক্লাস। কোন রকমের মেঘ দেখলেই ছুটি দিতে হচ্ছে স্কুল। এভাবেই চলছে বরিশালের বাকেরগঞ্জ ২২ নম্বর চর দাড়িয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছাদ ও দেয়ালের একাধিক স্থানে ফাটল দেখা দেওয়ার দুই মাস আগে ভবনটিতে ক্লাস নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকে বিদ্যালয়ের সামনে খোলা আকাশের নিচে আড়াই শ’ শিক্ষার্থীকে নিয়মিত পাঠদান করা হচ্ছে। এই বিষয়টি বেশ কয়েক দফা চিঠির মাধ্যমে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করা হলেও কোন সুফল পাওয়া যায়নি। বরং স্কুল ভবনটি পরিদর্শনে আসছি আসবো করে দুই মাস পার করে দিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিকুল আলম।

বিষয়টি নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এলাকায়ও আসতে দিতে চাইছেন না। এতে দিনে দিনে স্কুলটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

সরেজমিন ঘুরে গিয়ে দেখা গেছে- পুরো বিদ্যালয় ভবনের ভেতর ও বাইরের বিভিন্ন অংশের পলেস্তারা খসে পড়েছে। ফাটল ধরেছে ভবনের বিভিন্ন স্থানে। তা ছাড়া শ্রেণিকক্ষের ভেতরের মূল পিলারেরও পলেস্তারা ধসে রড দেখা যাচ্ছে। ফলে ভবনটি যেকোন সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় সময় পার করছে শিক্ষক অভিভাববক ও শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষকদের সাথে আলাপচারিতায় জানা গেছে- বাকেরগঞ্জ ২২ নম্বর চর দাড়িয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়লটি ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে জাতীয়করণ করে সরকার। ১৯৮২ সালে নির্মিত হয় স্কুল ভবন। কিন্তু এরপর ভবনটি আর কোনো সংস্কার হয়নি। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে বিদ্যলয়গুলোর ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে গেছে।

বর্তমানে স্কুলটিতে ২৬৩ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। তাদের শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করানো হচ্ছে। শিক্ষক রয়েছেন ৫ জন।

প্রধান শিক্ষিকা আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, স্কুল ভবনটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যেকোন সময়ে ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যে কারণে ভবনটি নিরাপদ না মনে করে শিশু শিক্ষার্থীদের বাইরে খোলা মাঠে পাঠদান করা হচ্ছে। কিন্তু বেঞ্চ সংকটের কারণে চাটাইতে বসে শিক্ষা গ্রহণ করছে শিক্ষার্থীরা। এই বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা প্রশাসনকে একাধিকবার অবহিত করা হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলশ্রুতিতে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

অবশ্য স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লাল হাওলাদারের অভিযোগও এমনটাই। তিনিও বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে দুই মাস আগে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি কর্ণপাত করেনি। পরে অবশ্য পরিদর্শনের কথা জানালেও আসছি আসবো করে আর আসেননি।

এই বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থী অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও সর্বশেষ ১৫ এপ্রিল আবারও একটি চিঠি পাঠিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবনের বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবারও তিনি কোন সাড়া দেননি অভিযোগ করেছেন লাল হাওলাদার।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম বলছেন, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির প্রেরিত চিঠি হাতে পাওয়ার পরে তিনি বিষয়টি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন। কিন্তু স্কুল ভবনটি পরিদর্শনের কথা থাকলেও সময় সল্পতার কারণে তিনি যেতে পারেননি বলে দাবি করেন।

এই বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ মজুমদারের ভাষ্য হচ্ছে- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান না করানোর জন্য সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও নতুন করে বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি এসেছে। ১৫ দিনের মধ্যে তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশনা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।’

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন