২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

বরিশাল শেখ রাসেল পুনর্বাসন কেন্দ্রের অর্থ লুটেপুটে খাওয়ার অভিযোগ!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:০১ অপরাহ্ণ, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

হুমায়ুন কবির রোকন:: বরিশালে যোগদানের পর থেকই অসহায় শিশুদের খাবার ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সরকারি ভাবে বরাদ্দ অর্থ ব্যয় না করে লুটেপুটে খাচ্ছে রুপাতলী এলাকার শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনকেন্দ্রের উপ প্রকল্প পরিচালক বাসু দেবনাথ। অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতায়ও তিনি ‘অপ্রতিদ্বন্দ্বী’। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দুর্নীতিবাজ ওই কর্মকর্তার কারণে ভেস্তে যাচ্ছে অসহায় শিশুদের পুনর্বাসনের মতো সরকারের একটি ব্যতিক্রমী ও মহৎ উদ্যোগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পথশিশু, ছিন্নমূল, হারিয়ে যাওয়া, স্নেহবঞ্চিত, নির্যাতিতসহ সব ধরনের অসহায় শিশুর বিকাশ ও কর্মমুখী প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে তাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় পরিচালিত প্রকল্প অনুসারে ২০১২ সালে রূপাতলী মাওলানা ভাসানী সড়কে স্থাপন করা হয় শেখ রাসেল শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রের বালক শাখা। তার ঠিক দুইবছর পর ২০১৪ সালে স্থাপন করা হয় ওই কেন্দ্রের বালিকা শাখা। বালক শাখায় ৭২ জন ও বালিকা শাখায় ৮২ জন। এসব শিশুকে দেখভালের জন্য ১৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী শিশুদের শারীরিক ও মানসিক সুষ্ঠু বিকাশের লক্ষ্যে মাসের ৩০ দিনের জন্য আলাদা খাদ্যতালিকা রয়েছে। তা নিশ্চিত করার জন্য রয়েছে যথাযথ বরাদ্দও। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী তালিকাভুক্ত সেসব খাবার না দিয়ে সংশ্লিষ্ট খাদ্য সরবরাহকারীর (ঠিকাদার) সঙ্গে যোগসাজশে স্বল্প দামের অন্যান্য খাদ্য সরবরাহ করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এদিকে শুধু শিশুদের খাদ্য চুরি করেই প্রতি মাসে এক লাখ টাকার বেশি হাতিয়ে নেন ওই কেন্দ্রের উপপরিচালক বাসুদেব দেবনাথ। এরপর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা, পোশাক, বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য খরচের খাত তো রয়েছেই। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাঁচাবাজারসহ যেসব খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করে থাকেন, তা প্রতিদিন স্বাক্ষর করে বুঝে নেন একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। অথচ মাসের শেষে উন্নত খাবার সরবরাহ দেখিয়ে খরচের পরিমাণ বাড়িয়ে তা মূল রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করা হয়।

ভুক্তভোগী একাধিক শিশুর সঙ্গে (নাম প্রকাশ করা হলো না) কথা বলে জানা গেছে, খাদ্যতালিকায় থাকা ইলিশ, রুই, কাতল ইত্যাদির বদলে বেশির ভাগ সময়ই দেওয়া হয় কম দামি পাঙ্গাশ মাছ। গরু ও খাসির মাংসের বদলে প্রায়ই খাওয়ানো হয় ব্রয়লার মুরগি। অথচ এসব শিশুদের জন্য মাথাপিছু ৪৫০ গ্রাম চাল বরাদ্দ রয়েছে। মৌসুমি ফল আপেল, কমলা, আঙুর বরাদ্দ থাকলেও তা কখনো খাওয়ানো হয় না। পাঙ্গাস আর তেলাপিয়া মাছ খেতে খেতে শিশুরা আর মাছ খেতে চায় না । সকালে বাসী ভাত দিয়ে তৈরি খিচরি খাওয়ানো হচ্ছে শিশুদের । মৌসুমি ফলের কথা উল্লেখ থাকলেও এ ফল খেতে পারছেনা ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে,প্রতি মাসেই খাদ্য সরবরাহের ভাউচারের চেয়ে মূল রেজিস্টারে প্রায় এক লাখ টাকা বেশি খরচ দেখানো হয়েছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের অধীনে প্রশিক্ষণের জন্য প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ বরাদ্দ রয়েছে। প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দের টাকাও বাসুদেব দেবনাথ আত্মসাৎ করেন বিভিন্ন প্রশিক্ষণ উপকরণের বিল-ভাউচার দেখিয়ে। শুধু খাদ্য চুরি আর অর্থ আত্মসাৎই নয়, উপপরিচালক বাসুদেব দেবনাথের বিরুদ্ধে অনৈতিকতা আর স্বেচ্ছাচারিতারও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

বাসুদেবের এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে কর্মকর্তাই কথা বলেন, তাঁকেই বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। ষড়যন্ত্র চলে চাকরি থেকে ছাঁটাইয়েরও। অন্যদিকে তাঁর সহযোগীদের জন্য রয়েছে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা। অফিস না করেও তাঁরা নিয়মিত বেতন পান। ছুটির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা ভোগ করেন তাঁরা। ডিকেপি সড়কের বালক কেন্দ্রের সদ্য চাকরিচ্যুত গার্ড সিরাজুল ইসলাম জানান, বিনা দোষে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া উপ প্রকল্প পরিচালক বাসুদেব দেবনাথের কু-প্রস্তাবের কারণে চাকুরি ছেড়ে চলে গেছেন আউট সোসিং নারী শ্রমিক রেখা ও রোজিনা । বয়স্ক আউটসোসিং মহিলা মিনারা বেগমকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দে আবার তাকে চাকুরী থেকে বাদ দেয় । ওদিকে মেয়ে ও ছেলে শিশু বিভিন্ন সময়ে বাসু দেবনাথের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সম্প্রতি সানজিদা ও সিয়াম নামের দুই শিশুকে নিজ হাতে বেধম প্রহর করেন । এবং গত বছরের ১৪ অক্টোবর সন্ব্যায় শিশু শাহাদাত , ফাহিম ও সোহেলকে শারীরিক নির্যাতন করে বাসু। ফলে ঐ শিশুদের জ্বর হয়ে অনেকদিন বিছানায় থাকতে হয়েছে।তা ছাড়া দুর্নীতি-অনিয়মে বাসুদেবের সহযোগীরা সব ক্ষেত্রেই বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন। রুপাতলির শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনকেন্দ্রের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী উপপরিচালক বাসুদেবের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে অনেক তথ্য-প্রমাণ দিলেও কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তবে যৌন নিপিড়ন, দুর্নীতি,অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয় উল্লেখ করে সমাজসেবা অধিদপ্তর মহাপরিচালক সমাজ সেবা অধিদপ্তর ঢাকা, পরিচালক বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়,ও উপ পরিচালক জেলা সমাজ সেবা কার্যালয় বরিশাল বরাবরে গত ১৭ ফেব্রয়ারি বরিশাল ডাক বিভাগের মাধ্যমে অনুলিপি দিয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

অনুলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে বরাদ্দকৃত স্থাপনা সংস্কার বাবদ ১ লাখ টাকা আতœসাৎ করে বাসু দেবনাথ। এছাড়া একই বছরে কোয়াটারে উৎসব ভাতা, ভ্রমন বিল, গ্যাস ও জ্বালানী, স্টাপ, সিল,ক্রিয়া সামগ্রী, আপ্যায়ন বিল, মোটরযান সংস্কার, কম্পিউটার ক্রয় সংক্রান্ত বিল দাখিল পূর্বক ব্যয় না করে টাকা আত্মসাত করেন উপ প্রকল্প পরিচালক।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত উপ প্রকল্প পরিচালক বাসুদেব দেবনাথ বলেন, ‘খাবার নিয়ে যেসব অনিয়মের কথা বলা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। যথাযথ নিয়মেই এখানে খাবার পরিবেশন করা হয়। অনিয়ম, অনৈতিকতা আর স্বেচ্ছাচারিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি চক্র তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করার অসৎ উদ্দেশ্যে এসব অপপ্রচার করে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে সমাজসেবার বিভাগীয় পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত ) শাহ পার পারভিন বলেন, অনুলিপির একটি কপি পেয়েছেন তিনি । এ বিষয়ে একটি কমিটি করে প্রাথমিক তদন্ত করা হবে। ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন