১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশাল জেলা পরিষদে অসন্তোস, চেয়ারম্যান তোপের মুখে

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:৫৮ অপরাহ্ণ, ১৩ নভেম্বর ২০১৯

শাকিব বিপ্লব, বরিশাল:: বরিশাল জেলা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে পুনরায় অসন্তোস দেখা দিয়েছে। পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনাস্থা দেওয়া নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মাঝে ১৬ সদস্য এবার আইনে আশ্রয় নিয়েছেন। বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করে চেয়ারম্যানের ষড়যন্ত্রের আলামত তুলে ধরেছেন। এর আগে চেয়ারম্যান মইদুল ইসলাম ৪ সদস্যকে নিজের অনুকুলে ফিরে আসা এবং ১২ সদস্য’র স্বাক্ষর জাল করে অনাস্থা দেওয়ার পদক্ষেপকে ষড়যন্ত্র দাবি করে থানা পুলিশের দারস্থ হয়ে অনুরুপ সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। বর্তমানে গুটি কয়েক সদস্য’র সমর্থনে মইদুল ইসলাম পরিষদের অপরাপর সদস্যদের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে আছেন।

উল্লেখ- গত ৫ মাস যাবৎকাল জেলা পরিষদ ক্ষণে ক্ষণে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। আওয়ামী লীগ নেতা ও চেয়ারম্যান মইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অসদাচারণ, সেচ্ছাচারিতা ও দাপ্তরিক বিভিন্ন তথ্য প্রদানে অনিহার অভিযোগ তুলে অধিকাংশ সদস্য বিপক্ষে অবস্থান নেন। সর্ব প্রথম ৩০ জুন বিদ্রোহী সদস্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিলেন। এসময় চেয়ারম্যান জেলা পরিষদের নিজ কক্ষে অনেকটা অবরুদ্ধ ছিলেন। পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলন ডেকে সদস্যরা চেয়ারম্যানের সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ বিভিন্ন প্রকল্পের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরেন। সেক্ষেত্রে প্রকাশ পায় বাবুগঞ্জের মীরগঞ্জ খেয়াঘাটের ইজারা নিয়ে অনিময়, জেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রিত শহরের একাধিক মার্কেটের দোকান নিজের পছন্দসই ব্যক্তিদের গোপনে বরাদ্দ, ও বাথরুম ভেঙে দোকানঘর নির্মাণসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত প্রকল্পের তথ্যাদী গোপন করা। সদস্যদের এই অভিযোগ অস্বীকার করে একটি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মইদুল ইসলাম কঠোর অবস্থান নেন।

সূত্র জানায়- সেই থেকে চেয়ারম্যান ও সংক্ষুব্ধ সদস্যদের মুখোমুখি দেখা সাক্ষাত বন্ধ হয়ে যায়। দলীয় অনুষ্ঠানসমূহ ও দাপ্তরিক কর্মসূচি আলাদা আলাদা পালন করতে দেখা গেছে। গত অক্টোবর মাসে এই অসন্তোস তীব্র আকার ধারন করে। ২৮ অক্টোবর ১৬ সদস্য একজোট হয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা দেন। এরপর চেয়ারম্যান পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ১৬ সদস্যের মধ্যে চারজনকে নিজের অনুকুলে ফিরে এসেছে দাবি করে অপর ১২ সদস্যের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অনাস্থাকে ষড়যন্ত্রমুলক পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করে থানা পুলিশের আশ্রয় নেন। কিন্তু ১২ সদস্য চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর আখ্যা দিয়ে তারাও পাল্টা আইনের আশ্রয় নেন। মঙ্গলবার ওই ১২ সদস্য মইদুলের বক্তব্য এবং পদক্ষেপে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে এই মর্মে নিজেদের নিরাপত্তায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পাল্টাপাল্টি এই আইনী আশ্রয়ের ফলে মুলত জেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ল।

জানা গেছে- অনাস্থা দেওয়ার পর তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় চেয়ারম্যানকে অপসারণে ইখতিয়ার রাখে। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় মনে করলে অনাস্থার ক্ষেত্রে সদস্যদের ভোটাভুটির মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্টদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক চেয়ারম্যানের ক্ষমতা থাকা না থাকার বিষয়টি প্রাধান্য পায়। বিদ্রোহী সদস্যদের অভিযোগ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ ধরনের কোন পদক্ষেপ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নিতে পারছে না অথবা তারা এই বিষয়ে অবহিত নয়। অধিকাংশ সদস্যদের অভিন্ন মত জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা পরিষদের চেয়ারম্যানের মইদুল ইসলামের পক্ষে অবস্থান নিয়ে অনেক বিষয় গোপন করে রাখছেন। কোন কোন কোন ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের অনিয়মের সহায়তা করছেন। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মানিক হার রহমান এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।

জেলা পরিষদের একটি সূত্র জানায়- আওয়ামী লীগ ঘরনার চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মধ্যে এই বিবেদ বৃহৎ ধারন করলেও জেলা সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দও অজ্ঞাত কারণে নিশ্চুপ। ফলে পরিস্থিতি দিনাত্তোর বিষ্ফোরণমুখ হচ্ছে।

জেলা পরিষদের সদস্য মুনাওয়ারুল ইসলাম অলি এই ধরনের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন- তাদের দাবি ন্যায় সঙ্গত। নিময়তান্ত্রিকভাবেই তারা চেয়ারম্যানের অপসারণ চান। চেয়ার রক্ষায় চেয়ারম্যান আইনের আশ্রয় নিয়ে কৌশল আঠছে।

চেয়ারম্যান মইদুল ইসলাম বলেন- তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। ১২ সদস্যের স্বাক্ষর জাল করে অনাস্থা দেওয়ার নামে কয়েকজন একটি নাটকীয় ঘটনা অবতারণা ঘটিয়েছে। প্রমাণস্বরুপ তিনি বলেন- স্বাক্ষর স্ক্যান করে ফটোকপি জমা দেওয়া হয়। অফিস আদালতের ক্ষেত্রে এই ধরণের কাজগপত্র গ্রহণযোগ্য নয়।

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন