২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশাল সরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এখন টাইলসের গুদাম

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:০০ অপরাহ্ণ, ১৪ এপ্রিল ২০১৯

বিশেষ প্রতিবেদক:: ব্যবসায়ীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে ১৯৯১ সালে কীর্তনখোলার তীর ঘেঁষে ১ দশমিক ২৩ একর জমির ওপর পূর্ণাঙ্গ মত্স্য অবতরণ কেন্দ্র চালু করে সরকার। সবশেষ ২০০৯ সালের জুলাইয়ে এ কেন্দ্র থেকে মাছ কেনাবেচা হয়েছিল। তারপর থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত অব্যবহূত থাকে কেন্দ্রটি। ওই বছরের এপ্রিল থেকে সরকারি মত্স্য অবতরণ কেন্দ্রটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে টাইলস ও স্যানিটারির বিভিন্ন পণ্যের গুদাম হিসেবে। ফলে প্রত্যেক বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

অভিযোগ রয়েছে, ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহূত পড়ে আছে মত্স্য অবতরণ কেন্দ্রটি। সিন্ডিকেটের কারণেই ব্যবসায়ীরা নগরীর পোর্ট রোডের পাইকারি মত্স্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছ বেচাকেনা করেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নগরীর ব্যবসায়ী নেতারা। তাদের দাবি, সরকারি মত্স্য অবতরণ কেন্দ্রে পর্যাপ্ত স্থান না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে পোর্ট রোডের পাইকারি মত্স্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছ বেচাকেনা করেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে- ১৯৮৫ সালে কীর্তনখোলা নদীর তীর ঘেঁষে ১ দশমিক ২৩ একর জমির ওপর সরকারি মত্স্য অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয় মত্স্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)। ১৬টি ঘর ও ৩১টি শেড সংবলিত বরিশাল মত্স্য অবতরণ কেন্দ্র পূর্ণাঙ্গ রূপ নেয় ১৯৯১ সালে। বর্তমানে এ অবতরণ কেন্দ্রে অফিস সহকারী, সহকারী হিসাব রক্ষকসহ চারজন কর্মরত আছেন। তাদের বেতন বাবদ প্রতি মাসে ৯১ হাজার টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে গুদাম ভাড়ার টাকা থেকে।

বরিশাল মত্স্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অজিত কুমার দাস বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই ব্যবসায়ীরা নগরীর পোর্ট রোডের পাইকারি মত্স্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছ কেনাবেচা করতেন। ওই কেন্দ্রের আয়তন তিন একর। সরকারি মত্স্য অবতরণ কেন্দ্রে মাত্র ৩২ জন ব্যবসায়ী বসতে পারেন। অথচ বরিশালে নিবন্ধিত মত্স্য ব্যবসায়ী ১৩১ জন। স্থান সংকুলান, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, ব্যাংক পরিষেবা, বরফকল, ওয়ার্কশপ না থাকায় সেখানে ব্যবসার পরিবেশ তৈরি হয়নি। এসব কারণে সরকারি মত্স্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে ব্যবসায়ীরা বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। এখানে শুধু ৩২ জন ব্যবসায়ী মাছ কেনাবেচা করলে বাকিদের পথে বসার উপক্রম হয়।

তিনি বলেন, প্রতি বছর প্রত্যেক আড়তের বিপরীতে ৭ হাজার টাকা করে ভাড়া দেয়া হয়। তার ওপর ইজারা বাবদ বছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা দিতে হচ্ছে ইজারাদারকে। সব ব্যবসায়ীর জন্য কক্ষ, শেড ও অন্যান্য সুবিধা দিয়ে মত্স্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ করলে ব্যবসায়ীরা সেখানেই বসবেন।

যদিও স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, এ অবতরণ কেন্দ্রটি চালুর পর থেকেই মাছ প্রক্রিয়াজাত ও ক্রয়-বিক্রয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রভাবশালী একটি পক্ষ। তাদের বাধার কারণেই দীর্ঘদিনেও দাঁড়াতে পারেনি সরকারি এ মত্স্য অবতরণ কেন্দ্রটি।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহূত থাকায় কেন্দ্রের মূল স্থাপনা, ডরমিটরি, অফিস, আড়ত, শেড, বরফকল, গভীর নলকূপ, হিমঘর, গাড়ি পার্কিং স্টেশনসহ অনেক স্থাপনা ও যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে সীমানা প্রাচীর না থাকায় অবৈধ দখলদাররা মত্স্য শেড ব্যবহার করছেন রিকশা ও ভ্যানের গ্যারেজ হিসেবে। সন্ধ্যার পরই বসে মাদকসেবীদের আড্ডা। দায়িত্বরতরা বাধা দিলে পড়েন তাদের রোষানলে। বরফকল গুদাম, নিলাম শেড বাদে কেন্দ্রের ১৬টি আড়তঘর সিয়াম ট্রেডিং নামে টাইলস ও স্যানিটারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দেয়া হয়েছে। প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ ওই প্রতিষ্ঠান ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দেয়। ওই টাকা দিয়েই স্টাফদের বেতন পরিশোধ করা হয়।

এ বিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়ার রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা যেখানে ভালো সুবিধা পাবেন সেখানে যাবেন। তাদের তো জোর করা যাবে না। তবে বিএফডিসি যদি ব্যবসায়ীদের সবরকম সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে পারে, সেক্ষেত্রে আলোচনাসাপেক্ষে তাদের সেখানে আনা সম্ভব।

বাংলাদেশ মত্স্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) দিলদার আহমদ জানান, বরিশাল মত্স্য অবতরণ কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করতে কয়েকবার জেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মত্স্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভা করেও সুফল মেলেনি। ব্যবসায়ীরা এ অবতরণ কেন্দ্রে আসার অঙ্গীকার করলে তা আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে।

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন