২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

বরিশালে শতকোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি দখল, কথিত আ’লীগ নেতার ভবন নির্মাণ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:৫৬ অপরাহ্ণ, ১৪ জুলাই ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: করোনা দুর্যোগের মাঝেই বরিশাল নগরীতে শতকোটি টাকা মূল্যের সরকারি সম্পত্তি প্রায় দখল হয়ে গেছে। নগরীর বান্দরোডস্থ শিশু পার্কের পেছনে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন এক একর দশ শতক জমিতে কয়েকজন প্রভাবশালী মিলে নির্মাণ করছে বহুতল ভবন। আর সেখানে দাড়িয়ে থেকে প্রতিনিয়ত ওই ভবন নির্মাণ কাজের তদারকি করেন স্থানীয় এক কথিত আ’লীগ নেতা । শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন নামের ওই কথিত আ’লীগ নেতা বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ সারির এক নেতার শ্বশুরের সাথে একজোট হয়ে জমিটি দখল করছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

করোনা দুর্যোগে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে আসার মোক্ষম সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তারা ওই নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে চালিয়ে যাচ্ছে। মূল্যবান ওই সম্পত্তিটি দখল নেয়া নিয়ে জেলা পরিষদ অবগত থাকলেও রহস্যজনক কারণে নীরব থাকায় পরিষদের সদস্যদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম অসন্তোস।

জানা যায়, শতকোটি টাকা মূল্যের ওই সম্পত্তিটি জেলা পরিষদের বাংলোর জন্য নির্ধারিত ছিলো। ইতিপূর্বে সেখানে বাংলো নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে কিছু অংশ করা হলেও নানান জটিলতার কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘদিন জমিটি ফাঁকা পড়ে থাকলেও জেলা পরিষদ তাদের জনবল দিয়ে দেখভাল করছিলো। কিন্তু মাস খানেক পূর্বে হঠাৎ করে সেখানে নির্মাণ কাজ শুরু করে এবং কামাল নামের ওই ব্যক্তিকে দাড়িয়ে থেকে তদারকি করতে দেখা যায়। জানা গেছে, কামাল হোসেন বরিশাল ট্যাংক-লরি শ্রমিক ইউনিয়ন নামকরণে একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক।

এই কামাল হোসেনের দাবি, জমিটি এক বছর পূর্বে ২৩ ভূমিহীনের নামে ইজারা নেওয়া হয়েছে। সেখানে আপাতত ট্যাংক-লরি শ্রমিক ইউনিয়নের নামকরণে একটি ভবন করা হচ্ছে। যে সংগঠনের সভাপতি তিনি বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদস্থ এক নেতার শ্বশুর বলে অবহিত করেন তিনি। এই বিষয়টি নিয়ে জেলা পরিষদ মুখ না খুললেও জানা গেছে পরিষদের সদস্যদের মধ্যকার অসন্তোসের কথা।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক সদস্য জানান, ভূমিহীন ২৩ জনের নামে জমিটি ইজারা দেওয়ার জন্য একটি সুপারিশ আসার ব্যাপারে শুনেছি। কিন্তু ইজারা দেওয়া হয়েছে কিনা তা এখনও পরিষ্কার নয়। কারণ পরিষদের সদস্যরা এই বিষয়টির ঘোর বিরোধিতা করছে। ফলে বিষয়টি আপাতত স্থগিত থাকার কথা। কিন্তু কেউ যদি এর মাঝেই ভবন নির্মাণ করে সেটা আইন বর্হিভুত বলে মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে জানতে জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মানিক হারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বরিশালটাইমসকে বলেন, জমিটি ইজারা দেওয়া হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে কাগজপত্র না দেখে মন্তব্য করা যাচ্ছে না।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, শতকোটি টাকা মূল্যের এই সম্পত্তিটি ইজারার নেপথ্যে এক কোটি টাকার বেশি বাণিজ্য হয়েছে। অথচ ২৩ জনের কাজ থেকে জেলা পরিষদকে ম্যানেজের নামে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা উত্তোলন করে। সবমিলিয়ে কোটি টাকার ওপরে উত্তোলন হলেও জেলা পরিষদকে মাত্র ১০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। বাকি টাকা কোথায় বা কে নিয়েছে তার কোনো হদিস নেই। একাধিক সূত্র জানায়, এই আর্থিক লেনদেন জেলা পরিষদের সাথে সম্পাদন করেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের ওই শীর্ষ পদস্থ নেতার শ্বশুর।

জেলা পরিষদের অপর একটি সূত্র জানায়, এখানকার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ইজারার বিষয়টি গোপন করলেও অনেক আগেই ২৩ জন ভূমিহীনের নামে একসনা ইজারা দেওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু জমিটি যেহেতু ডাকবাংলোর নির্ধারিত তাই অনেকেই মুখ খুলছেন না বিতর্ক এড়াতে।

সূত্রগুলো জানায়, শিশু পার্কের পেছনের ওই জমিটির সাম্প্রতিকালে মাপজোক করে ২৩টি প্লট আকারে ভাগ করে। কথিত ওই আ’লীগ নেতা কালাম উপস্থিত থেকে শ্রমিক সংগঠনটির কার্যালয়ের জন্য সামনের অংশের কিছু জমি চিহ্নিত করে। এবং বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদস্থ ওই নেতার শ্বশুর ও শ্বাশুড়ির জন্য দুটি প্লট নির্ধারিত রাখে। এর কিছুদিন পরই সেখানে ইট-বালু দিয়ে শ্রমিক সংগঠনটির ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এই বিষয়টি কামাল এই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেন।

এসব তথ্যের বরাত দিয়ে দ্বিতীয় দফায় জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বরিশালটাইমসকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে চেয়ারম্যান মহোদয় বিস্তারিত এবং ভালো বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মইদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জমিটির ইজারা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু পরিষদের সিদ্ধান্ত ব্যতিত কিভাবে এবং কাদের নামে দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বরিশালটাইমসকে জানান, শহরের কাঁচাবাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীকে দেওয়া হয়। সরকারি ইজারাপ্রাপ্ত জমিতে ইট-বালু দিয়ে ভবন নির্মাণের সুযোগ আছে কি এবং আর্থিক লেনদেন হয়েছে এমন প্রশ্ন করলে মইদুল ইসলাম অনেকটা বিব্রত হয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন