২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বরিশাল ঢাকা নৌপথে বালুবাহী কার্গো আতঙ্ক!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:০০ অপরাহ্ণ, ৩০ মে ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: মুসলিম ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নদীপথে ফেরা মানুষকে নিরাপদ রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। বিশেষ করে সড়ক বা আকাশ পথের চেয়েও অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এ রুটটিতে। এবারের ঈদকে কেন্দ্র করে অন্তত অর্ধকোটি মানুষের নদীপথে আসার খবরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আগেভাগেই তৎপরতা বাড়িয়েছে।

কিন্তু বিষ্ময়কর বিষয় হচ্ছে- প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়ার পরেও রাতের বেলা বালুবাহী কার্গো বন্ধ করা যাচ্ছে। ফলে এই রুটটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অবশ্য এনিয়ে যাত্রী সাধারণের মাঝে আতঙ্কও বিরাজ করছে। সম্প্রতি বরিশালের হিজলা উপজেলা লাগোয়া মেঘনা নদীতে যাত্রীবোঝাই ঢাকাগামী লঞ্চের সাথে একটি বালুবাহী কার্গোর সংঘর্ষের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বরিশাল অফিসের কর্মকর্তা বলছেন আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। রুটটিকে নিরাপদ করে তুলতে তাদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সূত্রে জানা গেছে- আগামী ৩০ মে থেকে সরকারি ও বেসকারি নৌযান প্রতিষ্ঠানগুলো এ রুটে ঈদ স্পেশাল সার্ভিস শুরু করতে যাচ্ছে। অর্ধশত নৌযান প্রতিদিন দুইবার করে যাত্রী পরিবহন করবে। এই সার্ভিস পরবর্তী মানুষের ঘরমুখো ফেরা নিশ্চিত করতে নৌবন্দরটিও প্রস্তুত করেছে বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু নদীপথে নদীপথে বালুবাহী কার্গো ঘোষণা দিয়ে দিয়েও কার্যকর করতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেছে মালিক শ্রমিকেরা। বিশেষ করে এই ঘটনাটিকে ব্যর্থতা উল্লেখ করে কেউ কেউ ক্ষোভও করেছে।

লঞ্চ মালিক ও শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ হচ্ছে- প্রতিবারই ঈদের আগে প্রশাসনের কাছ জোরালোভাবে বালুবাহী কার্গো চলাচল বন্ধে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দিলেও পরবর্তীতে বাস্তবায়ন নেই। এবারেও ঈদের ১৫ দিন আগ থেকে পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত এই পরিবহনটির চলাচল বন্ধ রাখতে আবেদন করা হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঈদের সাত দিন আগে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

কিন্তু এরই মধ্যে গত ২৪ মে মেঘনা নদীতে বরিশাল থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে এমভি যুবরাজ-৭ লঞ্চটিকে ধাক্কা দিলে একটি বালুবাহী কার্গো ডুবে যায়। এর আগে ২১ মে রাতে ঢাকা থেকে লালমোহনের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া এমভি গ্লোরি অব শ্রীনগর-২ লঞ্চটির সঙ্গে বালুবাহী বাল্কহেডের সংঘর্ষ হয়। এই দুটি দুর্ঘটনায় কোন যাত্রী হতাহত না হলেও ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সকলের মাঝেই আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাছাড়া ডুবে যাওয়া কার্গোটি উদ্ধারে কোন ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় সেখান দিয়ে নৌযান চলাচলে ঝুঁকি রয়েছে।

এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির মালিক সাইদুর রহমান রিন্টু বরিশালটাইমসকে বলছেন, বরিশাল ঢাকা নৌপথের বিভিন্ন এলাকায় রাতের বেলা অবৈধভাবে বালু তুলে কার্গোতে নেওয়া হচ্ছে। এই কার্গোগুলো রাতে বেলা চলাচলের কারণে রুটটি পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে যাত্রী পরিবহনকারী নৌযানগুলো চাঁদপুরের মেঘনা নদী অতিক্রমকালে আতঙ্কিত থাকতে হচ্ছে। কারণ সেখানে রাতে বেলা অসংখ্য বালুবাহী কার্গো চলাচল করছে।

এই বিষয়টি রাজধানীতে প্রশাসনের সাথে একাধিক বৈঠকে অবহিত করার পাশাপাশি কার্গো রাতে চলাচল বন্ধে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু প্রশাসন শুধুমাত্র নিষেধাজ্ঞা জারিতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। ঈদের বাকি মাত্র সাত দিন থাকলেও তাদের পক্ষ থেকে কার্যত কোন পদক্ষেপ লক্ষ্যণীয় নয়। এছাড়া মেঘনা নদীতে লঞ্চে সাথে ধাক্কায় ডুবে যাওয়া কার্গোটি উদ্ধার না হওয়ায় ঝুঁকি বেড়েছে।

এমভি কীর্তনখোলা লঞ্চের মালিক মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস জানিয়েছেন- ঈদ স্পেশাল সার্ভিস শুরুর আগে রাতে কার্গো চলাচল পুরোপুরি বন্ধ না করা গেলে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে থাকতে হবে। সুতরাং যাত্রীসেবার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত কার্গোগুলো অবাধ চলাচল বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

অবশ্য এই ঝুঁকির বিষয়টি বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের বন্দর কর্মকর্তা উপ-পরিচালক নদীবন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা সরকারও স্বীকার করে সময়ের আলোকে বলছেন- ঈদ উপলক্ষে যাত্রীরা যাতে নিরাপদে ফিরতে পারে এই জন্য কাজ করছেন। বিশেষ করে তারাও চাইছেন রাতের বেলা কার্গো চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে। কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে নদীপথের অনেক স্থান থেকে তার পরেও কার্গোতে বালু তোলা হচ্ছে।

অবশ্য এই খবরটি পাওয়ার পরে তাদের সরাতে বিআইডব্লিউটিএ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সমন্বিতভাবে নেমেছে বলে জানান তিনি।’

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন