২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বরিশালে ৫৭ বছরেও পূর্ণতা পায়নি বিসিক শিল্পনগরী

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:৫১ অপরাহ্ণ, ০৭ নভেম্বর ২০১৮

দীর্ঘ ৫৭ বছরেও পূর্ণাঙ্গতা পায়নি বরিশালের বিসিক শিল্পনগরী। শিল্পনগরীতে শিল্প-কলকারখানা স্থাপনের জন্য নির্দিষ্ট ৪৪৬টি বিভিন্ন গ্রেডের প্লটের মধ্যে সেখানে ৬৮টি ফাঁকা পড়ে আছে এখনও। কাগজে-কলমে ৩৭৮টি শিল্প ইউনিট বরাদ্দের কথা বলা হলেও এর মধ্যে ১৭১টিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প ইউনিট আছে। এগুলোর মধ্যে বাস্তবিক অর্থেই চালু রয়েছে মাত্র ৫০টি। ১৯টি ইউনিট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে- উদ্যোক্তাদের শিল্প ইউনিট গড়তে উৎসাহ দেওয়ার জন্য নামমাত্র মূল্যে জমি বরাদ্দ দেওয়া হলেও অবকাঠামোগত অপর্যাপ্ততা, সংস্কারের অভাব ও সর্বোপরি দূরদর্শিতার অভাবে বিসিক শিল্পনগরী পূর্ণাঙ্গতা পাচ্ছে না।

অভিযোগ রয়েছে- সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার কোনও উদ্যোগ কখনও নেয়নি। রাস্তাঘাট এবং আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল। ষাটের দশকে নির্মিত সড়কগুলোর বেশিরভাগই এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পানি সরবরাহ ব্যবস্থাও চাহিদার তুলনায় খুবই কম। তাছাড়া যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে তা পাওয়াও সহজসাধ্য নয়।

সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়েছে মহাসড়ক কিংবা নদীবন্দর থেকে এ শিল্পনগরীর দূরত্বের বিষয়টি। মহাসড়ক এবং নদীবন্দর দূরে থাকায় এখানে উৎপাদিত শিল্পপণ্য সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে মালিকদের বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়।

বর্তমানে এখানে চালু থাকা শিল্প কলকারখানাগুলোর মধ্যে খান সন্স টেক্সটাইল মিলস, বেঙ্গল বিস্কুট লিমিটেড, মোহাম্মদী ইলেকট্রিক প্রজেক্ট, সুগন্ধা ফ্লাওয়ার মিলস, আজমিরী খাজা বিস্কুট, বরিশাল আয়রণ মিলসহ অন্য শিল্প ইউনিটগুলোও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

বিসিক শিল্প সমিতির সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান অহিদ বরিশালটাইমসকে বলেন- উদ্যোক্তার অভাব এবং ব্যাংকের অনমনীয়তায় নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না। অথচ বরিশাল জেলায় মাছ, ধান, সুপারি, আমড়া, পেয়ারা, কাঠ, চামড়া, খরকুটা, আঁখ, বীজ, শাক-সবজি, পান, বাঁশ, মরিচ, হলুদ ও পাটের মতো মূল্যবান কাঁচামাল রয়েছে।

এগুলোর ওপর ভিত্তি করে রাইস মিল, বেকারি, গরু ও হাঁস মুরগীর খামার, মিনারেল ওয়াটার, আচার জাতীয় পণ্য, জুটমিল, সার কারখানা, প্লাস্টিক পণ্য, ওষুধ, কসমেটিকস স্টেশনারিসহ প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ধরনের প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে বরিশাল অঞ্চলের চাহিদা পূরণ এবং হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে।

১৯৬০-৬১ সালে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে নগরীর লাকুটিয়া সড়কের পাশে ১৩০.৬১ একর জমিতে বরিশাল বিসিক শিল্প নগরী গড়ে তোলা হয়। পরে ১৯৮৯ সালে প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে স্থানান্থর করা হয়। বিপুল অর্থ ব্যয়ে সেখানে ৪৪৬টি প্লট নির্মাণ করা হয়। জমির পরিমান অবস্থান ও ধরনভেদে প্লটগুলোকে ৪টি ভাগে ভাগ করা হয়।

৩৭.৮৮ শতাংশ আয়তনের এ গ্রেডের প্লটের এককালীন দাম ধরা হয় ১১ লাখ টাকা, ২০.৬৬ শতাংশ আয়তনের বি গ্রেডের প্লটের দাম ৬ লাখ টাকা, ১৩.৭৭ শতাংশের সি গ্রেডের প্লটের দাম ধরা হয় ৪ লাখ টাকা এবং এফ গ্রেডের প্লটের দাম ধরা হয় ২ লাখ টাকা। প্লটের দাম একবারে দিতে না পারলেও ১০ শতাংশ বেশি দিয়ে কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ রয়েছে।

সুযোগ-সুবিধার ভিওিতে প্লটগুলোতে উন্নত ও অনুন্নত দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে উন্নত প্লট ১৬৫টি ও অনুন্নত ১৩৩টি। প্লটের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৭৫টি।

বাকি ৭১টি উন্নত ও ১৩৩টি অনুন্নত প্লট অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকার সুযোগে মাদক ব্যবসায়ীদের আড্ডাস্থল এবং গো-চারণভুমিতে পরিনত হয়েছে।

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু নগরীর বিভিন্ন কলকারখানা পরির্দশন শেষে বরিশাল বিভাগের সব বিসিক কর্মকর্তার সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। এ সময় স্ব-স্ব এলাকায় থাকা বিসিক শিল্পনগরীগুলো যথার্থ অর্থে শিল্পনগরীতে পরিনত করার ব্যাপারে তিনি সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

বিসিক উপ-মহা ব্যবস্থাপক বরিশালটাইমসকে জানান, বাড়তি সার্ভিস চার্জ দিয়ে প্লটগুলোর ১০ বছর মেয়াদে কিস্তিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এক্ষেত্রে ঋণ সুবিধাসহ শিল্প ইউনিট স্থাপন, উৎপাদন, বিপনের সব ক্ষেত্রে বিসিকের দেওয়া সুযোগ-সুবিধাও পাওয়া যাবে।

শিল্পমন্ত্রী ২০১৪ সালে বিসিক এলাকা পরির্দশন শেষে এগুলোর উন্নয়নে ৪২ কোটি টাকার প্রকল্প পরিকল্পনা করে শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। প্রকল্প পাস হলে অচিরেই বরিশাল বিসিক পূর্ণাঙ্গতা পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বরিশাল বিসিকের কর্মকর্তা মো. সফিউল করিম বরিশালটাইমসকে জানান, পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে পূর্ণাঙ্গ শিল্পনগরী গড়ে না ওঠার মূল কারণ ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে নানা জটিলতা। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের আওতায় এখানে বিদ্যুৎ এবং পানির বিলের ক্ষেত্রে তেমন কোনও সুযোগ-সুবিধাও পাওয়া যায় না। যে ৫০টি কারখানা চালু আছে সেগুলোর প্রতিদিন ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। অথচ পাচ্ছে মাত্র ১ মেগাওয়াট। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ও আলাদা ফিডারের আওতায় এনে কারখানাগুলোকে নিয়মিত সচল রাখার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগে বারবার আবেদন করেও কোনও সমাধান পাননি বিসিক কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া বিসিকের পরিবেশ বিভিন্ন কারণে শিল্প চালানোর জন্য অনুপোযোগী হয়ে উঠেছে। তাই স্থানীয় প্রশাসন, জনগণ ও সরকারের এই কুটির শিল্পের বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি।’

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন