১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বরিশাল জেলা নামকরণের নেপথ্যে…

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:৩৩ অপরাহ্ণ, ৩১ অক্টোবর ২০১৮

৫৬ হাজার বর্গমাইল আয়তনের দেশ বাংলাদেশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, দৃষ্টিনন্দন জীবনাচার মন কাড়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ ও মিনার, নদী, পাহাড়, অরণ্যসহ হাজারও সুন্দরের রেশ ছড়িয়ে আছে টেকনাথ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত।

দেশের আট বিভাগে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ) ৬৪ জেলা। প্রতিটি জেলার নামকরণের সঙ্গে রয়েছে ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাস। এসব ঘটনা ভ্রমণপিপাসু উৎসুক মনকে আকর্ষণ করে। তাই বাংলা ট্রিবিউন জার্নিতে ধারাবাহিকভাবে জানানো হচ্ছে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার নামকরণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

বরিশাল জেলা
নদ-নদী, খাল-বিল, অরণ্য ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ বরিশাল। এ অঞ্চল একসময় ‘বাকলা’ নামে পরিচিত ছিল। ‘বাকলা’ অর্থ শস্য ব্যবসায়ী। এটি এসেছে আরবি শব্দ থেকে। বাকলা বন্দরে আরব ও পারস্যের বণিকরা বাণিজ্য করতে আসতেন। কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত এ শহরের পুরনো নাম চন্দ্রদ্বীপ। দেশের খাদ্যশস্য ও মৎস্য উৎপাদনের অন্যতম মূল উৎস বরিশাল। এই জেলাকে বলা হয় ‘বাংলার ভেনিস’।
১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই অঞ্চল ‘বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ’ নামে পরিচিত ছিল। বরিশালের ইতিহাস গ্রন্থে সিরাজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘বাঙালি জাতির আদি বাসস্থান ছিল চন্দ্রদ্বীপ।’ এখানকার কুলিনসমাজ ‘বাকলা সমাজ’ নামে খ্যাত ছিল। ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা জেলার দক্ষিণাঞ্চল নিয়ে বাকেরগঞ্জ জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮০১ সালে জেলার সদর দফতর বাকেরগঞ্জ জেলাকে বরিশালে (গিরদে বন্দর) স্থানান্তরিত করা হয়। কীর্তনখোলা নদীর ওপরে বরিশাল নৌবন্দর অবস্থিত। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী-বন্দর।

বরিশাল জেলার নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। জনশ্রুতি রয়েছে, সেখানে বড় বড় শাল গাছ জন্মাতো। এই বড় শাল গাছের মাধ্যমে ‘বরিশাল’ নামের উৎপত্তি। কেউ কেউ দাবি করেন, পর্তুগিজ বেরি ও শেলির প্রেমকাহিনীর জন্য ‘বরিশাল’ নামকরণ হয়েছে এই জেলার।

অন্য একটি লোকশ্রুতি থেকে জানা যায়, গিরদে বন্দরে (গ্রেট বন্দর) ঢাকার নবাবদের বড় বড় লবণের গোলা ও চৌকি ছিল। ইংরেজ ও পর্তুগিজ বণিকরা বড় বড় লবণের চৌকিকে ‘বরিসল্ট’ বলতো। বড় শব্দটিকে ইংরেজরা উচ্চারণ করতো ‘বরি’ আর সল্ট হলো লবণের ইংরেজি। অনেকের ধারণা, এখানকার লবণের দানাগুলো বড় বড় ছিল বলে ‘বরিসল্ট’ বলা হতো। পরবর্তী সময়ে ‘বরিসল্ট’ শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে ‘বরিশাল’ নামে পরিচিতি পায়।

বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বরিশাল অসাধারণ স্থান দখল করে আছে। বাঙালির অনেক কীর্তি ও কৃতিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বরিশালের নাম। মহান নেতা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, কবি সুফিয়া কামাল, কবি জীবনানন্দ দাশ, চারণকবি মুকুন্দ দাসসহ আরও অনেক কীর্তিমান জন্ম নিয়েছেন বরিশালে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে বরিশাল উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।

গুঠিয়া মসজিদ (ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স)
বরিশাল জেলায় কিছুসংখ্যক প্রাচীন মসজিদ, মঠ ইত্যাদি স্থাপত্যকর্মের নিদর্শন পাওয়া যায়। এ জেলার অনেক মসজিদের গঠন ও কারুকার্যের মধ্যে খানজাহান আলীর মসজিদের স্থাপত্যরীতির প্রভাব লক্ষণীয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য উজিরপুরের গুঠিয়া বায়তুল আমান মসজিদ, গৌরনদীর কসবা মসজিদ, মিয়াবাড়ি মসজিদ, কমলাপুর মসজিদ।

দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে কীর্তনখোলা নদী, মাধবপাশার দুর্গাসাগর দীঘি, কলসকাঠি জমিদার বাড়ি, পাদ্রিশিবপুর গির্জা, সফিপুর ইউনিয়নের হিজলতলার বিল, হজরত মল্লিক দূত কুমার শাহের (র.) মাজার, সরকার মঠ, পঞ্চরত্ন মঠ, উলানিয়া জমিদার বাড়ি, চাঁদশী ঈশ্বরচন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়, অক্সফোর্ড মিশন বিদ্যালয়, আবদুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়াম, বঙ্গবন্ধু উদয়ন তথা বেলস পার্ক।

সূত্র: বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন