১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বরিশাল নগরীর সকল সিসি ক্যামেরা অচল, বাড়ছে অপরাধ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:৫১ পূর্বাহ্ণ, ০৩ এপ্রিল ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক:: বরিশাল নগরীর ত্রিশটি ওয়ার্ডবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপিত ২৬১ টি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার সবগুলোই অচল হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্যামেরাগুলো বিকল থাকার কারণে নগরীতে দিনে-দুপুরে অপরাধে মাত্রা বাড়ছে। এমনকি অপরাধী চক্রও ক্রাইম সংঘটিত করে অনেকটা নিরাপদে পালিয়ে যাচ্ছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধ রোধ বা অপরাধীদের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না। তা ছাড়া পরবর্তীতে পুলিশ প্রশাসন অনুসন্ধানে নেমেও অপরাধীদের শনাক্তে হিমসীম খাচ্ছে।

সর্বশেষ গত সোমবার বরিশাল নগরীর জেলেবাড়ির পোল নামক এলাকায় একটি প্লাস্টিক কারখানার ম্যানেজারকে প্রকাশ্যে মারধর করে ৮ লাখ টাকা ছিনতাই ঘটনার পরে সিসি ক্যামেরা বিকল থাকার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

সংশ্লিষ্ট কাউনিয়া পুলিশ জানিয়েছে, ছিনতাই স্পটের আশেপাশে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের স্থাপিত বেশ কয়েকটি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। কিন্তু সবগুলো ক্যামেরাই অচল হওয়ার কারণে ছিনতাইয়ের কোন দৃশ্য ধারণ হয়নি। ফলে প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিক্টিমের বর্ণনা অনুসারে অপরাধীদের শনাক্ত করার প্রচেষ্টা চলছে।

এই ছিনতাইয়ের ঘটনার পরে নগরবাসী দ্রুত সিসি ক্যামেরা সচল করতে সিটি কর্পোরেশনের কাছে দাবি রেখেছে।

এক্ষেত্রে অনেকের ভাষ্য হচ্ছে- দ্রুত সিসি ক্যামেরা সচল না করা গেলে অপরাধের মাত্রা দিনেদিন আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে নগরবাসীর মধ্যে বাড়বে আতঙ্ক।

সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নগরবাসীর নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনা ঘিরে সিসি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। যার অংশ হিসেবে শহরের ৩০টি ওয়ার্ডে ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৬১টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছিল।
পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল তৎকালীন মেয়র আহসান হাবিব কামাল আনুষ্ঠানিকভাবে এসব ক্যামেরা উদ্বোধন করেন। এমনকি ওই সময় এসব ক্যামেরা তদারকির জন্য ৮টি নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র স্থাপনের কাজ করেছিল বিসিসি।

কিন্তু উদ্বোধনের পর দুই মাসের মাথায় এসব ক্যামেরার প্রায় ৮০ ভাগ সংযোগ তার (অপটিক্যাল ফাইবার কেবল) চুরি হয়ে যায়। আবার বেশ কিছু ক্যামেরায় কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে এসব ক্যামেরাগুলো সম্পূর্ণরুপে অচল হয়ে পড়ে। তখন বিষয়টি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ পেলে দ্রুত ক্যামেরাগুলো সচল করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় পরবর্তীতে বিসিসি কোন উদ্যোগ নেয়নি। যে কারণে বিকল হয়েই পড়েছিল সিসি ক্যামেরাগুলো।

এক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের ভাষ্য হচ্ছে- বরিশাল শহর এখনও পুরোপুরি রুপে সন্ত্রাস বা অপরাধী মুক্ত বলা যাচ্ছে না। তা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নগরবাসীকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে পারছে না। ফলে দিনে-দুপুরে ছিনতাইসহ নানা অপরাধের মাত্রা ক্রমশই বাড়ছে। পরবর্তীতে এসব অপরাধ তদন্তে গিয়েও পুলিশ বা অন্য কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ক‚লকিনারা করতে পারছে না। কিন্তু সিসি ক্যামেরাগুলো সচল থাকলে অপরাধ চিত্র বা অপরাধী শনাক্ত সময়ের ব্যাপার ছিল। তা ছাড়া ক্যামেরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ধরা পড়ার ভয়ে প্রকাশ্যে অপরাধের মাত্রা অনেকটা হ্রাস পেত। সুতরাং কালবিলম্ব না করে শহরের সিসি ক্যামেরাগুলো দ্রুত সচল করার দাবি রেখেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজল ষোঘ।

অবশ্য বরিশাল সিটি কর্পোরেনের প্রকৌশল বিভাগও নগরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে সিসি ক্যামেরা স্থাপন জরুরি বলে মনে করছেন। কিন্তু বরাদ্দ না পাওয়ার আগে অচল সিসি ক্যামেরা সচল করা সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়েছে দেওয়া হয়েছে।’

সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিও) খাইরুল আলম বলছেন, তিনি যোগদানের অনেক আগে ক্যামেরাগুলো বসানো হওয়ায় বিষয়টি সম্পর্কে মোটেও অবগত নন। তবে যতটুকু জেনেছেন সকল অপটিক্যাল ফাইবার কেবল চুরি হওয়ার কারণে ক্যামেরাগুলো অচল রয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে মেয়র সেরনিয়বাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র সাথে সমন্বয় হয়েছে। পরবর্তীতে বরাদ্দ পেলে অচল ক্যামেরা সচলে উদ্যোগ নেওয়া হবে জানান তিনি।’

9 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন