২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশাল নগরীর সড়কে ১৫০ বৈদ্যুতিক খুঁটি, ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:৫৫ অপরাহ্ণ, ২১ মার্চ ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল নগরীর বিভিন্ন সড়কের ওপরেও বৈদ্যুতিক খুঁটির অস্তিস্ব খুঁজে পাওয়া গেছে। শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের একাধিক স্থানেও রয়েছে এ খুঁটি। বিশেষ করে এই খুঁটির কারণে সড়কে যানবাহন চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তাছাড়া সড়কের একই স্থানে একাধিক খুঁটি থাকায় চলাচলেও ঝুঁকি থাকছে। বিষয়টি নিয়ে যানবাহন মালিকদের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও বিগতদিনে তা প্রকাশ পায়নি। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাসে এক রিটে আবেদন পরবর্তী খুঁটি সরিয়ে নিতে উচ্চ আদালতের আদেশের কারণে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। ফলে এখন যানবাহন মালিক ও শ্রমিকদের পক্ষ থেকেও দ্রুত সড়কের ওপরের বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণে পদক্ষেপ নিতে দাবি রাখা হচ্ছে।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, উচ্চ আদালতের আদেশের বিষয়টি জানে না বরিশাল বিদ্যুৎ বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশনসহ সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো। এমনকি আদালতের আদেশের কোন নথিপত্রও সংশ্লিষ্ট দপ্তারগুলো আসেনি বলে দাবি করা হচ্ছে। যে কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক থেকেও খুঁটি অপসারণে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না।

বরিশাল শহরের একাধিক যানবাহন মালিকের সাথে আলোচনায় জানা গেছে, সড়কের ওপর বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় যানবাহন চলাচলে ভোগান্তির পাশাপাশি ঝুঁকিও রয়েছে। কারণ বর্ষা মৌসুমে ঝড়ো-হাওয়া বা বৃষ্টিপাত হলে কখনও কখনও বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে নিচে পড়ছে। এতে প্রাণহানিও ঘটছে। ফলে প্রতিনিয়িত আতঙ্কের মধ্যে থেকে যানবাহনে যাত্রী পরিবহন করতে হচ্ছে।

এমতাবস্থায় বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণে প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত পদক্ষেপ রাখতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে শহরের সদর রোডসহ জনগুরুত্বপূর্ণ ৪০টি রোডের ওপর ওয়েস্টান পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন (ওজোপাডিকো) কোম্পানির ১৫০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি শনাক্ত করেছে। এর বাইরে সিটি কর্পোরেশনের বর্ধিক এলাকা অর্থাৎ ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সড়কের ওপর রয়েছে পল্লী বিদ্যুতের ৩০টি খুঁটি। সাম্প্রতিকালে বিসিসির বিদ্যুৎ বিভাগ অনুসন্ধান চালিয়ে এসব খুঁটি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে।

সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিও) খাইরুল ইসলাম সময়ের আলোকে জানিয়েছেন, বৈদ্যুতিক খুঁটির স্থানসমূহ তুলে ধরে তা অপসারণে ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুতকে দুই দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ খুঁটি অপসারণে কোন পদক্ষেপ রাখেনি বা চিঠিরও উত্তর দেয়নি। সবশেষে গত সপ্তাহে বিদ্যুৎ বিভাগের একজন সহকারি প্রকৌশলীকে তাদের অফিসে পাঠিয়ে খুঁটি অপসারণে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তখন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা সড়কের বৈদ্যুতিক খুঁটি দ্রুত সরিয়ে নেওয়া আশ্বাস দিয়েছেন।

বরিশাল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের (ওজোপাডিকো ১) নির্বাহী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বলেন, সড়ক থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটি সরিয়ে নিতে আদালতের দেওয়া আদেশ হাতে পাননি। তবে সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগ তাদের চিঠি দেওয়ায় বিষয়টি কেন্দ্রীয় অফিসকে অবহিত করেছেন। সেখান থেকে নির্দেশনা পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

অনুরুপ প্রসঙ্গে পল্লী বিদ্যুতের বরিশাল আঞ্চলিক অফিসের ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার শঙ্কর কুমার কর জানিয়েছেন, আদালতের আদেশের বিষয়ে কোন কাগজপত্র না পেলেও পত্রিকার মাধ্যমে খবরটি পেয়েছেন। তাছাড়া সড়কের ওপর থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটি সরিয়ে নিতে সিটি কর্পোরেশনের প্রেরিত একটি চিঠিও এসেছে। যে বিষয়টি ইতিমধ্যে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। মূলত সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসা মাত্রই আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য গত ১৪ ফেব্রু য়ারি আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন জনস্বার্থে সড়কের বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ চেয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের সচিব, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

এমনকি এ আদেশ ২ মাসের মধ্যে বাস্তবায়নে বিবাদীদের সহযোগিতা করতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।’

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন