২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশাল পুলিশে মাদকাসক্ত সদস্যদের চিহ্নিত করতে উদ্যোগ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:৩৪ অপরাহ্ণ, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ সদস্যদের মাদকমুক্ত রাখতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাদকে আসক্ত সন্দেহের তালিকায় থাকা পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্টের মাধ্যমে তাদের স্বচ্ছতা। মাস দুয়েক যাবত চলমান এই পরীক্ষায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য মাদক গ্রহণে অভ্যস্তের প্রমাণ মিলিছে। তাদের আনা হয়েছে শাস্তির আওতায়। আবার অনেকে একাধিকবার ডোপ টেস্ট্রের মুখোমুখি হওয়ায় নিজে ও তার পরিবার বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছে।

দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন- বিতর্ক এবং স্বচ্ছতা পুনরুদ্ধারে নয়া পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান নিজেই এই উদ্যোগ নেন। সাম্প্রতিকালে বরিশালে মাদকসহ বেশ কয়েকজন মেট্রোপলিটন ও জেলা পুলিশের সদস্য আটক হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইমেজ সংকট দেখা দেয়। প্রশাসন যেখানে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স অবস্থান নিয়েছে, সেখানে তাদেরই সদস্যরা মাদকের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টি একেবারে বেমানান।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়- পরিস্থিতির আলোকে পুলিশ কমিশনার ডোপ টেস্টের উদ্যোগ গ্রহণপূর্বক পুলিশ হেডকোয়াটার্সকে বিষয়টি অবহিত করেন। প্রাথমিক ভাবে কারা মাদক গ্রহণ করতে পারে সম্ভাব্য এ ধরনের পুলিশ সদস্যদের গোপনে চিহ্নিত করে একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়। পুলিশ কমিশনার কার্যালয় বিশেষ ব্যবস্থায় সন্দিগ্ধ পুলিশ সদস্যদের ধারাবাহিক এ পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান ডোপ টেস্টের চালুর কথা নিশ্চিত করলেও হেডকোয়াটার্সের অনুমতি নেওয়ার বিষয়টির সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি জানান, পুলিশ বাহিনীতে স্বচ্ছতা ধরে রাখতে ইতিবাচক যেকোন উদ্যোগ স্থানীয়ভাবে নেওয়া যেতে পারে। তারই আলোকে ডোপ টেস্ট চালু করে পুলিশ সদস্যদের এক ধরনের সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে।

এ পর্যন্ত কতজন পুলিশ সদস্য ডোপ টেস্টে মাদকাসক্ত হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে তার সংখ্যা কত এমন প্রশ্নে শীর্ষ এই পুলিশ কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারেনি। তিনি স্বীকার করেছেন বেশ কয়েকজন মাদকাসক্ত হিসেবে প্রমাণিত হওয়ার তাদের নজরদারির মাঝে রাখা হয়েছে।

পুলিশের অসমর্থিত সূত্র জানায়- এ পর্যন্তত ১২ জনকে মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টার প্রমাণ মিলিছে। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও সেই পদক্ষেপের ধরণ কী প্রশাসনিক গোপনীয়তা রক্ষায় তার ব্যাখ্যা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

ওই সূত্রটির ভাষ্যমতে- প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন পুলিশ সদস্যকে ডোপ টেস্টের প্রমাণ দিতে হচ্ছে। আবার কোন কোন পুলিশ সদস্য একবার নয়, একাধিকবার টেস্টের মুখোমুখি হয়েছে। সেখানেই বিপত্তি। পুলিশ সদস্যদের আপত্তি বারবার টেস্টের মুখোমুখি হওয়ার পরিবার পরিজনের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হচ্ছে মাদকাসক্ত প্রসঙ্গে। বিব্রতকর এই পরিস্থিতিতে তারা মুখ খুলতেও পারছেন না স্বচ্ছতার নিরিকে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় রাখতে। পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে স্বল্প পরিসরের ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা থাকলেও পূর্ণাঙ্গভাবে পরীক্ষার জন্য বাইরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। সেই রিপোর্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জমা দিতে হয়।

অপর একটি সূত্র বলছে- দাখিল করা রিপোর্ট সন্তোসজনক না হলেই পুনরায় তাদেরকে ডোপ টেস্টের মুখোমুখি হতে হয়। আবার সন্দেহের তালিকায় থাকা পুলিশ সদস্যদের একাধিকবার ডোপ টেস্ট করে রিপোর্ট নিশ্চিতের পরেই পরিত্রাণ মেলে। এনিয়ে পুলিশ প্রশাসনে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও অনেকেই স্বচ্ছ থাকতে স্বউদ্যোগেই ডোপ টেস্টে আগ্রহী হচ্ছেন।

একজনের একাধিকবার ডোপ টেস্ট প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার বলেন- স্বচ্ছতার তাগিদে এমনটি করা বেমানান কোথায়। প্রয়োজন থাকলে পর্যায়ক্রমে সবাইকেই এই পরীক্ষার আওতায় আনা হলেও বিতর্কের কিছু নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে- অত্যান্ত কঠোর মানসিকতার অধিকারী পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বরিশালে যোগদানের পরেই মেট্রোপলিটন পুলিশের চেহারা পাল্টে যায়। ফিরে আসে চেইন অব কমান্ড। এরই মাঝে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মাদকাসক্তের অভিযোগ উঠলে তিনি এই ডোপ টেস্ট চালু করেন। যার ইতিবাচক ফল হিসেবে মাদকের সাথে জড়িত অনেক পুলিশ সদস্য চাকরি বাঁচানোর স্বার্থে নেশা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। এমন অভিমত মাঠ পুলিশের ভেতর থেকেই পাওয়া গেছে।’

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন